রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা
Published: 14th, March 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থীশিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেছেন। এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব অনারার হাছে দুঁরি আইস্যেদে, অনারার এক্কানা সাহস অইবার লাই। আবার দুনিয়ার সামনে লড়াই গরিবু, যাতে অনারারে শান্তিপূর্ণভাবে অনারার দেশত পৌঁছাই দিত পারে। ইয়ান মস্ত বড় খুশির হতা। এই খুশির হতা আজিয়া আঁরা অনুভব গরির। আঁরা তাঁরে (আন্তোনিও গুতেরেস) ভীষণভাবে ধন্যবাদ জানাই।’ (জাতিসংঘ মহাসচিব আপনাদের কাছে এসেছেন, আপনাদের সাহস দেওয়ার জন্য। শান্তিপূর্ণভাবে আপনাদের দেশে পৌঁছে দিতে তিনি লড়াই করবেন। এটি মস্তবড় খুশির কথা। এই খুশির কথা আজ আমরা অনুভব করছি। আমরা তাঁকে ভীষণভাবে ধন্যবাদ জানাই।)
প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের ভাষায় আরও বলেন, ‘তাঁরে কি হনঅ দেশত আনিত ফারেন না, তার দেশত। বনজঙ্গলর ভিতর ঢুকাইত পারিব না? পাইত্তো নঅ। তাঁরা সরকারঅর বড় বড় হর্তা অলর লই হতা কঅই। এ জঙ্গলর ভিতর যনর হতা নঅ। তেই (আন্তোনিও গুতেরেস) হষ্ট গরি আইস্যে। নিজে রোজা রাইক্কে আজিয়া অনারারলাই।’ (তাঁকে কি কোনো দেশ আনতে পারছে তাঁদের দেশে? বনজঙ্গলে ঢোকাতে পারবে? পারবে না। তাঁরা সরকারের বড় বড় কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এই জঙ্গলের ভেতর যাওয়ার কথা নয়। তিনি কষ্ট করে এসেছেন। আজ আপনাদের জন্য নিজে রোজা রেখেছেন।)
ড.
(তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) আমরা বারবার যেটি বোঝাতে চাইছি, তা হলো, ঈদ এলে আমরা সবাই দাদা–দাদির কবর জিয়ারত করি। নানা–নানির কবর জিয়ারত করি। আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করি। এই মানুষগুলো (রোহিঙ্গা শরণার্থী) এখানে এসে সে সুযোগ পাচ্ছে না। তাঁদের কবর জিয়ারত করার সুযোগ নেই। তাঁকে (আন্তোনিও গুতেরেস) আপনারা দাওয়াত করুন। সামনের বছর ঈদের সময় যেন আপনাদের বাড়িতে তিনি আসেন। আপনাদের বাড়িতে একত্র হন এবং দাদা–দাদির কবর জিয়ারত করে তাঁকে সংবর্ধনা দেন।)
প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে বলেন, আঁরা এতুগ্গুন মানুষ আইস্যি। তাঁরে আঁরা বুঝাইর, অনারাও বুঝাইতেন লাইগ্গুন। কেউ আঁরারে আইয়েরে ভাত হাবাই যঅক, ইয়ান ত আঁরা ন চাই। আঁরারতো নিজর ক্ষমতা আছে। ধনসম্পদ আছে, জায়গা–সম্পত্তি আছে। আঁরাতো গরিত পারির। আঁরারে দেশত যাইত ন দে বলি, আঁরা মাইনষর বোঝা অই গেইগই। আঁরার পুয়া ছা বড় অইতো চার। দাদা–দাদির হবরঅর পাশে, নিজর ঘরর পাশে, আত্মীয়স্বজনর পাশে; ইয়ান আঁরা ন পারির। তাঁরে (আন্তোনিও গুতেরেস) আঁরা বুঝাইর। (আমরা এত মানুষ এসেছি। তাঁকে আমরা বুঝিয়েছি। আপনারাও বুঝাচ্ছেন যে, কেউ আমাদের এসে ভাত খাইয়ে যাক, তা আমরা চাই না। আমাদের নিজেদেরই ক্ষমতা আছে। ধনসম্পদ আছে। জায়গা–সম্পত্তি আছে। আমরাও করতে পারি। কিন্তু আমাদের দেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এখন মানুষের বোঝা হয়ে গেছি। আমাদের ছেলেমেয়ে দাদা–দাদির কবরের পাশে, নিজের ঘরের পাশে, আত্মীয়স্বজনের পাশে বড় হতে চায়; কিন্তু আমরা তা পারছি না। তাঁকে এসব বিষয় আমরা বোঝাব।)
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হবরগান বেগ্গুনঅরে দঅন যে, আঁরারে সুযোগ্গান দঅন, যাতে আঁরা নিজর বাড়িত ফিরি যাইত পারি। দুনিয়ার মানুষরে এই হতা বুঝঅম পরিবঅ। তেঁই (আন্তোনিও গুতেরেস) এ দায়িত্ব নিজে লইয়ে। হাজার রহমর দায়িত্ব তাঁর। হডে যুদ্ধ অর, হডে কী অর; বেগ্গিনর দায়িত্ব তাঁর। এত কিছুর ভিতরে অনারার দায়িত্ব হত গুরুত্ব সহকারে তেঁই বিবেচনা গরের, ইয়ান বুঝিত পাইত্তে লাইগ্গুনত। হত গুরুত্ব দিয়ে তেঁই।
(আপনারা ফিরে যেতে চান, এই খবরটা সবাইকে দিন। দুনিয়ার মানুষকে এই কথা বুঝতে হবে। তিনি (আন্তোনিও গুতেরেস) এই দায়িত্ব নিয়েছেন। হাজার রকমের দায়িত্ব তাঁর। কোথায় যুদ্ধ হচ্ছে, কোথায় অন্য কিছু হচ্ছে; সব কিছুই তাঁকে দেখতে হয়। এতকিছুর ভেতরে আপনাদের দায়িত্ব তিনি গুরুত্ব সহকারেই বিবেচনা করছেন। এটি আপনারাও বুঝতে পারছেন।)
যা বললেন আন্তোনিও গুতেরেস
আয়োজনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আমি দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে এবং রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার তারা যেন না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’
‘দ্বিতীয়ত, রোহিঙ্গারা আরও ভালো পরিবেশ চায় ক্যাম্পে। দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য অনেক দেশ সম্প্রতি নাটকীয়ভাবে মানবিক সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে। এ কারণে আমাদের মানবিক সহায়তার মধ্যে খাবারের রেশন কমাতে হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যত দেশে সম্ভব আমি কথা বলব, যাতে করে ফান্ড (তহবিল) পাওয়া যায় এবং এর থেকে আরও খারাপ পরিস্থিতি না আসে।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবে, এমনটি প্রত্যাশা করেন না উল্লেখ করে গুতেরেস বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে জোরালো আওয়াজ তুলব। কারণ, সম্মানের সঙ্গে এখানে বসবাসের জন্য এই সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি।’
উল্লেখ্য, চার দিনের সফরে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার আগে আজ দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ লাখের বেশি। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০-৭০ হাজার রোহিঙ্গা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র কবর শরণ র থ আপন দ র অন র র আম দ র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
আজ টিভিতে যা দেখবেন (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫)
এশিয়া কাপে আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। চ্যাম্পিয়নস লিগে মাঠে নামবে ম্যানচেস্টার সিটি, নাপোলি, বার্সেলোনা।
সিপিএল: কোয়ালিফায়ার-১ গায়ানা-সেন্ট লুসিয়া
সকাল ৬টা, স্টার স্পোর্টস ২
আফগানিস্তান-শ্রীলঙ্কা
রাত ৮-৩০ মি., টি স্পোর্টস ও নাগরিক
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ
বেলা ৩টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১
কোপেনহেগেন-লেভারকুসেন
রাত ১০-৪৫ মি., সনি স্পোর্টস ২
ম্যানচেস্টার সিটি-নাপোলি
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ১
নিউক্যাসল-বার্সেলোনা
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ২
ফ্রাঙ্কফুর্ট-গালাতাসারাই
রাত ১টা, সনি স্পোর্টস ৫