গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এরপর থেকেই বিভিন্ন দাবিতে নানা পেশার মানুষ রাস্তায় ঢাকার রাস্তায় নামছে, বিক্ষোভ করছে। খবর নিক্কেই এশিয়ার
জরিমানা বৃদ্ধির প্রতিবাদে রিকশাচালক, কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী থেকে শুরু করে শিক্ষক পর্যন্ত সবাই অবরোধ করছে রাস্তা। অর্থাৎ, বিক্ষোভের শহরে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
প্রায় ২৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই বিশাল শহরে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ হয়। এতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট।
জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ঢাকায় নিয়মিত বিরতিতে বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে।
আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, এটি একটি ক্রমবর্ধমান গণতান্ত্রিক স্পেসের লক্ষণ, যদিও প্রাথমিকভাবে এটি কিছুটা অসংগঠিতভাবে বিকশিত হয়েছে। বিকল্প কী? কেউ যদি তাদের দাবি তুলতে না পারে তবে কি সেটা ভালো?
হাসিনার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে শাসনব্যবস্থা পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার শাসনামলে খুন, অধিকার লঙ্ঘন, অপহরণ এবং দুর্নীতির মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়।
সমালোচকরা বলছেন, অভুত্থানে শত শত বিক্ষোভকারীকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হাসিনার পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী ২০০৯ সালের পর থেকে নিয়মিতভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়ন চালায়।
সাম্প্রতিক এক বিক্ষোভে দেখা গেছে, হাসিনার বিরুদ্ধে অভুত্থানে আহত কয়েক ডজন মানুষ দ্রুত ও উন্নতমানের চিকিৎসা সেবার দাবিতে হাসপাতালের বেড ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এ সময় তারা শাহবাগ অবরোধ করে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সমাজের বিভিন্ন অংশের পুঞ্জীভূত হতাশা এখন তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মনে হচ্ছে তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) নির্ভর করার মতো পেশাদার ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী আইন প্রয়োগ কাঠামো তৈরি করতে পারেনি, যা এই অস্থিতিশীলতার কারণ।
কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। তবে কিছু অনুমান অনুযায়ী, হাসিনার পতনের পর থেকে ঢাকায় বিক্ষোভের সংখ্যা ১২০টিরও বেশি।
নতুন সরকার শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও অর্থনীতিকে সঠিক পথে আনার এক কঠিন কাজ মোকাবিলা করছে। কারণ, ১৭ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার দেশটি সম্ভবত বছরের শেষ নাগাদ নতুন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে।
গত মাসে চাকরি হারানো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য নিরাপত্তাবাহিনী লাঠি, জলকামান এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে।
একজন ক্ষুব্ধ শিক্ষক নিক্কেই এশিয়াকে জানিয়েছেন, আমাদের ওপর অবিচার করা হয়েছে। প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা আমাদের মেয়াদে সব দাবি দাবি পূরণ করতে পারছি না। তবে আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি পূরণ করার চেষ্টা করছি।
এক মাস আগে হোটেল, রেস্তোরাঁ, টেলিযোগাযোগ-ইন্টারনেট, ওষুধ, কোমল পানীয় এবং সিগারেটসহ ১০০ টিরও বেশি পণ্য ও সেবার ওপর কর বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ শুরু হয়।
তবে ক্রমবর্ধমান দাম, তীব্র যানজট, বেকারত্বের এমন শহরে প্রতিনিয়ত বিক্ষোভে সবাই খুশি নন। ঢাকার বাসিন্দা রওসন আরা বলেন, শহরের সর্বত্র বিক্ষোভকারীদের কারণে আজকাল যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে উত্তেজনা চরমে ওঠে যখন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে দেয়।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায়।
বিএনপি জানায়, সরকার দেশজুড়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং অস্থিরতার সাম্প্রতিক ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।
সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ঢেউ সাময়িক হবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে জনতার শাসন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।
ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল।
নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।