আর্জেন্টিনার কাছে হারার পর দরিভালকে যে ছাঁটাই করা হচ্ছে সেটি অনুমেয় ছিল। বাকি ছিল শুধু সরকারি ঘোষণার। গতকাল সে ঘোষণা দিয়ে দিল ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ)। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়ে দিল, ব্রাজিল জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে আর রাখা হচ্ছে না দরিভালকে। নতুন কোচ খুঁজছে তারা। এখন প্রশ্ন, কে হবেন ব্রাজিলের পরবর্তী কোচ? রদ্রিগেজ কোনো নাম বলেননি।
ব্রাজিলের প্রভাবশালী দৈনিক ও গ্লোবো’তে সম্ভাব্য একজনের নাম বলা হয়েছে। তিনি নেইমারের সাবেক ক্লাব আল হিলালের পতুর্গিজ কোচ জর্জ জিসাস। রিয়াল মাদ্রিদের কোচ কার্লো আনচেলত্তি এক প্রকার ‘না’ বলে দেওয়ার পর সত্তর বছরের এই পর্তুগিজ কোচের সঙ্গে কথা নাকি অনেকটাই পাকা। ব্রাজিলের জনপ্রিয় অনলাইন ওয়েব ‘ইউওএল’ আরেকটি নাম সামনে এনেছে– ‘পেপ গার্দিওয়ালা’। ম্যানসিটির এই কোচ হতে পারেন ব্রাজিলের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী। বাস্তবতা হচ্ছে, তাঁর সঙ্গে সিটির চুক্তি ২০২৭ পর্যন্ত। আনচেলত্তির মতো গার্দিওলাও ব্রাজিলের জন্য আপাতত স্বপ্নের কোচ!
জর্জ জিসাস ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে রাজি হলেও একটি শর্ত দিয়েছেন। তাঁর সৌদি ক্লাব আল হিলাল যদি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, তাহলে তিনি সেই ক্লাব বিশ্বকাপের পর ব্রাজিল দলের সঙ্গে যোগ দেবেন; যার অর্থ, জুনে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে, সেখানে জিসাস থাকতে পারবেন না। আল হিলালে নেইমারকে সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে জর্জ জিসাসের। অনেকেই মনে করছেন, নেইমারের পরামর্শেই তাঁর নামটি উঠেছে।
ব্রাজিল ফুটবল সংস্থা আপাতত একটি ব্যাপারে একমত, তাহলো সামনের বিশ্বকাপে কোনো ইউরোপিয়ান কোচ দরকার তাদের। তাছাড়া জিসাসের কোচিং ক্যারিয়ারে দারুণ একটি অর্জনও রয়েছে। তাঁর অধীনে কোপা লিভার্টাডোরিস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লেমিঙ্গো। ব্রাজিল ঘরোয়া লিগে দল পরিচালনার অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর। তাই আপাতত জর্জ জিসাসের অধীনে ব্রাজিলের পরবর্তী বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনা বেশি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।