তিস্তা নদীর সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পে (টিআরসিএমআরপি) অংশ নিতে চীনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ। বেইজিং সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ আমন্ত্রণ জানান।
চার দিনের সরকারি সফরে চীনে অবস্থান করছেন ড. ইউনূস। গতকাল শুক্রবার বেইজিংয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পানি প্রবাহের পূর্বাভাস, বন্যা প্রতিরোধ ও দুর্যোগ হ্রাস, নদী খনন, পানি ব্যবস্থাপনা, পানিসম্পদ উন্নয়ন এবং এ-সংক্রান্ত প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। ইয়ারলুং সাংপো (ব্রহ্মপুত্র) ও যমুনা নদীর পানি প্রবাহ-সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়ে উভয় পক্ষ ইতিবাচক।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সমন্বিত প্রচেষ্টায় একমত। সামুদ্রিক বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করতে এবং উপযুক্ত সময়ে এ বিষয়ে সংলাপ করতে চায় উভয় দেশ।
৫০ বছরের মহাপরিকল্পনার আহ্বান
চলমান চীন সফরে কয়েকশ নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য চীনের কাছ থেকে ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বেইজিংয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে চীনের পানিসম্পদ মন্ত্রী লি গোইয়িংয়ের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি এ আহ্বান জানান।
ড.
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ অঞ্চল। আমাদের দেশ কয়েকশ নদী দিয়ে ঘেরা। পানি আমাদের জীবন দেয়, তবে কখনও কখনও শত্রুতে পরিণত হয়। জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেন পরিবেশের ক্ষতি না হয়।’
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নয়নের চাহিদার ফলে নদীতীরের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, একই অবস্থা ভারতের উজান অঞ্চলে বেড়েছে। এ ছাড়া পলি জমে নদীর মাঝে চর জাগছে। এটা কখনও কখনও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এবং নদীর মৃত্যু ঘটায়।
চীনের পানিসম্পদ মন্ত্রী স্বীকার করেন, চীন ও বাংলাদেশ পানি ব্যবস্থাপনায় একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। তিনি বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
যে কারণে এ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা
বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন নদী তিস্তা। বাংলাদেশ অংশে পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত একটি প্রকল্প নিয়ে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছিল। একসময় এর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে টানাপোড়েন ছিল। পরে এর ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। পানির ন্যায্য হিস্যা না পেয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নদী ব্যবস্থাপনা নিয়ে চীনের সহযোগিতা চায়। এতে আপত্তি তোলে ভারত। তারা এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ দেখায়। প্রকল্পটিতে শুধু পানি ভাগাভাগি বা ব্যবস্থাপনা নয়, এর সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যু বড় করে দেখছে।
দিল্লি থেকে সমাধান না পেয়ে যতটুকু পানি পাওয়া যাচ্ছে, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার ও সংরক্ষণে মনোযোগ দেয় ঢাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরে দুই দেশের নদী ব্যবস্থাপনা সহযোগিতার বিষয়ে একমত হয় উভয় দেশ।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের মে মাসে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনাবিষয়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রাথমিক প্রস্তাব (পিডিপিপি) প্রস্তুত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এর আনুষ্ঠানিক শিরোনাম টিআরসিএমআরপি। ২০১৯ সালের ৩ জুন পাউবো মহাপরিচালকের সই করা প্রস্তাবটি ২০২০ সালের ২৩ জুলাই পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, পাওয়ার চায়না প্রস্তাবিত টিআরসিএমআরপি বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার পর থেকে মূলত ভারতের দিক থেকে আপত্তি ওঠে।
নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে দরকষাকষি কয়েক দশক ধরে চলছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের দিকে এগোচ্ছিল। তখন তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়। তবে চুক্তি সইয়ে ব্যর্থ হয় ভারত। এর পর এক দশক পানি নিয়ে দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক করতে দেয়নি ভারত।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব প রকল প সহয গ ত আম দ র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
গান নিয়েই আমার সব ভাবনা
কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–
‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী?
শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?
সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি।
প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য?
হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।
প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন?
আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি।
গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে?
সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।