পাবনায় এক প্রসূতির সন্তান জন্মের সময় নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেট থেকে নবজাতকের মাথা বের করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের লেবার গাইনি ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ গাইনি চিকিৎসক ডা. নার্গিস সুলতানাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। 

ভুক্তভোগী নারী পাবনার আতাইকুলা ইউনিয়নের আতাইকুলা গ্রামের দুবাইপ্রবাসী রমজান খাঁর স্ত্রী শিউলী খাতুন (৩৫)। দুই সন্তানের জননী শিউলী খাতুন তৃতীয় সন্তান গর্ভে ধারণ করছিলেন। এ ঘটনায় আজ রাত পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের ২১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। 

রোগীর পরিবারের সদস্যরা জানান, ওই প্রসূতি প্রথম থেকেই পাবনার গাইনি চিকিৎসক শাহীন ফেরদৌস শানুর পরামর্শ নিচ্ছিলেন। হঠাৎ মঙ্গলবার ভোরে পেটে ব্যথা উঠলে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সাহ্‌রির পরপরই ডা.

শানুর বাসার চেম্বারে নিয়ে যান। ডাক্তারের পরামর্শে রোগীর স্বজন তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে হাসপাতালের ধাত্রী নরমাল ডেলিভারি করানোর সময় নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেটের ভেতরে রয়ে যায়। তার পর সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পেট থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা বের করা হয়। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ও স্বজনের পাশাপাশি অন্য রোগীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. দীপা মর্জিনা রোগীর প্রাথমিক পরীক্ষা করে পেটের বাচ্চা মৃত বলে জানান। তবে পরিবারের সদস্যদের দাবি, বাচ্চা মৃত সেটি তারা পরে জানতে পেরেছেন। 

ঘটনা তদন্তে গঠন করা কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন– হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. জাহিদ ইসলাম ও গাইনি বিশেজ্ঞ ডা. ফাতেমা মাসুর। 

তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. নার্গিস সুলতানা বলেন, মৃত বাচ্চা নিয়েই ওই নারী এখানে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর পেটের বাচ্চার বয়সও পরিপূর্ণ ছিল না। সবেমাত্র সাত মাসে পড়েছে। সেই সময়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক সেই মায়ের পেটের ও জরায়ুর অবস্থা দেখে বাচ্চা মৃত বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে মায়ের পরিপূর্ণ সেবা প্রদানসহ তাঁর জন্য কী কী করণীয়, সেটির ব্যবস্থা করেছি।

তিনি আরও বলেন, পেটে থাকা মৃত শিশুটির বয়স কম হওয়ায় তার শরীরের কোনো কিছুই শক্ত ছিল না। এমনকি ওই শিশুটির দেহের মাথার অংশ পেটের ওপরে ও পা নিচের দিকে ছিল। নরমাল প্রসব করানোর সময় সেবিকারা জোরে টান দিলে ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে সিজার করে তাঁর পেট থেকে মৃত শিশুর অবশিষ্ট অংশ (মাথা) বের করা হয়। এ ঘটনা কেন হয়েছে, কোনো অসাবধানতা ছিল কিনা, সেটি তদন্ত করে দেখছি আমরা। 

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. রফিকুল হাসান বলেন, রোগীর অবস্থা এখন ভালো আছে। তদন্ত কমিটি সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। কোনো ধরনের অবহেলা পাওয়া গেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন চ ক ৎসক এ ঘটন তদন ত র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ