প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলেও হঠাৎ করে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি। এরজন্য শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের এক নতুন মাত্রার ‘লার্নিং লস’ বা শিখন শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শিখন শূন্যতা পূরণেও সুনিদৃষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নতুন বছরের প্রায় দুই মাস চলে গেলেও শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশের হাতে এখনও বই পৌঁছায়নি। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষা আদৌ সরকারের অগ্রাধিকারে আছে কিনা?

মঙ্গলবার শিক্ষা অধিকার সংসদ আয়োজিত ‘ফ্রম লার্নিং লস টু লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট’ শিরোনামের ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে বক্তব্য দেন শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক ড.

এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ, বাংলার ম্যাথের সহ প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ শাহরিয়ার, বেলজিয়ামর ক্যাথোলিক ইউনিভার্সিটি লিউভেনের  অধ্যাপক স্যান্ডি টুবেউফ, ফ্রান্সের ইএইচইএসএস-এর রিসার্চ ডিরেক্টর অ্যালাইন ট্রনয়, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন ও রাজধানীর মনেস্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, সরকার পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে বটে কিন্তু শ্রেণিকক্ষে কী হচ্ছে, তা কি মনিটর করছে? মনে হচ্ছে, কেবল পরীক্ষা নেওয়াই তাদের মূল কাজ। পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার কারণে সময়ের অভাবে একদিনেই হয়তো এক অধ্যায় শেষ করতে হচ্ছে। এতে তাদের শিখন ঠিক হচ্ছে না। নতুন করে আবার রমজান ও এসএসসির কারণে বড় ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো, এতেও শিখনশূন্যতা বাড়বে। ২০২৬ সালের জন্য সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের কথা বললেও এখনও সে কাজ শুরু করছে না কেন? সরকার অনেক কমিশন করেছে, কিন্তু শিক্ষা কমিশন করেনি। তারমানে কি সরকার শিক্ষার বিষয়ে সিরিয়াস নয়?  

শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, ২০২৪ জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মৌলিক এবং দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারর নতুন সুযোগ তৈরি করেছিল। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী বাংলাদেশের শিক্ষা খাত আজ বহুমুখী অস্থিরতায় আক্রন্ত। স্পষ্ট নির্দেশনা এবং প্রস্তুতি  ছাড়া ২০১২ সালের পাঠ্যক্রমে ফিরে যাওয়াও নতুন শিক্ষা বর্ষে  শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকরা- সকলেই নতুন অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে পড়েছে। বিগত শিক্ষা বর্ষে অপরিকল্পিত (অনাকাঙ্ক্ষিত) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, পাঠ্যপুস্তক বণ্টনে বিলম্ব ও বিষয়বস্তু পরিবর্তন এবং শিখন শূন্যতা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার অভাব বিদ্যমান শিখন সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে এই নতুন শিখন সংকট উত্তরণে কার্যকর শিক্ষক ও শিক্ষা বাবস্হাপনার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা এবং দৃঢ় নেতৃত্ব প্রত্যাশিত।

বাংলাদেশে শিক্ষা গবেষণায় যুক্ত ক্যাথোলিক ইউনিভার্সিটি লিউভেনের অধ্যাপক স্যান্ডি টুবেউফ তার বক্তব্যে বিগত বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা করণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধর ক্ষতিকারক বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। নতুন মাত্রার শিখন শূন্যতা এবং ড্রপআউটের মাত্রা খতিয়ে দেখার বিষয়েও তিনি জোর দেন। তার পাশাপাশি আন্দোলন পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে শিক্ষকদের ওপর যে চাপ তৈরি হচ্ছে তাও যাচাই করতে শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করেন।

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালে বিগত সরকার যে শিক্ষাক্রম রচনা করেছে, তা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে অনেক দিক থেকেই যথার্থ হয়নি। যার ফলে চব্বিশের বিপ্লবের পর আমরা ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেছি। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ দিক নির্দেশনা পাইনি। শিক্ষার্থীরা যারা নতুন শিক্ষাক্রমে ছিলো, পুরনো শিক্ষাক্রমে যাওয়ার কারণে নতুন করে সৃজনশীল লেখাসহ অনেক বিষয়েও তারা হোঁচট খাচ্ছে।

বাংলার ম্যাথ-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা আহমেদ শাহরিয়ার বলেন, কোভিডের সময়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে শিখন শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার মূল্যায়ন কিংবা সেই শিখন শূন্যতা পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জুলাই বিপ্লবের কারণে পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন জরুরি ছিলো, কিন্তু এরপরও পাঠ্যপুস্তক পেতে যে দেরি হয়েছে, সেটি অগ্রহণযোগ্য।

রাজধানীর মনেস্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীন বলেন, পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলেও শিক্ষকরা যেহেতু আগে এই শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত ছিলো, সেজন্য সমস্যা হয়নি। শিক্ষা প্রশাসন থেকেও সিলেবাস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

ওয়েবিনার সঞ্চালনা করবেন শিক্ষা অধিকার সংসদের অফিস কোঅর্ডিনেটর মো. মিনহাজুল আরেফিন। শিক্ষা অধিকার সংসদ এর সঙ্গে ওয়েবিনারের সহ-আয়োজক ছিল বাংলার ম্যাথ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ২০১২ স ল র ব যবস থ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর

জাতীয় ক্রিকেট লিগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তিনদিনেই জয় পেয়েছে রাজশাহী বিভাগ। ৭ উইকেটে তারা হারিয়েছে খুলনা বিভাগকে। এদিকে সিলেটে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৯৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।

তার ব্যাটে ভর করে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে লড়ছে সিলেট। ঢাকার করা ৩১০ রানের জবাবে সিলেটের ৭ উইকেটে রান ২৬০। ৫০ রানে পিছিয়ে তারা। ১৭০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৯৩ রান করে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর। তার সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত আছেন ইবাদত হোসেন। এছাড়া শাহানুর ৩০ ও তোফায়েল ২৭ রান করেন।

আরো পড়ুন:

মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ

স্বীকৃতির ১০ বছর পর জাতীয় ক্রিকেট লিগে ময়মনসিংহ

মিরপুরে খুলনার দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংও যুৎসই হয়নি। এবার ২৫৫ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। ১ উইকেটে ৬৮ রানে দিন শুরু করে তারা। এনামুলের ইনিংস থেমে যায় ৩৪ রানে। মোহাম্মদ মিথুন খুলতে পারেননি রানের খাতা। মিরাজ ৪৮ ও জিয়াউর এবং ইয়াসির মুনতাসির ৩২ রানের দুটি ইনিংস খেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের স্কোর বড় হয়নি।

১৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে ১০৯ রানের লক্ষ্য পায় রাজশাহী। ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

হাবিবুর রহমান সোহান ৬৮ বলে ৬২ রান করেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। ২৫ রান আসে সাব্বির হোসেনের ব্যাট থেকে। সাব্বির রহমান ১২ ও মেহরব ৪ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরেন। প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে ফিরল তারা।

কক্সবাজারে ময়মনসিংহ বিভাগ ও রংপুর বিভাগের ম্যাচ বাজে আউটফিল্ডের কারণে ভেস্তে যায়। একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ২ উইকেট হারিয়ে রংপুরের রান ১৮। এখনও তারা ৫৩৭ রানে পিছিয়ে। ময়মনসিংহ প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে।

পাশের মাঠে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় খেলা হয়েছে। আগের দিনের ২ উইকেটে ১১৫ রানের সঙ্গে ৫১ রান যোগ করেন বরিশাল বিভাগ। খেলা হয়েছে কেবল ১৫ ওভার। জাহিদুজ্জামান খান ৩২ ও সালমান হোসেন ইমন ৭৫ রানে অপরাজিত আছেন। প্রথম ইনিংসে এখনও তারা ১৯২ রানে পিছিয়ে।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর