পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় কোস্টগার্ডের সদস্য মোস্তফা সাদিকের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম সিকদারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার কলাপাড়া থানায় এ মামলা করেন আন্দারমানিক স্টেশনের পেটি অফিসার নেসারুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী মোস্তফা সাদিক কোস্টগার্ডের আন্দারমানিক (পায়রা বন্দর) স্টেশনের গোয়েন্দা সদস্য হিসেবে কর্মরত। তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন সেলিম সিকদারের ভাই উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন সিকদার, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান, নীলগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও পাঁচ-ছয়জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই মামলার প্রধান আসামি শওকত হোসেনকে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছে পুলিশ।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৮ মার্চ পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সন্ধ্যা সাতটার দিকে কলাপাড়া বাসস্ট্যান্ড–সংলগ্ন চৌরাস্তায় অবস্থান করছিলেন কোস্টগার্ড সদস্য মোস্তফা সাদিক। এ সময় আসামিরা পরিচয় জেনেও তাঁর ওপর হামলা চালায়। তাঁকে মারধর ও জখম করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এ সময় আসামিরা ভুক্তভোগীকে উদ্দেশ্য করে জানায়, পুরো কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন তাদের কথামতো পরিচালিত হয়। মামলায় সরকারি গোয়েন্দা কাজে বাধা, সামরিক সদস্যকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তবে এ মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন কলাপাড়া পৌর বিএনপি ও উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় বিএনপির উদ্যোগে এ মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে এ দাবি করেন তাঁরা। মিছিল থেকে দলের নেতা-কর্মীরা ‘নেতৃবৃন্দের নামে মামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ষড়যন্ত্রের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’—এসব স্লোগান দিয়ে পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। এ কর্মসূচি শেষে শহরের মনোহরীপট্টি এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন সিকদার, সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি গাজী মোহাম্মদ ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মুসা তাওহীদ নাননু মুন্সী। তাঁরা জানান, উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতাদের নামে ষড়যন্ত্র করে একটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ যে ঘটনা হয়েছে, তা নিয়ে মামলা হওয়ার কথা নয়। বিএনপিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। দ্রুত এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম বলেন, ‘কোস্টগার্ড সদস্যের ওপর হামলা-মারধরের ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত করে দেখব। যাঁদের নামে মামলা করা হয়েছে, তাঁদের দোষ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ব এনপ ব এনপ র স র ঘটন য় ত র কর কল প ড় ম রধর উপজ ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির

আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ‘নির্বাচন বাতিল বা বিলম্বের ষড়যন্ত্র’ রুখে দিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে হলে সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মিরপুরের ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন সেনপাড়ায় সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তরের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের এই শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌস আহমেদ।

সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক, মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লূনা নূর, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোতালেব হোসেন ও মহানগর কমিটির সদস্য রিয়াজ উদ্দিন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী সাজ্জাদ জহির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত চার মূলনীতি সমুন্নত রাখতে হবে। শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে বেগবান করতে শ্রমিক, কৃষক, যুব ও নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। বামপন্থীদের সরকার গঠন করতে সব দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাঁদের নেতৃত্বেই আগামী দিনের ক্ষমতায় লড়াইকে অগ্রসর করতে হবে।

সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান ছিল, আজ তারাই রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, ব্যবস্থার পরিবর্তনই সময়ের দাবি। কমিউনিস্টরা সেই ব্যবস্থার পরিবর্তনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আহ্বান জানাই, গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। আগামীকাল থেকেই আমরা জাতীয় নির্বাচনের কাউন্টডাউন (ক্ষণগণনা) দেখতে চাই।’

নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু না হলে জনগণের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রথম শর্ত হলো নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী নির্বাচন। সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে হবে। কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, লুটপাট ও শোষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে জনগণের আন্দোলনে রূপ দেবে।’

সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দেশীয় দোসরদের হাতে দেশের সম্পদ লুট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি আহাম্মদ সাজেদুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এখনো অনিশ্চিত যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না। কারণ, বর্তমান সরকার এখনো সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি। জনগণ আজ অর্থনৈতিক সংকট, বৈষম্য ও দুর্নীতির শিকার। একদিকে জনগণের ঘামঝরানো টাকায় দেশ চলছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের দোসররা দেশের সম্পদ লুট করছে। সমুদ্রবন্দর, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। এটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
  • অদৃশ্য শক্তি ও ফ্যাসিষ্টরা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত খোরশেদ
  • নির্বাচন বাতিলের সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান সিপিবির