বিদ্যালয়ে দুপুরের খাবার পাবে দেশের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী। ২০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এপ্রিলেই এ কর্মসূচি চালু হচ্ছে। খাবারের তালিকায় থাকবে উচ্চ পুষ্টিমানের বিস্কুট, বান, পাস্তুরিত দুধ, স্থানীয় মৌসুমি ফল ও ডিম। খাবারের পেছনে শিক্ষার্থীপ্রতি খরচ হবে ১৩০ টাকা। কার্যক্রমের শৃঙ্খলা রক্ষায় উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি কাজ করবে। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীকে উৎসাহ, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি বাড়ানো, অপুষ্টির ঘাটতি কমানো এবং সফলভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হতে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। 
‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি’ নামে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। কোনো বিদেশি ঋণ কিংবা অনুদান ছাড়াই নিজস্ব জোগান থেকে খরচ মেটাবে সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ রোববার অনুষ্ঠেয় একনেক বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। প্রকল্পটিসহ মোট ১৫টি প্রকল্প উঠছে আজকের একনেক সভায়। 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো.

শামসুজ্জামান মনে করেন, প্রকল্পটি দেশের শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। সে বিবেচনা থেকে সরকার দুপুরের খাবারের প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। গতকাল শনিবার তিনি সমকালকে আরও বলেন, দারিদ্র্যের কারণে কিংবা অসচেতনতায় অনেক শিক্ষার্থী না খেয়ে স্কুলে আসে। যারা খেয়ে আসে, তাদেরও ক্লাসে একটা পর্যায়ে ক্ষুধা লাগে। এ রকম অবস্থায় স্কুলের পড়ালেখায় শিশুদের মন বসে না।  ক্লাসের ফাঁকে স্কুলে খাবার পেলে এ সমস্যা থাকবে না। উন্নত বিশ্বে এ নীতিই অনুসরণ করা হয়। আমরা শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চাই। 
৬২ জেলার ১৫০ উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মসূচিটি চলবে। এ উপজেলার মধ্যে ৯১ শতাংশ, অর্থাৎ ১৩৫ উপজেলা অতি উচ্চ এবং উচ্চ দারিদ্র্যপ্রবণ। বাকি ১৪টি, অর্থাৎ ৯ শতাংশ উপজেলা নিম্ন দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা। গত বছর প্রকাশিত খানা আয়-ব্যয় জরিপ প্রতিবেদনের পভার্টি ম্যাপিংয়ের ভিত্তিতে দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে। 

ডেভেলপমেন্ট রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট নামে তৃতীয় পক্ষীয় একটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাই করে। তিন বছর মেয়াদের প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৭ সালের ডিসেম্বরে। চলতি অর্থবছর  প্রকল্পে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। বড় ব্যয় হবে আগামী অর্থবছরে যা ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। ২০২৬-২৭ অর্থবছর ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকা । ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ১৯০ কোটি টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ডিপিপিতে। 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কমিশনের সংশ্লিষ্ট আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের শিক্ষা অনুবিভাগ প্রকল্পটির ডিপিপি পর্যালোচনা করেছে। এ-বিষয়ক প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) বৈঠকে প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে ১১৮ কোটি টাকা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে পুনর্গঠিত ডিপিপির ওপর ৭ জানুয়ারি পিইসির চূড়ান্ত বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। এর ভিত্তিতে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, প্রকল্পটির মাধ্যমে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করা, ঝরে পড়া রোধ, শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির হার বাড়ানো, পড়ালেখায় মনোযোগ ধরে রাখাসহ সার্বিকভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন হবে। 
স্কুল মিল কর্মসূচির গুরুত্ব ও ফলাফল বিবেচনায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ২০০১ সালে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরু হয়।  ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলে। ওই বছর থেকে দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং নামে আলাদা একটি কর্মসূচি চালু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার আগেই ২০২১ সালে প্রায় একই রকম আরও একটি প্রকল্প প্রস্তাব গণমাধ্যমে সমালোচনার মুখে একনেক থেকে ফেরত দেওয়া হয়। কক্সবাজার ও বান্দরবানে  অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় স্কুল ফিডিং কার্যক্রম ছাড়া প্রায় তিন বছর ধরে এ ধরনের কোনো কর্মসূচি দেশে চালু নেই।  


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ত ব প রকল প একন ক উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ বছরে বাড়বে ৬৫ শতাংশ
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির
  • বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
  • কমপ্লায়েন্সের অভাবে ধুঁকছে চামড়া খাতের রপ্তানি
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ