কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে ভাঙচুর
Published: 17th, March 2025 GMT
কুমিল্লা নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ ইমরান হোসেন নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা।
রবিবার (১৬ মার্চ) রাত ১০ টায় কুমিল্লা নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকার ট্রমা সেন্টার নামের একটি হাসপাতালে এ মৃত্যু ঘটে।
ইমরান হোসেন নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার হুমায়ুন কবিরের ছেলে।
এ ঘটনায় হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে রোগীর বিক্ষুব্ধ স্বজনরা। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে ইমরানের মা নাজমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, বুকের অসুখ জনিত কারণে গত ১৫ দিন আগে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ইমরান হোসেন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিল। গত বুধবার তার অপারেশনের জন্য পুনরায় তাকে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক আতাউর রহমান গত শনিবার ইমরান হোসেনের অপারেশন করেন।
নাজমা বেগমের অভিযোগ, ‘ভুল চিকিৎসার’ কারণে রবিবার বিকেলের দিকে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা অবস্থায় ইমরান হোসেন মারা যান।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, ইমরান আইসিইউতে মারা যাওয়ার পরও সে জীবিত আছে বলে দুইবার প্রায় ২৭ হাজার টাকার ওষুধ নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর মৃত্যুর পরও দেখতে না দিয়ে রোগী বেঁচে আছে বলে জানিয়ে আরও প্রায় তিন লাখ টাকার বিল হাতিয়ে নেয়।
এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিহতের পরিবারের সাথে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদল নেতা ফখরুল ইসলান মিঠু কুমিল্লা মহানগর ড্যাবের এক নেতারা মাধ্যমে চার লক্ষ টাকায় সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালে একটি গোপনকক্ষে এই সমঝোতা হয়। সমঝোতাপত্রে অভিযুক্ত দুই নেতা স্বাক্ষরসহ একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এ বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর ছাত্রদল নেতা ফখরুল ইসলান মিঠু সমঝোতার খবরটি অস্বীকার করেছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাউকে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মহিনুল ইসলাম জানান, ভাঙচুরের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঢাকা/রুবেল/টিপু
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইমর ন হ স ন সমঝ ত
এছাড়াও পড়ুন:
১ জন ডাক্তারে চলছে হাসপাতাল!
দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে বাড়তি সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকমে চলছে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ।
এদিকে, চিকিৎসক সঙ্কটে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের দাবি তাদের।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর, তিনটি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে কর্মরত রয়েছে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকসহ কলাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল এই কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল।
বছরের অধিকাংশ সময়ে রোগীতে ভরা থাকে হাসাপাতালটি। অনেক সময় ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে রোগীরা চিকিৎসা নেয় হাসপাতালের মেঝে কিংবা করিডোরে। অথচ এ হাসাপতালে চিকিৎসকের ৩৬টি পদের মধ্যে ২৭টি পদই শূন্য। বাকি ৯ জনের মধ্যে দুজন ঢাকায় সংযুক্তিতে, দুজন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ও একজন রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।
বর্তমানে মাত্র চার জন চিকিৎসক রয়েছেন এ হাসপাতালে। এর মধ্যে উপেজলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় দাপ্তরিক কাজে। এছাড়া দুজন রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে। এরমধ্যে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অপরজন গাইনি ও অবস বিশেষজ্ঞ। যাদের কাজ শুধুমাত্র রেফার অর্থাৎ জটিল রোগের শিশু এবং গাইনি বিষয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া। এছাড়া শুধুমাত্র একজন রয়েছেন মেডিকেল অফিসার। যার আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা।
সীমবদ্ধার মধ্যে এই চার চিকিৎসক সময় ভাগ করেই চালাচ্ছেন পুরো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চার চিকিৎসকই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
এদিকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা।
কলাপাড়া হাসাপতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মুরাদ হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে জ্বর ও শাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। আজ সকালে শুধু একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছে। এখানে ডাক্তারের সংকট থাকার কারণে আমরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছি না।”
শিশু ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী জুবাইদার (৫ মাস) নানি হোসনেয়ারা বলেন, “এখানে শুধু একজন শিশু রোগের চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি এতো শিশু রোগীর কীভাবে সেবা দিবেন? নার্সরা তো সব বোঝে না। এখানে নাতীকে ভর্তি করানোর পর আমাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেশ কয়েকবার ডাক্তারের পার্সোনাল চেম্বারে গিয়ে ওষুধ লিখে নিয়ে আসতে হয়েছে। আমরা এ হাসপাতালের চিকিৎসক সঙ্কটের সমাধান চাই।”
কলাপাড়া হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) ডা. শরীফ শায়লা ইসলাম বলেন, “আমাদের এখানে প্রচুর চিকিৎসক সংকট। যার কারণে অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। শরীরে জ্বর উঠেছে। আপনাদের আসার খবর পেয়ে ওষুধ খেয়ে জ্বর কমিয়ে এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। আসলে এভাবে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।”
অপর জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) ডা. কামরুননাহার মিলি বলেন, “আমাদের তো আসলে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা না। তারপরও সঙ্কটের কারণে দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দিক বিবেচনা করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক সঙ্কট সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতো সঙ্কটে আসলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুনায়েদ হোসেন লেলিন বলেন, “চিকিৎসক সঙ্কটের ব্যাপারে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে- এমনকি চিঠি দিয়েও এর সুরাহা পাইনি।”
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “শুধু কলাপাড়া নয়, পুরো জেলা জুড়েই চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস