হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এক প্রসূতির প্রসবকালে নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে চিকিৎসকদের দাবি, গর্ভে থাকতেই নবজাতক মারা গিয়েছিল। পরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে নবজাতকের মাথা বের করা হয়।  

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের লেবার গাইনী ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় জ্যেষ্ঠ গাইনী চিকিসক ডা.

নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।  তবে এই ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করেনি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে ভুক্তভোগী ওই নারী হাসপাতালের লেবার গাইনী ওয়ার্ডের ২১ নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।  

ভুক্তভোগী নারী পাবনার আতাইকুলা ইউনিয়নের আতাইকুলা গ্রামের দুবাই প্রবাসী রমজান খাঁর স্ত্রী শিউলী খাতুন (৩৫)। দুই সন্তানের জননী শিউলী তৃতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করেছিলেন।  

আরো পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৮

আদ্ দ্বীন সকিনা হাসপাতালে বিনামূল্যে হেলিকপ্টারে রোগী পরিবহন

হাসপাতাল ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গর্ভবতী মা প্রথম থেকে পাবনার গাইনী চিকিৎসক শাহীন ফেরদৌস শানুর নিয়মিত রোগী ছিলেন। হঠাৎ করে মঙ্গলবার ভোররাতে প্রসব ব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাকে সেহেরীর পরপরই ডা. শানুর শহরের বাসার চেম্বারে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক দেখে অবস্থা জটিল মনে করে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন।  এ সময় রোগীর স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে ভর্তির পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. দীপা মর্জিনা রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষা করে পেটের বাচ্চা মৃত বলে জানান। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি, বাচ্চা মৃত সেটি পরে জানতে পেরেছেন তারা। পরে হাসপাতালের ধাত্রী নরমাল ডেলিভারি করানোর সময় নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেটের ভেতরে রয়ে যায়। তারপর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে বিচ্চিন্ন মাথা বের করা হয়৷  

ঘটনার বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান বলেন, রোগীর অবস্থা এখন ভালো আছে। গাইনী চিকিসক নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন। এরপরে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সহকারী পরিচালক আরো বলেন, ‘‘রাতে বা সকালে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ওই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ডেলিভারির কাজটি করা উচিৎ ছিল। এ ঘটনায় চিকৎসকসহ যারা ছিলেন তাদের আমি ডেকে পাঠিয়েছি। সকলের সঙ্গে কথা বলে জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা কী হয়েছিল।’’  

তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. জাহিদুল ইসলাম ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. ফাতেমা মাসুর।  ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রধান গাইনী বিশেজ্ঞ চিকিসক ডা. নার্গিস সুলতানা বলেন, এই নারীর পেটে যে বাচ্চা ছিল সেটি মৃত অবস্থায় ছিল। মৃত বাচ্চা নিয়েই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পেটের বাচ্চার বয়সও পরিপূর্ণ ছিল না। সবে মাত্র সাত মাসে পড়েছে। সেই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেই মায়ের পেটের ও জরায়ুর অবস্থা দেখে বাচ্চা মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যদের। মায়ের পরিপূর্ণ সেবা প্রদানসহ তার জন্য কী কী করণীয় সেটির ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

ডা. নার্গিস সুলতানা আরো জানান, পেটে থাকা মৃত শিশুটির বয়স কম হওয়াতে তার শরীরের কোনো কিছুই শক্ত ছিল না। এমনকি ওই শিশুটির দেহের মাথার অংশ পেটের উপরে ও পা নিচের দিকে ছিল। নরমাল প্রসব করানোর সময় সেবিকারা জোরে টান দিলে ঘাড় থেকে মাথা ছিঁড়ে যায়। পরে সিজার করে তার পেট থেকে মৃত শিশুর অবশিষ্ট অংশ মাথা বের করা হয়েছে। 

এ ঘটনা কেন হয়েছে, কোনো অসাবধানতা ছিল কি-না, সেটি তদন্ত করে দেখছেন বলে জানান তিনি। 

ঢাকা/শাহীন/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র সদস চ ক ৎসক অবস থ এ ঘটন সদস য ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ