আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে বড় গন্তব্যস্থল সৌদি আরব। দেশটিতে আরও বেশি শ্রমিক পাঠানোর বড় সুযোগ এখন। কারণ, ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক ঘোষণার পর দেশটিতে কর্মীর চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সত্যায়ন জটিলতার কারণে সৌদি আরবে অভিবাসী কর্মী পাঠানোর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশে বেকারত্বের সংকট কাটাতে প্রবাসে কর্মসংস্থানের যে সুযোগ, সেটিই এখানে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি আসলে কোনোভাবে মানা যায় না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
বর্তমান বিশ্বে বহুমুখী শ্রমবাজার ধরতে আমরা বরাবরই ব্যর্থ। দক্ষ, প্রশিক্ষিত, ভাষাজ্ঞানসম্পন্ন জনবল গড়ে না তোলার কারণে এ দেশের মানুষ প্রবাসী কর্মী হিসেবে চাহিদামাফিক উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে না। এটি আমাদের নীতিনির্ধারকদের চরম ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়। ফলে এ দেশের শ্রমবাজার ঘুরেফিরে মধ্যপ্রাচ্য এবং এর বাইরে মাত্র কয়েকটি দেশকেন্দ্রিক। বিদেশে আমাদের এই ছোট শ্রমবাজারের পরিসর আরও বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও করা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সদিচ্ছার অভাবে। এর মধ্যে যখন সংবাদ শিরোনাম হয় সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো কমে এসেছে, তা কোনো অর্থেই সুখকর নয়।
২০৩৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজক হওয়ায় সৌদি আরবে আরও বেশি কর্মী পাঠানোর বড় সুযোগ এখন আমাদের। দেশটিতে কর্মীর চাহিদা ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। গত অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৮০ হাজারের বেশি কর্মী গেছেন দেশটিতে। কিন্তু গত মাসে এ সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন বায়রার সদস্যরা বলছেন, কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র সত্যায়ন জটিলতায় সৌদিতে কর্মী পাঠানো কমছে।
সৌদি আরব থেকে আসা কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র যাচাই-বাছাই করে তা সত্যায়ন করে পাঠায় দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস। একজন কর্মীর চাহিদাপত্র এলে দূতাবাসের সত্যায়ন প্রয়োজন হয় না, একের অধিক হলেই তা সত্যায়ন করাতে হয়। এতে দীর্ঘসূত্রতা বেড়েছে। সময়মতো কর্মী পাঠানো যাচ্ছে না। আগে ২৪টি পর্যন্ত নিয়োগপত্রের সত্যায়ন প্রয়োজন ছিল না। গত ২২ ডিসেম্বর থেকে নতুন নিয়ম চালু করে সরকার। বায়রা সদস্যরা বলেন, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ কর্মী যান ছোট ছোট চাহিদাপত্রের মাধ্যমে। মানে ১ থেকে ২৪টি পর্যন্ত চাহিদার মাধ্যমে। তাই দূতাবাসের সত্যায়ন জটিলতায় এখন ভিসা প্রক্রিয়াকরণ করা যাচ্ছে না। তাঁদের দাবি, আগের নিয়মে সত্যায়ন চালু করা হোক।
আমরা আশা করব, বায়রার এ অভিযোগ ও দাবি আমলে নেবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এখানে আরও কী কী সংকট ও জটিলতা আছে, তা চিহ্নিত করতে হবে। বিগত সরকারের আমলের মতো প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর জন্য কোনো মাফিয়া চক্রকে সচল হতে দেওয়া যাবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়
সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।
সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।
সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।
সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।
সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।
সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।
সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।