জলাশয় শুকিয়ে পানি সংকট বিপাকে বোরো চাষিরা
Published: 27th, March 2025 GMT
বোরো ক্ষেতে থোড়ধান। এ সময় সেচের প্রয়োজন বেশি। পরিমিত সেচ দিতে না পারলে ধানে বেশি চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেছে প্রায়। এই পরিস্থিতিতে সেচ সংকটে পড়েছেন বোরো চাষিরা।
পানি সংকটের কারণে বোরো ক্ষেতে সময়মতো সেচ দিতে পারছেন না বাঞ্ছারামপুর উপজেলার চাষিরা। পলি পড়ে ভরাট হয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে জলাশয়গুলো। এই এলাকা কৃষিনির্ভর হলেও জলাশয়গুলোতে পানি সংকটের কারণে অনেক সময় বৃষ্টির ও জোয়ারের ওপর নির্ভর করে সেচ কাজ চালাতে হচ্ছে এলাকার কৃষকের। জলাশয়গুলো ভরাটের কারণে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কর্মহীন কৃষক মাঠে অক্লান্ত শ্রম দিয়েও তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না, চৈত্র-বৈশাখ মাসে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাশয়গুলোর আশপাশের বোরো জমি পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ২০ একরের ঊর্ধ্বে ১২টি জলাশয় ভূমি অফিসের তালিকাভুক্ত। আর ২০ একরের মধ্যে জলাশয় রয়েছে ১৭টি। প্রশাসন থেকে এগুলো ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় এসব জলাশয় পলিমাটি পড়ে ভরাট হতে চলেছে। এসব জলাশয় শুকিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থা হয়েছে। জলাশয়গুলোর ওপর নির্ভরশীল চার হাজার হেক্টর জমি থাকলেও পানি সংকটের কারণে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। বিশেষ করে বালিয়াদহ, গালাচিপা, চন্দনবিল, ডেপারবিল, জয়কালীপুর গ্রুপ ফিশারিজ, মানিকপুর গ্রুপ ফিশারিজ, সাতবিলা বিল এলাকায় সেচ সংকট তীব্র আকার ধারণ করে বোরো মৌসুমে। দীর্ঘদিন ধরে জলাশয় খনন না করার কারণে পানি সংকট তীব্র আকার ধারণ করছে। ফলে কৃষক সেচের পানির জন্য গভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। বৃষ্টি ও জোয়ারের ওপর নির্ভর করে বোরো ক্ষেতে সেচকাজ চালাতে হচ্ছে অনেকের। জমিতে সময়মতো সেচ দিতে না পারায় কাঙ্ক্ষিত ফলন ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক।
চাষিরা জানান, থোড়ধানে পরিমিত সেচ দরকার। এখন পানি সংকটে সেচ দিতে পারছেন না। এই সময় ঠিকমতো সেচ দিতে না পারলে ধান বেশি চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ঝুনারচর গ্রামের কৃষক কবির হোসেন জানান, পানি সংকটের কারণে বিলের আশপাশের বোরো ক্ষেতে সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিলে পানি না থাকায় জমিতে ঠিকমতো সেচ দিতে পারছেন না। কিন্তু যখন ধান কাটার সময়, তখন বৃষ্টির পানি এসে সব তলিয়ে যায়।
হায়দরনগর গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বিলে পানি না থাকায় ১ হাজার বিঘা জমিতে বোরো চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। বিলটি খনন করলে এই এলাকার কয়েক হাজার একর জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হবে।’
রুপসদী গ্রামের ব্লক ম্যানেজার সালে আহমেদ জানান, বৃষ্টির ও জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হয় জমিতে সেচ দিতে। বিলে পানি থাকে না ঠিকভাবে। তাই ভরা মৌসুমে জমিতে পানি দিতে পারেন না তারা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য– ফরদাবাদ, রুপসদী, ছলিমাবাদেরসহ বিভিন্ন বিলে শুকিয়ে গেছে প্রায়। পানি সংকটের কারণে সময়মতো জমিতে সেচ দিতে পারছেন না কৃষক। এতে আশানুরূপ ফলন পান না। জরুরি ভিত্তিতে জলাশয়গুলো খনন করা দরকার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসী আরা জানান, পলিমাটি পড়ে ভরাট হওয়া জলাশয়গুলো খননের জন্য তাদের কাছে কোনো প্রস্তাব চাওয়া হয়নি। খননের জন্য যখনই তালিকা চাওয়া হবে তখনই জলাশয়ের তালিকা পাঠানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা
জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।
এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।
আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?
উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’
আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।