রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার আসামি প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা
Published: 26th, March 2025 GMT
রাজশাহীতে গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার প্রয়াত আবদুল মান্নানকে আসামি করা হয়েছে। গত রোববার নগরের বোয়ালিয়া থানায় আবদুল আলীম দুলাল নামের এক তরুণ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার ১ নম্বর আসামি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বাদশার ছেলে রুয়েট কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান দীপনকে। আবদুল মান্নান মামলার ৫৮ নম্বর আসামি। এতে ১২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী আবদুল আলীম (২২) নগরের রাজপাড়া থানার মোল্লাপাড়া মহল্লার মুশারফ হোসেনের ছেলে। আলীম জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কর্মী। আর তাঁর ভাই শফিকুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। এজাহারে বলা হয়েছে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আবদুল আলীম নগরের আলুপট্টি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তাঁর বাড়ি রাজশাহী নগরের রানীনগর এলাকায়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। গত ১৭ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরদিন রাজশাহীর টিকাপাড়া গোরস্তানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার ব্যাপারে জানতে বাদী আবদুল আলীমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় ফোন ধরেন তাঁর বড় ভাই শফিকুল ইসলাম। শফিকুল বলেন, তিনি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। আর তাঁর ভাই আবদুল আলীম শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সমর্থক। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সময় আলীম গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। সংগঠনের তদারকিতে মামলা করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার ব্যাপারে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মুরব্বিরা সবকিছু করেছেন। কোনো বিষয়ে কথা বলার থাকলে মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
যোগাযোগ করা হলে জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, ‘মামলা সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। আমাকে আগে খোঁজ নিতে হবে। আগে খোঁজ নিই, তারপরে এ বিষয়ে বলতে পারব।’
এ সম্পর্কে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘আসামির তালিকায় মৃত ব্যক্তি আছেন কি না, তা আমার জানা নেই। এটা খোঁজ নিতে হবে। যদি এ রকম হয় তাহলে আমরা যাচাই করব। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সময় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’
রাজশাহী মহানগর জামায়াতের মিডিয়া ও প্রেস সেক্রেটারি ইমন আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি জামায়াতের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে হয়নি। বিষয়টি তাঁরও আর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মারা গেছেন, সেটি তিনিও জানেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন আবদ ল আল ম নগর র হ নগর ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
গানের ভুবনে লিজার অন্তহীন পথচলা
শীর্ষ তারকা হওয়ার দৌড়ে কখনও অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁকে। যদিও ২০০৮ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় সেরা শিল্পীর মুকুট মাথায় উঠেছিল, তবু ধীরলয়ে পথ হেঁটে গেছেন। নিজের কাজে অতিমাত্রার উচ্ছ্বাসও দেখাননি কখনও। নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন সবসময়। গানে গানে কুড়িয়ে চলেছেন শ্রোতার ভালোবাসা। এ কারণে সমসাময়িকদের চেয়ে আলাদা করে তাঁকে চিনে নেওয়া যায়। বলছি, কণ্ঠশিল্পী সানিয়া সুলতানা লিজার কথা। গানের ভুবনে অন্তহীন পথচলায় যিনি এরই মধ্যে পেরিয়ে এসেছেন প্রায় দেড় যুগের পথ। সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার রহস্যটা কী? শুরুতে যখন এ প্রশ্ন লিজার সামনে তুলে আনা হলো, তখন দেখা গেল, লিজা নিজেই এর উত্তর খুঁজতে বসে গেছেন। এ পর্যায়ে হেসে বললেন, ‘না, এর উত্তর সত্যি জানা নেই। আসলে আমি তো গান গাই শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ আর ভালোবাসা কুড়ানোর জন্য। হ্যাঁ, শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখতে গানের চর্চা ধরে রেখেছি বললে ভুল হবে না। তারপরও প্রতিটি আয়োজনে শ্রোতার ভালোলাগা, মন্দলাগাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এতে করে কতটুকু জনপ্রিয়তা পেয়েছি। সেই জনপ্রিয়তা শুরু থেকে একই রকম আছে কিনা– সেটি তো শ্রোতারা ভালো বলতে পারবেন।’ লিজার এ কথা থেকে বোঝা যায়, যাদের কারণে শিল্পীজীবন বেছে নেওয়া, সেই শ্রোতা তাঁর দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেখানে তাঁর গানগুলো ছিল চালিকাশক্তি। তবে ১৭ বছরের সংগীতের এ পথচলায় লিজার কণ্ঠে মেলোডি গান বেশি শুনতে পাওয়া গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দেড় যুগে নানা ধরনের গান গেয়েছি, তবু কেন জানি শ্রোতারা আমাকে মেলোডি গানের শিল্পীদের দলে রেখে দিয়েছেন। অস্বীকার করব না যে, আমার কণ্ঠে যে ধরনের গান ভক্তরা বেশি শুনতে চান, সে ধরনের গান বেশি গাই। এটিও ঠিক যে, মেলো কিংবা স্যাড-রোমান্টিক গানের প্রতি শ্রোতার ভালোলাগা সবসময় ছিল। এখনও অনেকে মেলোডি ছাড়া গানের কথা ভাবতে পারেন না। এজন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজ করলেও আমি চাই না মেলোডি থেকে কখনও দূরে সরে থাকতে। তাই মেলোডি গান যেমন গাইছি, তেমনি গানের নিরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছি।’ লিজার এ কথা যে মিথ্যা নয়, তা সর্বশেষ প্রকাশিত গানগুলোর শুনলে প্রমাণ মেলে। ক’দিন আগে বিটিভির ‘বৈঠকখানা’ অনুষ্ঠানে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিনের সঙ্গে গাওয়া ‘তোমার নামে’ গানে যে লিজাকে শ্রোতা আবিষ্কার করবেন, তার সঙ্গে মেলানো কঠিন হবে সামজ ও রিজানের সঙ্গে ‘তিতা কথা’ গানের লিজাকে। আরেকটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ‘খুব প্রিয় আমার’, ‘তুমি এলে’, ‘পূর্ণিমা চাঁদ’ গানগুলোয় লিজা অতীতের গায়কীকে ছাপিয়ে কীভাবে আরও নতুন হয়ে নিজ কণ্ঠ তুলে এনেছেন।
মাঝে কিংবদন্তি শিল্পীদের বেশ কিছু কালজয়ী গানের রিমেকে কণ্ঠ দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন সংগীতবোদ্ধাদের। স্টেজ শো, রেডিও, টিভির আয়োজন থেমে শুরু করে সিনেমার প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি অন্যদের চেয়ে কোনোভাবে পিছিয়ে নন। এককথায়, বহমান সময়টিকে সুরেলা করে রেখেছেন অনিন্দ্য কণ্ঠ জাদুতে।
আগামীতেও লিজার কণ্ঠ বাতাসে ভেসে বেড়াবে– এ অনুমান করা যায়।