ছেলে হারানোর শোকের ওপর ঋণ শোধের চাপ
Published: 27th, March 2025 GMT
পরিবারের সবাই মিলে হৈহুল্লোড় ও আনন্দ করে গত বছর ঈদ উদযাপন করেছিলেন সাংবাদিক মেহেদি হাসান। এ বছর তিনি আর নেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় পরিবারে নেমে এসেছে অর্থকষ্ট। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে নতুন ঘর তোলার সময় নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ। সংসারের খরচ ও ঋণের কিস্তি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মেহেদির অসুস্থ বাবা মোশারফ হোসেন হাওলাদার (৬৫)। এখন তাঁর কাছে ঈদের আনন্দ বলে কিছু নেই।
গত বছরের ১৮ জুলাই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত হন দৈনিক ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদি হাসান। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের ধুলিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামে। মেহেদি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসবাস করতেন। মোশারফ হোসেন ঢাকার দৈনিক আলোর জগতের ক্রাইম রিপোর্টার ছিলেন। হার্টে রিং পরানো মোশারফ পাঁচ-ছয় বছর ধরে কোনো কাজ করতে পারেন না। ছোট ছেলে মেজবা উদ্দিন কাইফ স্থানীয় ধুলিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
মোশারফ হোসেন জানান, মেহেদি ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকলেও বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সব খরচ চালাতেন। মেজ ছেলে জাহিদ হাসান ঢাকায় থাকলেও পরিবারের কারও খোঁজ নেন না। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত বছর ঈদের আগে গ্রামে এসে গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, উদ্দীপন ও কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নতুন ঘর তুলে দেয় মেহেদি। কিন্তু এখন কে আমার ওষুধ কিনে দেবে আর ঋণের কিস্তিইবা কে দেবে? রমজানে খাওয়া-দাওয়া নিয়েই কষ্ট হয়, আবার ঈদ। এর মধ্যে গ্রামীণ, আশা ও কৃষি ব্যাংক থেকে কিস্তির টাকার জন্য নোটিশ দিয়েছে। বারবার বাড়িতে আসে। এখন মনে হয় কোথাও পালিয়ে যাই– বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মোশারফ।
পরে তিনি জানান, গ্রামীণ ব্যাংকে স্ত্রীর নামে প্রায় দেড় লাখ টাকা, কৃষি ব্যাংকে তাঁর নামে দেড় লাখ টাকা, আশায় স্ত্রীর নামে ৮০ হাজার এবং উদ্দীপনে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে।
উদ্দীপনের কালিশুরি শাখা ব্যবস্থাপক উজ্জ্বল দাস বলেন, এখনও ৪২ হাজার ৭৬৯ টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা তো আর বেতনের টাকা দিয়ে কিস্তি দেব না। তাদের সময় দিয়েছি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঋণ
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে বিবাহবিচ্ছেদের চার দিনের মাথায় লাউখেত থেকে নারীর লাশ উদ্ধার
পঞ্চগড়ে স্বামীর মৃত্যুর দুই বছর পর সন্তানদের রেখে গোপনে বিয়ে করে ঘর ছেড়েছিলেন এক নারী। দ্বিতীয় বিয়ের প্রায় এক মাস পর বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁদের। এ ঘটনার চার দিনের মাথায় বাড়ির পাশের লাউখেত থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আজ সোমবার দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের ধামোর মধ্যপাড়া এলাকার একটি লাউখেত থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর নাম তানজিনা আক্তার (৩৫)। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানজিনার দ্বিতীয় স্বামী মিনাল হোসেনের বাবা দিলু হোসেনকে (৫৫) হেফাজতে নিয়েছে আটোয়ারী থানার পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তানজিনা আক্তারের প্রথম স্বামী মজিবর রহমান প্রায় দুই বছর আগে মারা যান। তাঁদের দুটি ছেলে আছে। এর মধ্যে প্রায় এক মাস আগে স্থানীয় যুবক মিনাল হোসেনকে (২৭) গোপনে বিয়ে করে পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। এর পর থেকেই মিনালকে ছেড়ে দিতে তানজিনার ওপর চাপ দিতে থাকে মিনালের পরিবার। গত ৩০ অক্টোবর তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই মিনালকে এলাকায় দেখা যায়নি।
পুলিশ জানায়, আজ সকালে ধামোর-মধ্যপাড়া এলাকার একটি লাউখেতে কয়েকজন লাউ তুলতে গিয়ে এক নারীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান। এ সময় স্বজনেরা সেখানে গিয়ে লাশটি তানজিনার বলে শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে বারঘাটি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র ও আটোয়ারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। প্রাথমিক সুরতহাল শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সরকার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক সুরতহালে ওই নারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ জানতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।