বছর ঘুরে আবারও ঈদ এসেছে। চারদিকে সাজ সাজ রব। নতুন পোশাক, বাহারি খাবারের আয়োজন, হাসি-আনন্দে ভরে উঠেছে শহরগঞ্জ। এই আনন্দের ভিড়ে আমি যেন এক নিঃসঙ্গ দ্বীপের বাসিন্দা। ঈদ আসে, ঈদ যায়। আমার জীবনে ঈদের আনন্দ আর ফিরে আসে না।

স্মৃতিতে ভাসে চার বছর আগের ছবি। সময়ের হিসাবে সেটা ২০২১ সাল। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা নামক মহামারির বিষবাষ্প। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরে মাকে দেখে মনটা কেমন বিষণ্নতায় ভরে গেল। শরীরটা ভালো নেই, ক্লান্ত-শ্রান্ত মুখ, তবু হাসির আড়ালে সব লুকিয়ে রাখার চেষ্টা। জানতে পারলাম, ডাক্তার দেখানো হয়েছে, ওষুধ চলছে। কিন্তু ঈদের আগের দিন বিকেল থেকে হঠাৎই খারাপ হতে লাগল মায়ের শরীর। বুকের ব্যথায় ছটফট করছেন, নিশ্বাস নিতে পারছেন না ঠিকমতো। ভয় পেয়ে গেলাম। সময় নষ্ট না করে তড়িঘড়ি কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।

উৎসবের আমেজে শহর তখন অন্য রকম ব্যস্ত। কিন্তু আমার কাছে সবকিছুই বিভীষিকাময় লাগছিল। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছোটাছুটি করছি—কোথাও পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই, কোথাও চিকিৎসক নেই, দরকারি ওষুধ নেই! একজন ডাক্তার বললেন, ‘আগামীকাল ইসিজি করাতে হবে, এখন তো কিছুই খোলা নেই!’

মনে মনে ভয় পেলাম। ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠল, ‘আগামীকাল! কিন্তু কাল আর যদি না আসে!’

আরও পড়ুনসামনের দিনগুলোতে তোমার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ হয়ে থাকবেন মা-বাবাই০৫ মে ২০২৪

রাত বাড়তে থাকল। আর আমি দেখতে পেলাম হাসপাতালের করিডরে একের পর এক মৃত্যু। এত কাছ থেকে কখনো মৃত্যু দেখিনি। আরও কটা নিশ্বাস নেবে বলে কত মানুষ লড়ছে। তখনো শক্ত করে আমার হাত ধরে ছিলেন মা। হয়তো বুঝতে পারছিলেন, আর বেশিক্ষণ নেই।

ভোর ৬টায় ডাক্তার এসে মৃদুস্বরে জানালেন—‘আপনার মা আর নেই!’

মা নেই! কী ভয়ংকর কথা! আমি বোবা হয়ে গেলাম। কাঁদতে পারছিলাম না। নিথর দেহটা কোলে নিয়ে বসেছিলাম চুপচাপ। ঈদের দিন, যখন অন্যরা ঈদের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে ফিরছিলেন, আমি তখন সাদা কাফনে মোড়ানো মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম।

ঈদের সেই সকালটা আমার কাছে একটা বিভীষিকা হয়ে আছে। বাড়ির উঠানে মাকে শুইয়ে রাখা হলো। আত্মীয়স্বজনরা বিলাপ করছে, কিন্তু আমার চোখে তখনো পানি আসেনি। কেবল মনে হচ্ছিল, মা এখনই চোখ খুলে বলবেন—‘বাবা, ঈদের নামাজ পড়েছিস?’

সেই থেকে ঈদ আমার কাছে কেবলই শূন্যতার নাম। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে আর সালাম করার কেউ নেই। মায়ের হাতের রান্না নেই, ঈদের সকালে শখ করে লাল শাড়ি পরা মা নেই। এখন শুধু কবরের কাছে গিয়ে দাঁড়াই, চোখের পানি আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করি, আর বিড়বিড় করে পড়ি—‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।’

শুনতে পাও মা?

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সিরাজ–কৃষ্ণাতে ম্যাচে ফিরল ভারত

অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে মোহাম্মদ সিরাজের মতো আর কোনো পেসার নেই, এভাবে বলাই যায়। কারণ, সিরাজ ও ক্রিস ওকসই এই সিরিজের সব কটি ম্যাচ খেলেছেন। সেই ওকসও ওভাল টেস্টের প্রথম দিনে চোট পেয়ে টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন, টিকে আছেন সিরাজ।

টিকে থাকা সিরাজ কী করেছেন? গতকাল ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৮ ওভারের এক স্পেলে ফিরিয়েছেন ওলি পোপ, জো রুট, জ্যাকব বেথেলকে। এরপর আরও এক উইকেট। সিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন প্রসিধ কৃষ্ণা। দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভারে দুই উইকেটসহ তিনিও নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভারতের ২২৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৪৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত কাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ২ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে। দুই ‘জীবন’ পাওয়া যশস্বী জয়সোয়াল ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রান নিয়ে উইকেটে আছেন।

অথচ কাল প্রথম সেশন শেষে ম্যাচের চিত্র ছিল আলাদা। ইংল্যান্ড প্রথম ১৬ ওভারেই তোলে ১ উইকেটে ১০৯ রান। দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট ৭৭ বলে গড়েন ৯২ রানের জুটি। এমন বাজবলীয় শুরুর পর চিত্র পুরোপুরি বদলে যায় দ্বিতীয় সেশনে। শুরুটা করেন কৃষ্ণা। তাঁর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ক্রলি। পরের গল্পটা সিরাজের। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ৩১ রান দেওয়া সিরাজকে অধিনায়ক গিল যখন বোলিংয়ে আনেন, তখন ইংল্যান্ডের রান ২৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৪২। তিনি একে একে ফেরান দুই সেট ব্যাটসম্যান পোপ (২২), রুটকে (২৯) ও বেথেলকে (৬)। এরপর কৃষ্ণার দুই উইকেটে দ্বিতীয় সেশনটা পুরোপুরি ভারতের হয়ে যায়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেশনে ১০৬ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। তৃতীয় সেশনে আর ৩২ রান যোগ করতে পারে তারা।

আরও পড়ুনকাঁধের চোটে ভারতের বিপক্ষে আর খেলতে পারবেন না ওকস১১ ঘণ্টা আগেলোকেশ রাহুলকে আউট করার পর অ্যাটকিনসনের আনন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ