২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলেও শিখন শূন্যতা পূরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি সরকার
Published: 26th, February 2025 GMT
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলেও হঠাৎ করে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি। এরজন্য শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের এক নতুন মাত্রার ‘লার্নিং লস’ বা শিখন শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শিখন শূন্যতা পূরণেও সুনিদৃষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নতুন বছরের প্রায় দুই মাস চলে গেলেও শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশের হাতে এখনও বই পৌঁছায়নি। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষা আদৌ সরকারের অগ্রাধিকারে আছে কিনা?
মঙ্গলবার শিক্ষা অধিকার সংসদ আয়োজিত ‘ফ্রম লার্নিং লস টু লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট’ শিরোনামের ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে বক্তব্য দেন শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক ড.
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, সরকার পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে বটে কিন্তু শ্রেণিকক্ষে কী হচ্ছে, তা কি মনিটর করছে? মনে হচ্ছে, কেবল পরীক্ষা নেওয়াই তাদের মূল কাজ। পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার কারণে সময়ের অভাবে একদিনেই হয়তো এক অধ্যায় শেষ করতে হচ্ছে। এতে তাদের শিখন ঠিক হচ্ছে না। নতুন করে আবার রমজান ও এসএসসির কারণে বড় ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, এতেও শিখনশূন্যতা বাড়বে। ২০২৬ সালের জন্য সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের কথা বললেও এখনও সে কাজ শুরু করছে না কেন? সরকার অনেক কমিশন করেছে, কিন্তু শিক্ষা কমিশন করেনি। তারমানে কি সরকার শিক্ষার বিষয়ে সিরিয়াস নয়?
শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, ২০২৪ জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মৌলিক এবং দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারর নতুন সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের শিক্ষা খাত আজ বহুমুখী অস্থিরতায় আক্রন্ত। স্পষ্ট নির্দেশনা এবং প্রস্তুতি ছাড়া ২০১২ সালের পাঠ্যক্রমে ফিরে যাওয়াও নতুন শিক্ষা বর্ষে শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকরা- সকলেই নতুন অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে। বিগত শিক্ষা বর্ষে অপরিকল্পিত (অনাকাঙ্ক্ষিত) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, পাঠ্যপুস্তক বণ্টনে বিলম্ব ও বিষয়বস্তু পরিবর্তন এবং শিখন শূন্যতা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার অভাব বিদ্যমান শিখন সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে এই নতুন শিখন সংকট উত্তরণে কার্যকর শিক্ষক ও শিক্ষা বাবস্হাপনার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা এবং দৃঢ় নেতৃত্ব প্রত্যাশিত।
বাংলাদেশে শিক্ষা গবেষণায় যুক্ত ক্যাথোলিক ইউনিভার্সিটি লিউভেনের অধ্যাপক স্যান্ডি টুবেউফ তার বক্তব্যে বিগত বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা করণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধর ক্ষতিকারক বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নতুন মাত্রার শিখন শূন্যতা এবং ড্রপআউটের মাত্রা খতিয়ে দেখার বিষয়েও তিনি জোর দেন। তার পাশাপাশি আন্দোলন পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে শিক্ষকদের ওপর যে চাপ তৈরি হচ্ছে তাও যাচাই করতে শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।
ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালে বিগত সরকার যে শিক্ষাক্রম রচনা করেছে, তা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে অনেক দিক থেকেই যথার্থ হয়নি। যার ফলে চব্বিশের বিপ্লবের পর আমরা ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেছি। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ দিক নির্দেশনা পাইনি। শিক্ষার্থীরা যারা নতুন শিক্ষাক্রমে ছিলো, পুরনো শিক্ষাক্রমে যাওয়ার কারণে নতুন করে সৃজনশীল লেখাসহ অনেক বিষয়েও তারা হোঁচট খাচ্ছে।
বাংলার ম্যাথ-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা আহমেদ শাহরিয়ার বলেন, কোভিডের সময়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে শিখন শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার মূল্যায়ন কিংবা সেই শিখন শূন্যতা পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জুলাই বিপ্লবের কারণে পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন জরুরি ছিলো, কিন্তু এরপরও পাঠ্যপুস্তক পেতে যে দেরি হয়েছে, সেটি অগ্রহণযোগ্য।
রাজধানীর মনেস্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীন বলেন, পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলেও শিক্ষকরা যেহেতু আগে এই শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত ছিলো, সেজন্য সমস্যা হয়নি। শিক্ষা প্রশাসন থেকেও সিলেবাস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করবেন শিক্ষা অধিকার সংসদের অফিস কোঅর্ডিনেটর মো. মিনহাজুল আরেফিন। শিক্ষা অধিকার সংসদ এর সঙ্গে ওয়েবিনারের সহ-আয়োজক ছিল বাংলার ম্যাথ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ২০১২ স ল র ব যবস থ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নে হলো দেখা
কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে।
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়।
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v