স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসার সামলানোর পাশাপাশি পাঁচটি গরু লালন-পালন করে আসছিলেন লাকি রানী দে। গরু বিক্রি করে সংসার খরচ আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানোর চিন্তা করেছিলেন। টাকার প্রয়োজনে সম্প্রতি একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে দুর্বৃত্তরা গোযালঘরের তালা কেটে বাকি চারটি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে লাকি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

লাকি রানী মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাঁর স্বামী প্রশান্ত দের পানের টংদোকান ছিল। প্রায় তিন বছর আগে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তছনছ হয়ে যায় সাজানো-গোছানো সংসার। এরপর লাকি সংসারের হাল ধরেন। তাঁদের বড় মেয়ে রিয়া রানী দে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।

রোববার বিকেলে লাকিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাশের একটি ঘরে বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। লাকিদের ঘরে কোনো আনন্দ নেই। সুনসান নীরবতা।
বসতঘরের সামনে টিনের চালা আর বাঁশের বেড়া লাগানো গোয়ালঘর দেখিয়ে লাকি বললেন, অর্থসংকটে পড়ে ১০-১৫ দিন আগে ৩৫ হাজার টাকায় একটি বলদ বিক্রি করেন। দুটি গাভি ও দুটি বাছুর ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ১ মার্চ সকালে জেগে গোয়ালঘরের দরজার তালা কাটা দেখতে পান। ভেতরে গরুগুলো নেই। এ কথা বলতে বলতে লাকি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শাড়ি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে লাকি রানী বলেন, ‘গরুগুলা বিপদের ভরসা আছিল। সংসার চালানি লাগে। বড় মেয়ের সামনে পরীক্ষা। বই-খাতা, প্রাইভেট পড়া লাগে। অনেক খরচ। গরু বিক্রি করি সংসার, বাচ্চারার লেখাপড়ার খরচ চালাইমু মনে করছিলাম। সব শেষ। চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল।’

এ ব্যাপারে জুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রশান্ত দের ভাই বেচন দে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।

বিষয়টি স্বীকার করে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মোরশেদুল আলম ভূঁইয়া বলেন, প্রতিটি চুরির ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ কাজে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি বলেন, রাতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। তবে এর পাশপাশি রাতে এলাকাভিত্তিক পাহারার ব্যবস্থা করা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

চট্টগ্রামে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় দাসকে কোতোয়ালি থানার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।

গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ