রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা
Published: 14th, March 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থীশিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেছেন। এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব অনারার হাছে দুঁরি আইস্যেদে, অনারার এক্কানা সাহস অইবার লাই। আবার দুনিয়ার সামনে লড়াই গরিবু, যাতে অনারারে শান্তিপূর্ণভাবে অনারার দেশত পৌঁছাই দিত পারে। ইয়ান মস্ত বড় খুশির হতা। এই খুশির হতা আজিয়া আঁরা অনুভব গরির। আঁরা তাঁরে (আন্তোনিও গুতেরেস) ভীষণভাবে ধন্যবাদ জানাই।’ (জাতিসংঘ মহাসচিব আপনাদের কাছে এসেছেন, আপনাদের সাহস দেওয়ার জন্য। শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের দেশে পৌঁছে দিতে তিনি লড়াই করবেন। এটি মস্তবড় খুশির কথা। এই খুশির কথা আজ আমরা অনুভব করছি। আমরা তাঁকে ভীষণভাবে ধন্যবাদ জানাই।)
প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের ভাষায় আরও বলেন, ‘তাঁরে কি হনঅ দেশত আনিত ফারেন না, তার দেশত। বনজঙ্গলর ভিতর ঢুকাইত পারিব না? পাইত্তো নঅ। তাঁরা সরকারঅর বড় বড় হর্তা অলর লই হতা কঅই। এ জঙ্গলর ভিতর যনর হতা নঅ। তেই (আন্তোনিও গুতেরেস) হষ্ট গরি আইস্যে। নিজে রোজা রাইক্কে আজিয়া অনারারলাই।’ (তাঁকে কি কোনো দেশ আনতে পারছে তাঁদের দেশে? বনজঙ্গলে ঢোকাতে পারবে? পারবে না। তাঁরা সরকারের বড় বড় কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এই জঙ্গলের ভেতর যাওয়ার কথা নয়। তিনি কষ্ট করে এসেছেন। আজ আপনাদের জন্য নিজে রোজা রেখেছেন।)
ড.
(তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) আমরা বারবার যেটি বোঝাতে চাইছি, তা হলো, ঈদ এলে আমরা সবাই দাদা–দাদির কবর জিয়ারত করি। নানা–নানির কবর জিয়ারত করি। আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করি। এই মানুষগুলো (রোহিঙ্গা শরণার্থী) এখানে এসে সে সুযোগ পাচ্ছে না। তাঁদের কবর জিয়ারত করার সুযোগ নেই। তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) আপনারা দাওয়াত করুন। সামনের বছর ঈদের সময় যেন আপনাদের বাড়িতে তিনি আসেন। আপনাদের বাড়িতে একত্র হন এবং দাদা–দাদির কবর জিয়ারত করে তাঁকে সংবর্ধনা দেন।)
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে বলেন, আঁরা এতুগ্গুন মানুষ আইস্যি। তাঁরে আঁরা বুঝাইর, অনারাও বুঝাইতেন লাইগ্গুন। কেউ আঁরারে আইয়েরে ভাত হাবাই যঅক, ইয়ান ত আঁরা ন চাই। আঁরারতো নিজর ক্ষমতা আছে। ধনসম্পদ আছে, জায়গা–সম্পত্তি আছে। আঁরাতো গরিত পারির। আঁরারে দেশত যাইত ন দে বলি, আঁরা মাইনষর বোঝা অই গেইগই। আঁরার পুয়া ছা বড় অইতো চার। দাদা–দাদির হবরঅর পাশে, নিজর ঘরর পাশে, আত্মীয়স্বজনর পাশে; ইয়ান আঁরা ন পারির। তাঁরে (আন্তোনিও গুতেরেস) আঁরা বুঝাইর। (আমরা এত মানুষ এসেছি। তাঁকে আমরা বুঝিয়েছি। আপনারাও বুঝাচ্ছেন যে, কেউ আমাদের এসে ভাত খাইয়ে যাক, তা আমরা চাই না। আমাদের নিজেদেরই ক্ষমতা আছে। ধনসম্পদ আছে। জায়গা–সম্পত্তি আছে। আমরাও করতে পারি। কিন্তু আমাদের দেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এখন মানুষের বোঝা হয়ে গেছি। আমাদের ছেলেমেয়ে দাদা–দাদির কবরের পাশে, নিজের ঘরের পাশে, আত্মীয়স্বজনের পাশে বড় হতে চায়; কিন্তু আমরা তা পারছি না। তাঁকে এসব বিষয় আমরা বোঝাব।)
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হবরগান বেগ্গুনঅরে দঅন যে, আঁরারে সুযোগ্গান দঅন, যাতে আঁরা নিজর বাড়িত ফিরি যাইত পারি। দুনিয়ার মানুষরে এই হতা বুঝঅম পরিবঅ। তেঁই (আন্তোনিও গুতেরেস) এ দায়িত্ব নিজে লইয়ে। হাজার রহমর দায়িত্ব তাঁর। হডে যুদ্ধ অর, হডে কী অর; বেগ্গিনর দায়িত্ব তাঁর। এত কিছুর ভিতরে অনারার দায়িত্ব হত গুরুত্ব সহকারে তেঁই বিবেচনা গরের, ইয়ান বুঝিত পাইত্তে লাইগ্গুনত। হত গুরুত্ব দিয়ে তেঁই।
(আপনারা ফিরে যেতে চান, এই খবরটা সবাইকে দিন। দুনিয়ার মানুষকে এই কথা বুঝতে হবে। তিনি (আন্তোনিও গুতেরেস) এই দায়িত্ব নিয়েছেন। হাজার রকমের দায়িত্ব তাঁর। কোথায় যুদ্ধ হচ্ছে, কোথায় অন্য কিছু হচ্ছে; সব কিছুই তাঁকে দেখতে হয়। এতকিছুর ভেতরে আপনাদের দায়িত্ব তিনি গুরুত্ব সহকারেই বিবেচনা করছেন। এটি আপনারাও বুঝতে পারছেন।)
যা বললেন আন্তোনিও গুতেরেস
আয়োজনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আমি দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার তারা যেন না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’
‘দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা আরও ভালো পরিবেশ চায় ক্যাম্পে। দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য অনেক দেশ সম্প্রতি নাটকীয়ভাবে মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে আমাদের মানবিক সহায়তার মধ্যে খাবারের রেশন কমাতে হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যত দেশে সম্ভব আমি কথা বলব, যাতে করে ফান্ড (তহবিল) পাওয়া যায় এবং এর থেকে আরও খারাপ পরিস্থিতি না আসে।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবে, এমনটি প্রত্যাশা করেন না উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে জোরালো আওয়াজ তুলব। কারণ, সম্মানের সঙ্গে এখানে বসবাসের জন্য এই সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।’
উল্লেখ্য, চার দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার আগে আজ দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র কবর শরণ র থ আপন দ র অন র র আম দ র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
হামলার জবাবে হামলা চলছে, ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে
ইরান ও ইসরায়েল সংঘাতের তৃতীয় দিনে ব্যাপক হামলা-পাল্টা হামলা হয়েছে। এক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে ইরান। এতে ১৩ জন নিহত ও ৩৫ জন নিখোঁজ হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪৯ জন। গত শনিবার রাত ও গতকাল রোববার চালানো হামলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইরানেরও। দেশটির পারমাণবিক স্থাপনায় নতুন করে হামলা হয়েছে। এ ছাড়া তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইরানও গতকাল পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলের আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র দৃষ্টিগোচর হলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তা রুখে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সতর্কতা হিসেবে সাইরেন বেজে ওঠে।
আগের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলের বাত ইয়াম এলাকা। সেখানে আবাসিক ভবন ধসে ছয়জন নিহত এবং অনেকে নিখোঁজ হয়েছেন। ইসরায়েলের উদ্ধার দল জানায়, তারা ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা চালানোর বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, এ সংঘাত সহজেই শেষ করা সম্ভব। তিনি একটি চুক্তির বিষয়ে আশাবাদী।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানি হয়েছে কম। লোকজন সাইরেনের শব্দ শুনেই ভূগর্ভস্থ বোমা আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। ইরান থেকে সবচেয়ে দ্রুতগামী ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছতে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় লাগে। মাঝে সিরিয়া, জর্ডান পাড়ি দিতে হয়। ইসরায়েলের বাসিন্দারা সতর্ক বার্তা পেয়েই নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। ইরানে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নেই। হামলার হুমকির মুখে অনেক বাসিন্দা তেহরানের বাইরে চলে যাচ্ছেন।
ইসরায়েলে ইরানের সর্বশেষ আঘাতের ঢেউ শুরু হয় স্থানীয় সময় শনিবার রাত ১১টার পর। জেরুজালেম ও বন্দরনগরী হাইফাতে সাইরেন বেজে ওঠে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে যান। রাত আড়াইটার দিকে আরেক ঝাঁক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল অভিমুখে ছুটে আসতে থাকে। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে আবারও নির্দেশনা দেয় আইডিএফ। এ সময় শূন্যে ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা চালানো হয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে। এদিকে ইয়েমেন থেকে জাফফা ও তেল আবিবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে হুতিরা।
ইসরায়েলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালিয়েছে তেহরান। ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহর রেহোভতে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় উইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট জানায়, এতে কেউ হতাহত হননি। ইরানের চালানো আগের রাতের হামলার প্রসঙ্গ টেনে গতকাল রোববার ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারগোজ বলেন, এটি বেদনাদায়ক ও কঠিন এক সকাল।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলে শিশুসহ প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বিশেষ করে উত্তর ও মধ্য ইসরায়েলে আঘাত হানে। তামরা শহরে চার নারী নিহত হয়েছেন। মধ্যাঞ্চলের বাত ইয়ামে বহুতল ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। বেঁচে যাওয়া স্যামুয়েল বার ডেভিড নামে ওই ভবনের এক বাসিন্দা জানান, তিনি সেখানে ৩৫ বছর ধরে থাকছেন। হামলায় অলৌকিকভাবে তাঁর পরিবার বেঁচে গেছে।
হতাহত ও নিখোঁজের খবর নিশ্চিত করে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, বাথ ইয়ামে আবাসিক ভবনে ইরানের একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। উদ্ধার অভিযান চলছে, যা শেষ করতে এক দিন লাগবে। ওই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাংবাদিকদের ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ।
সিএনএন জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইসরায়েলের হামলায় ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২৮। আহত ৯০০ জন। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাতে তেহরানে একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ৬০ জন নিহত হন। ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ-রেজা জাফরগান্দ বলেন, ইসরায়েলের বিমান হামলায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এদিকে তেহরানে সামরিক স্থাপনার আশপাশ থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, রোববার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উত্তর ইসরায়েলের হাইফায় কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছেন। হাইফায় বিস্ফোরণের খবরও মিলেছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সত্ত্বেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের সংখ্যা দেখে ইসরায়েলিরা হতবাক হচ্ছে।
ইরানে বৃহত্তর মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততা খুঁজছে ইসরায়েল। ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করেছি। ইস্পাহানের একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা করেছি।’ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা পশ্চিম ইরানে বিমান হামলা চালিয়েছে। ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস মার্কিন স্থাপনাগুলোতে সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে। ইরান জানিয়েছে, তারা ৪৪টি ইসরায়েলি ড্রোন এবং কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করেছে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শান্ত হবে বলে আশাবাদ দিয়েছেন। রোববার গ্রিনল্যান্ড সফরের তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, ইরান থেকে রোববার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর তারা তা প্রতিরোধ করেছে।
ইরান-কাতার গ্যাসক্ষেত্রে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। তিনি বলেন, যুদ্ধকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রসারিত করার প্রচেষ্টা হবে ভয়ংকর।
ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্ব সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে একমত হতে চায় জি৭ দেশগুলো। জার্মান চ্যান্সেলর মের্জ বলেছেন, আসন্ন জি৭ বৈঠকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সমাধানে ঐকমত্য আসতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আকাশসীমা ও বিমানবন্দর সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করেছে। যুদ্ধের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে আশাবাদ দিয়েছে রাশিয়া।
ইরানের লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েল রোববার ২৫০টি স্থানে আঘাত করেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইরাককে ইসরায়েলি আকাশসীমা ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি বলেছেন, ইসরায়েলের হামলা ইরাক ও এ অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি। জার্মানির চ্যান্সেলর বলেছেন, তেহরানের উচিত অবিলম্বে ইসরায়েলে বোমা হামলা বন্ধ করা।
খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনায় ট্রাম্পের ভেটো
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন। এক কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলিদের খামেনিকে হত্যা করার সুযোগ ছিল। বিষয়টি জানার পর ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে জানিয়েছিলেন– এটি ভালো হবে না।
তেহরানে রাতভর ৮০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তেহরানে অন্তত ৮০টি লক্ষ্যবস্তুতে রাতভর হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় ইসরায়েলের ডজনখানেক যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে টানা তৃতীয় দিন হামলা চালানো হলো। বিবিসি জানায়, ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদরদপ্তর, সামরিক গবেষণা ও উন্নয়ন শাখা। দুটি ‘দ্বৈত-ব্যবহারের’ জ্বালানি কেন্দ্রেও হামলা হয়। ওই জ্বালানি কেন্দ্র সামরিক ও পারমাণবিক কাজে ব্যবহার করা হতো।
আইডিএফ আরও জানিয়েছে, ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর অংশ হিসেবে তিন দিনের কম সময়ে তারা ইরানের ১৭০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। ইরানের ৭২০টির মতো সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করেছে।
সহজেই একটি চুক্তি করতে পারব, বললেন ট্রাম্প
এ অবস্থায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার যে অভিযোগ ইরান তুলেছে, তা তিনি অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যদি কোনোভাবে ইরানের হামলার শিকার হই, তাহলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্র তার পূর্ণ শক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শন করবে। সশস্ত্র বাহিনী এমনভাবে নেমে আসবে, যা তারা (ইরান) কখনও দেখেইনি।’ নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি বলেন, যা হোক, আমরা সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে পারব, যার মাধ্যমে এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে।’
তেহরানে তেল শোধনাগারে হামলা
অপরদিকে তেহরানের শাহরান তেলক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তবে সেখানে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ইরানের আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম জানায়, গতকাল রোববার তেহরানের পাশে একটি তেল শোধনাগারে ইসরায়েল হামলা চালালে আগুন ধরে যায়। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এতে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এ অবস্থায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্য সন্দেহে ইরানের দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে আমরাও করব, বলছে ইরান
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি তেহরানে গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইসরায়েল তার দেশের ওপর হামলা বন্ধ করলে তেহরানও পাল্টা প্রতিক্রিয়া বন্ধ করে দেবে। আলজাজিরা জানায়, গত শুক্রবার ইসরায়েলের হামলার জেরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর এই প্রথম প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বললেন আরাগচি। এর আগে তেহরান বারবার বলেছে, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা যে কোনো ক্ষেত্রে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানালেন নেতানিয়াহু
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্মদিনে গত শনিবার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রয়টার্স জানায়, তিনি ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রেরও শত্রু বলে বর্ণনা করেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দুই নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে– এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। তবে ইরানে ব্যাপক হামলা চালিয়ে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যার পর ইসরায়েলের প্রশংসায় ট্রাম্প ‘চমৎকার’ ও ‘অত্যন্ত সফল’ বলেছিলেন।
মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে যুক্তরাজ্য
ইরান ও ইসরায়েলের হামলা-পাল্টা হামলার মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাজ্য আরও যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। গতকাল শনিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এ কথা জানান। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে জরুরি সহায়তা দেওয়ার জন্যই যুদ্ধবিমান পাঠানো হবে। স্টারমার কানাডায় ধনী দেশগুলোর জোট জি৭ সম্মেলনে অংশ নিতে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরও আরএএফ জেট পাঠানো হচ্ছে। এ ছাড়া ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে স্টারমার গত শনিবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলেন।
ইরানে ইন্টারনেট বন্ধ, স্টারলিংক চালু করলেন ইলন মাস্ক
মার্কিন ধনকুবের ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক জানিয়েছেন, ইরান সরকারের পক্ষ থেকে স্থলভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ার পর তিনি উপগ্রহনির্ভর ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংক সেখানে চালু করেছেন। গত শনিবার সকালে এক্স পোস্টে মাস্ক লিখেন, ‘সংযোগ চালু হয়েছে।’ টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, ইরান সরকার শুক্রবার সকালে দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতে চায় ইসরায়েল
দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনকে যোগ দিতে বলেছে। এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলের হামলা থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে। তারা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ঘাঁটিগুলোতে যেন হামলা না হয়। একটি পর্বতের নিচে তৈরি ইরানের ফরদউ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সাইট ধ্বংস করতে যুক্তরাষ্ট্রকে তারা এ আহ্বান জানাচ্ছে।
ইরানে বাংলাদেশি দূতাবাসের জরুরি হটলাইন চালু
চলমান সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে ইরানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সাহায্য ও সহায়তা দিতে জরুরি হটলাইন নম্বর চালু করেছে তেহরানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস। যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে অথবা দেশে ফিরতে সহায়তা পেতে ওই হটলাইনে কল করার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস।
হটলাইন নম্বরগুলো হলো +৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮, +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫। এই নম্বরগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপে কল করা যাবে।