শূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’
Published: 3rd, March 2025 GMT
স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসার সামলানোর পাশাপাশি পাঁচটি গরু লালন-পালন করে আসছিলেন লাকি রানী দে। গরু বিক্রি করে সংসার খরচ আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানোর চিন্তা করেছিলেন। টাকার প্রয়োজনে সম্প্রতি একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে দুর্বৃত্তরা গোযালঘরের তালা কেটে বাকি চারটি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে লাকি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
লাকি রানী মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা। উপজেলা সদরের ভবানীগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাঁর স্বামী প্রশান্ত দের পানের টংদোকান ছিল। প্রায় তিন বছর আগে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তছনছ হয়ে যায় সাজানো-গোছানো সংসার। এরপর লাকি সংসারের হাল ধরেন। তাঁদের বড় মেয়ে রিয়া রানী দে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে।
রোববার বিকেলে লাকিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পাশের একটি ঘরে বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। লাকিদের ঘরে কোনো আনন্দ নেই। সুনসান নীরবতা।
বসতঘরের সামনে টিনের চালা আর বাঁশের বেড়া লাগানো গোয়ালঘর দেখিয়ে লাকি বললেন, অর্থসংকটে পড়ে ১০-১৫ দিন আগে ৩৫ হাজার টাকায় একটি বলদ বিক্রি করেন। দুটি গাভি ও দুটি বাছুর ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন ১ মার্চ সকালে জেগে গোয়ালঘরের দরজার তালা কাটা দেখতে পান। ভেতরে গরুগুলো নেই। এ কথা বলতে বলতে লাকি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
শাড়ি দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে লাকি রানী বলেন, ‘গরুগুলা বিপদের ভরসা আছিল। সংসার চালানি লাগে। বড় মেয়ের সামনে পরীক্ষা। বই-খাতা, প্রাইভেট পড়া লাগে। অনেক খরচ। গরু বিক্রি করি সংসার, বাচ্চারার লেখাপড়ার খরচ চালাইমু মনে করছিলাম। সব শেষ। চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল।’
এ ব্যাপারে জুড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রশান্ত দের ভাই বেচন দে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০টি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।
বিষয়টি স্বীকার করে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা
সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ
এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী