রাখাইনে সহায়তা পাঠাতে ঢাকার অনুমোদন লাগবে
Published: 16th, March 2025 GMT
রোহিঙ্গাদের আবাসভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে চলছে যুদ্ধপরিস্থিতি। সেখানে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরিতে প্রথমে দরকার সহিংসতা বন্ধ করা। এর পর মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পথে সমাধান বের করা। আর বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মানবিক সহায়তা রাখাইনে পৌঁছাতে ঢাকার অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সফরের শেষ দিনে গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.
রাখাইনের দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রভাব সাংবাদিকের প্রশ্নে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বর্তমানে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন। এ সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। শুধু বাংলাদেশ নয়, প্রতিবেশী সব দেশকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সহিংসতা বন্ধ এবং একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ তৈরি হয়।
তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ হলে সংলাপের মাধ্যমে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সমাধানের পথ বের হবে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম হবে। একই সময়ে মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করতে হবে, যেন শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের জন্য যথাযথ পরিবেশ তৈরি হয়। এ জন্য আমাদের আলোচনায় বাংলাদেশ থেকে মানবিক সহায়তা পাঠানোর সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয়েছে। তবে এটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাইলে গুতেরেস বলেন, নিষেধাজ্ঞা একটি সম্ভাব্য ব্যবস্থা। তবে মিয়ানমারের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করানো কঠিন হতে পারে। নিষেধাজ্ঞা সম্ভব না হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে লড়াই বন্ধ ও গণতন্ত্রের পথ সুগমে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
ব্রিফিংয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কোনো নিশ্চয়তা পেয়েছেন কিনা– প্রশ্নে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চাই তারা (রোহিঙ্গা) সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত যাক। বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিব আমাদের বলেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ আমাদের সহায়তা দিয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সীমান্তের ওপারে রয়েছে। আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ, এখানে আমি রোহিঙ্গা কর্তৃপক্ষ বলছি না। কারণ আমরা জানি, রাখাইনে নতুন শক্তির উদয় হয়েছে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে। আমরাও চাপ তৈরি করতে চাইছি, যাতে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরত যেতে পারে।’
রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব কোনো অনুরোধ করেছেন কিনা প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন এটি নিয়ে আলাপ চলছে। বিষয়টি অপারেশনাল এবং আমরা আলোচনা করব।’ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত আনার জন্য জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশ ঘিরে ভুল তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর এ সফর ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচার এবং বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টার পাল্টা জবাব। গুতেরেসের সমর্থনের আশ্বাস আমাদের সংস্কার প্রক্রিয়ায় সাফল্য ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা করবেন এবং এ দেশের জনগণের পাশে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
আন্তোনিও গুতেরেস জানান, তিনি জাতীয় অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বাংলাদেশে এসে বিশেষভাবে আনন্দিত। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বৃহৎ পরিসরে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য জনগণের আশাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে জাতিসংঘ। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। একটি ন্যায়সংগত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ভূমিকা রাখতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমি আশ্বস্ত করছি, জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও নিরাময়ে সহায়তা করতে প্রস্তুত। সবার জন্য টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করবে। এ দেশের মানুষ তাদের অবিচল অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর আমি একটি সংহতি সফর করি এবং কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সময় কাটাই। তাদের সঙ্গে রোজা পালন করি এবং তাদের দুর্দশার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী সামনে নিয়ে আসতে সহায়তা করি। এ বছর আমি রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আতিথ্যদানকারী বাংলাদেশিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে এ দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিই। আপনার সঙ্গে রোজা রাখা ও ইফতার করা আপনার ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধার প্রমাণ। শুক্রবার আমি কক্সবাজারে অত্যন্ত চমকপ্রদ সফর করেছি।
গুতেরেস বলেন, রমজান আমাদের বিশ্বজনীন মূল্যবোধের কথা মনে করিয়ে দেয়, যা মানবতাকে সংযুক্ত করে: সহানুভূতি ও উদারতা। শান্তি, উন্নয়ন এবং মানবিক ত্রাণের প্রতি আপনার অঙ্গীকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ মূল্যবোধের একটি জীবন্ত প্রতীক। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় সবচেয়ে অবদানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানি, সেখানে (মিয়ানমার) পরিস্থিতির অবনতি ক্রমশ বাড়ছে। রাখাইনসহ মিয়ানমারজুড়ে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ফলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে এবং অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত পেরিয়ে বাস্তুচ্যুতি ঘটছে। আমি মিয়ানমারের সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সহিংসতায় উস্কানি রোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আরও বলেন, আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি দায়িত্ব গ্রহণ এবং শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়– উভয়ের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ করে যাব। আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। আর্থিক সহায়তায় কাটছাঁটের ঘোষণায় এ বছর আমাদের সামনে নাটকীয় ঝুঁকি রয়েছে। ভয়াবহ পরিণতির শুরুই হবে খাদ্য রেশনের তীব্র হ্রাস দিয়ে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র খ ইন পর স থ ত উপদ ষ ট শরণ র থ জনগণ র র জন য আম দ র সহ য ত র খ ইন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এবি পার্টির চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মজিবুর রহমান বলেছেন, ‘সংবিধান পরিবর্তন, সংস্কার, সংশোধন, নতুন করে লেখা বা বাতিলের চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের। আমরা ঐক্যবদ্ধ মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরি করেছি, হয়তো কয়েকটি বিষয়ে কারও কারও “নোট অব ডিসেন্ট” (দ্বিমত) আছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনটা হবে, তা নির্ধারণের মূল ক্ষমতা জনগণের।’
কমিশনের আজকের প্রস্তাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ নম্বর অনুচ্ছেদকে রেফারেন্স আকারে উল্লেখ করায় কোনো কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতা জুলাই ঘোষণাপত্রের বৈধতা নিয়ে মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যাঁরা আজ প্রশ্ন তুলছেন, কাল তাঁরা সংসদে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করবেন এবং এই সনদকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, সংবিধানে এটা নেই, ওটা নেই বলে সংবিধান সংস্কার করা যাবে না—এই ধারণা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাপরিপন্থী। রাজনৈতিক দলগুলো যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান থেকে নমনীয় না হয়, তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পুরো প্রচেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়বে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে এবি পার্টির এই নেতা বলেন, এমন পরিস্থিতি জাতিকে এক গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। সুতরাং জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি; অন্যথায় গণভোট ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুনবর্ধিত মেয়াদের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ৪ ঘণ্টা আগে