মিয়ানমারে গতকাল শুক্রবার দুপুরে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছিল প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও। ভূমিকম্পের কাঁপুনি বাংলাদেশ, ভারত, কম্বোডিয়া ও চীন পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে।

ভূমিকম্পে বেশির ভাগ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী মান্দালয়ে। সেখানে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে এবং অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। মান্দালয়ের অবস্থান ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইংয়ের কাছাকাছি ছিল বলেই সেখানে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, এ ভূমিকম্পে দেশটিতে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের ভূমিকম্প ঝুঁকি মূল্যায়ন অনুসারে, ১৯৩০ সালে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বাগো ভয়াবহ ভূমিকম্পের শিকার হয়েছিল। ৭ দশমিক ৩ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ৫৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর পর থেকে দেশটিতে বেশ কয়েকবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

প্রায় চার বছরের গৃহযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটি ভূমিকম্পের জন্য এত ঝুঁকিপূর্ণ কেন? আর সর্বশেষ ভূমিকম্পটি কতটা তীব্র মাত্রার ছিল?

মিয়ানমারের মান্দালয় ভবন ধসে পড়ে, রাজপ্রাসাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইরাবতী নদীর ওপর প্রায় শতবর্ষের পুরোনো আভা সেতু ধসে পড়ে। মিয়ানমারের বর্তমান রাজধানী নেপিডো এবং সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনেও ক্ষতি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সারা দেশে কমপক্ষে ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন।

কী কারণে ভূমিকম্প হয়

প্রথমে ভূমিকম্প আসলে কী, তার একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া যাক। পৃথিবী তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো কোর, ম্যান্টল ও ক্রাস্ট। পৃথিবীর কেন্দ্রকে কোর বলা হয়। গলিত এই অংশের বেশির ভাগই ধাতব দিয়ে তৈরি। কোরের ওপরের উত্তপ্ত প্রায় কঠিন শিলার স্তর দিয়ে তৈরি ম্যান্টল। আর এর বাইরের বিশেষ আকৃতির ভূত্বককে বলা হয় ক্রাস্ট। এটি ক্রমাগত পরিবর্তনশীল টেকটোনিক প্লেট দিয়ে গঠিত।

পিচ্ছিল আবরণের ওপর বিভিন্ন গতিতে এবং বিভিন্ন দিকে এসব টেকটোনিক প্লেটের চলাচলের কারণে শক্তি তৈরি করে। টেকটোনিক প্লেটগুলো একটির ওপর থেকে আরেকটি সরে গেলে পুঞ্জীভূত শক্তি নির্গত হয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠে কম্পন অনুভূত হয়, যাকে আমরা ভূমিকম্প বলি। যখন এই শক্তি সমুদ্রের নিচে নির্গত হয়, তখন এটি একের পর এক দৈত্যাকার তরঙ্গ তৈরি করে, যাকে আমরা সুনামি বলে জানি।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) ভূকম্পনবিদ উইল ইয়েকের মতে, ভূমিকম্পের মূল ধাক্কার কারণে পৃথিবীর চাপের যে পরিবর্তন হয়, তার কারণে আফটার শক বা পরাঘাত হয়।

মিয়ানমারের ভূপৃষ্ঠের নিচে কী আছে

দুটি টেকটোনিক প্লেট—ভারত ও ইউরেশিয়া প্লেটের মধ্যে মিয়ানমারের অবস্থান, যা দেশটিকে ভূমিকম্পের বিশেষ ঝুঁকিতে ফেলেছে।

এ দুটি প্লেটের মধ্যবর্তী সীমানাকে সাইগং ফল্ট বলা হয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে মিয়ানমারের মান্দালয় ও ইয়াঙ্গুনের মতো শহরগুলোর মধ্য দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার (৭৪৫ মাইল) দীর্ঘ একটি সরলরেখা হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা লাখো মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।

ইউএসজিএসের মতে, ভারত ও ইউরেশিয়া প্লেটের মধ্যে ঘর্ষণের কারণে মিয়ানমারে ভূমিকম্প হয়েছিল, যাকে ‘স্ট্রাইক-স্লিপ ফল্টিং’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

লন্ডনভিত্তিক সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারের উদ্ধৃতি দিয়ে ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনের টেকটোনিকস বিশেষজ্ঞ ড.

রেবেকা বেল দুটি প্লেটের মধ্যবর্তী সীমানাকে ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত সান আন্দ্রেয়াস ফল্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই সান আন্দ্রেয়াস ফল্টের কারণে ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের নর্থরিজে মারাত্মক ভূমিকম্প হয়েছিল।

ড. রেবেকা বেল বলেন, লম্বা ও সোজা প্রকৃতির ফল্টের অর্থ হলো ভূমিকম্প বৃহৎ এলাকাজুড়ে ফাটল তৈরি করতে পারে। আর ফল্টের ক্ষেত্র যত বড় হবে, ভূমিকম্পও তত বড় হবে।

সর্বশেষ ভূমিকম্পের তীব্রতা কত ছিল

মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা পরিমাপ করা হয়। ১৯৭০-এর দশকের বিখ্যাত রিখটার স্কেলের পরিবর্তে এ পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারে অনুভূত ৭ দশমিক ৭ তীব্রতার ভূমিকম্পকে শক্তিশালী ভূমিকম্প বলে ধরা হচ্ছে। মিয়ানমারের পাশাপাশি থাইল্যান্ডেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে নির্মাণাধীন একটি ৩৩ তলা উঁচু ভবন ধসে গেছে। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে আটজন। ধ্বংসস্তূপের নিচে কয়েক ডজন নির্মাণশ্রমিক আটকা পড়েছেন।

মিয়ানমারের মান্দালয়ে ভবন ধসে পড়ে, রাজপ্রাসাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইরাবতী নদীর ওপর প্রায় শতবর্ষের পুরোনো আভা সেতু ধসে পড়ে। মিয়ানমারের বর্তমান রাজধানী নেপিডো এবং সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গুনেও ক্ষতি হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সারা দেশে কমপক্ষে ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন।

ইউএসজিএস অনুমান করেছে, মিয়ানমারে প্রায় আট লাখ মানুষ ভয়াবহ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বসবাস করছেন। ফলে আগামী দিনগুলোতে মৃতের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কতটা ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে

ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল তুলনামূলক কম, মাত্র ১০ কিলোমিটার (ছয় মাইল) গভীরতায়।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়্যাল হলোওয়ের আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের ড. ইয়ান ওয়াটকিনসনকে উদ্ধৃত করে সায়েন্স মিডিয়া সেন্টার জানিয়েছে, অগভীর ভূমিকম্প অনেক বেশি ক্ষতি করতে পারে। কারণ, ‘গভীরতা থেকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানো পর্যন্ত ভূমিকম্পের শক্তি খুব বেশি নষ্ট হয় না।’

ক্যালিফোর্নিয়া, জাপানসহ বিশ্বের সক্রিয় ফল্টলাইন বরাবর কিছু অঞ্চলে ভূমিকম্প সহনীয় বিল্ডিং কোড তৈরি করা হলেও শুক্রবারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের অবকাঠামো অপেক্ষাকৃত কম ভূমিকম্প সহনীয় ছিল।

ওয়াটকিনসন বলেছেন, শুক্রবারের ভূমিকম্প ২০২৩ সালে দক্ষিণ তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো ক্ষয়ক্ষতি করতে পারত। বছরের পর বছর অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণের কারণে ওই ভূমিকম্পে অনেক ভবন ভেঙে পড়েছিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র র ভ ম কম প ভ ম কম প র শ ক রব র ৭ দশম ক ফল ট র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বাউবিতে কমনওয়েলথ এমবিএ, আবেদন করুন দ্রুত

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ এমবিএ/এমপিএ প্রোগ্রামে ভর্তিতে আবেদন প্রক্রিয়া চলছে। আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ১৭ জুনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এ প্রোগ্রামটি কমনওয়েলথ অব লার্নিং, ভ্যানকুভার, কানাডার সহযোগিতায় বাংলাদেশ ছাড়া আরও ১১টি দেশে চালু রয়েছে। অ্যাডমিশন সেমিস্টার ২২২-এর আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল সেন্টারে এ প্রোগ্রামের কার্যক্রম চলবে।

ভর্তির আবেদনের যোগ্যতা

১. স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট বা সমমান ডিগ্রি (কমপক্ষে বিএ, বিএসসি, বিএসএস, বিবিএ, বিকম, এমবিবিএস/ডেন্টাল, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি অ্যাগ্রিকালচার, বিএসসি নার্সিং ইত্যাদি)।

২. কমপক্ষে দুই বছরের কর্মঅভিজ্ঞতা।

৩. বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং

৪. কমনওয়েলথ এক্সিকিউটিভ এমবিএ/এমপিএ অ্যাডমিশন টেস্টে সন্তোষজনক স্কোর অর্জন করতে হবে।

আরও পড়ুনআয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনা, যেভাবে মিলবে সুযোগ১২ মার্চ ২০২৫

ভর্তির আবেদনের প্রক্রিয়া

১. ওয়েবসাইটের Apply Now বাটনে ক্লিক করে ভর্তি নির্দেশিকা পড়ে Apply Now-এ ক্লিক করতে হবে। Next button-এ সাধারণ তথ্য পূরণ করতে হবে।

২. ব্যক্তিগত তথ্যাদি আপলোড করার পর সাম্প্রতিক সময়ে তোলা একটি ছবি (৩০০×৩০০ পিক্সেল, জেপিজি ফরম্যাটে) এবং আবেদনকারীর স্ক্যান করা স্বাক্ষর (৩০০×১০০ পিক্সেল, জেপিজি ফরম্যাটে) সংযুক্ত করতে হবে।

৩. Next Button-এ ক্লিক করে শিক্ষাগত ও কর্মঅভিজ্ঞতার তথ্য যুক্ত করতে হবে। আবেদনকারীর মুঠোফোনে একটি ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড পাঠানো হবে।

৪. ইউজার আইডি, পাসওয়ার্ড ও পেমেন্ট পরিশোধ-সংক্রান্ত সব তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

আরও পড়ুনপাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর-পিএইচডির সুযোগ১৭ মার্চ ২০২৫

পরীক্ষার তারিখ ও সময়

১. আবেদনের শেষ তারিখ: ১৭ জুন ২০২৫।

২. ভর্তি পরীক্ষার তারিখ: ২০ জুন ২০২৫, বেলা ২টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট।

৩. ভর্তি পরীক্ষার স্থান: ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্র ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কেন্দ্র।

৪. পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর: সাধারণ সচেতনতা ৫০, ইংরেজি ভাষা ৫০, কোয়ান্টিটেটিভ টেকনিকস ৫০, রিজনিং ৫০, মোট ২০০ নম্বর।

৫. ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে: শুধু শুক্রবার।

বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট

আরও পড়ুনতুরস্কে বিলকেন্ট ইউনিভার্সিটির বৃত্তি, আইইএলটিএসে ৬.৫ হলে আবেদন ০৮ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুন৬০০ বৃত্তির সুযোগ গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপে, জেনে নিন বিস্তারিত২১ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে ১০
  • ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা, এখন পর্যন্ত যা জানা গেল
  • বাউবিতে কমনওয়েলথ এমবিএ, আবেদন করুন দ্রুত
  • টিভিতে দেখা যাবে ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’