অসহায় সিয়ামের পাশে আনছর আলী, উপহার দিলেন ইজিবাইক
Published: 30th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোয়ালপাড়া এলাকার শাহিন মিয়ার ছেলে সিয়াম মিয়া। সিয়ামের বাবা শুধু কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ব নেই।
সিয়ামের যখন যখন জন্ম হয় তখন বাবা শাহিন মিয়া তাকে ও তার মা মায়শারা বেগমকে ফেলে অন্যত্র চলে যায়। তারপর থেকে শাহিন ছেলে ও স্ত্রীর কোন খোঁজ খবর নেয়নি। কিছুদিন পর সিয়ামের মায়েরও বিয়ে হয়ে যায় অন্যত্র।
এরপর থেকেই শাহীন বড় হয় তার নানা নানীর কাছে। নানা নানীর অভাবের সংসারে পেরোনো হয়নি প্রাথমিকের গন্ডি। নানা নানীর বয়স হয়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে সংসারের খরচ চালানো সম্ভব হয় না। সংসারের হাল ধরেন সিয়াম।
তাইতো কয়েক মাস আগে জীবিকার জন্য স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে একটি ইজিবাইক কেনেন সিয়াম। ইজিবাইক চালিয়ে এনজিওর ঋণের কিস্তি দিয়ে তাদের তিনজনের সংসার ভালই চলছিল। কথায় আছে অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়।
একমাস যেতে না যেতেই ইজিবাইকটি দূর্ঘটনায় পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। একদিকে এনজিও’র ঋণের টাকা আরএকদিকে সংসারের খরচ চালাতে দিশেহারা যখন সিয়াম ও তার নানা নানী।
তখনই অসহায় সিয়ামের এই দূর্দশা জানতে পেরে পাশে দাড়িয়েছেন আনছর আলী নামে স্থানীয় এক সমাজসেবক। সিয়ামকে নতুন একটি ইজিবাইক কিনে নিয়ে পূনরায় তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তিনি।
ইজিবাইক পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে সিয়াম মিয়া বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ইজিবাইকটি কিনেছিলাম। এক্সিডেন্ট করে আমার ইজিবাইকটি নষ্ট হয়ে যায়। আমিও অনেক ব্যাথা পেয়েছি। কিস্তির টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো সেটা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। তাছাড়া সামনে ঈদ। এখনো কিছুই কিনিনি।
আনছর আলী কাকা আমার বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষনিক আমাকে একটি নতুন ইজিবাইক কিনে দিয়েছেন। অটো দিয়ে আমি এখন ঋণের টাকাও পরিশাধ করতে পারবো ও সংসার চালানো যাবে।
সিয়ামের নানা সিদ্দিক মিয়া বলেন, আমার নাতীডারে আমরা অনেক কষ্ট কইরা মানুষ করছি। কয়দিন আগে নাতীডায় এক্সিডেন্ট কইরা অটো ভাইঙ্গা গেছে। কিস্তির টাকাও দিতে পারতাছিল না। তহন আনছর আলী বাপজানে আমার নাতিরে একটা অটো কিন্না দিছে। আল্লাহ তারে আরো বড় করুক।
আনছর আলী বলেন, আমি যখন শুনেছি সিয়াম ছেলেটি অসহায়। তাৎক্ষনিক তার কর্মসংস্থ্যানের জন্য নতুন একটি ইজিবাইক কিনে দিয়েছি। যাতে সারা বছর এটা দিয়ে সে সংসার চালাতে পারে আর কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারে।
.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ এনজ ও
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতে ‘টর্চলাইট জ্বালিয়ে’ দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ইউএনও-ওসিসহ আহত ৩০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পূর্ববিরোধের জের ধরে দুটি গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ইউএনও, ওসিসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত উপজেলার সদর ইউনিয়নের চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়। এ সময় বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশাররফ হোসাইন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হাসান আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে মুঠোফোনের চার্জার কেনাবেচা নিয়ে চানমনিপাড়া ও মোঘলটুলা গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় চানমনিপাড়া গ্রামের প্রয়াত হেলাল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগম (৪২) ও তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) গ্রামের অদূরে একটি চালকলে চাল ভাঙাতে যান। সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মোঘলটুলা গ্রামের তৌহিদ মিয়া (২০) হালিমা বেগমকে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদ করেন তাঁর ছেলে সাইফুল ইসলাম। এ নিয়ে সাইফুল ও তৌহিদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
এর জের ধরে গতকাল রাত আটটার দিকে উভয় পক্ষের লোকজন দা, বল্লম, লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে দুই গ্রামের মাঝখানের সড়কে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় অন্ধকারে অনেকের হাতে ছিল টর্চলাইট।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ইউএনও মোশাররফ হোসাইন, ওসি রফিকুল হাসানসহ পুলিশের একটি দল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও এবং রাত ১০টার দিকে ওসি ইটের আঘাতে আহত হন। ইউএনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি ডান হাঁটুর নিচে আঘাত পেয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন ওসি রফিকুল হাসান। তাঁর ডান চোখের ওপরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) তপন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সরাইল থানার ওসি রফিকুল হাসান ঘটনাস্থলে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। তাঁকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে।
ইউএনও মোশাররফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরাইলে সংঘর্ষে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনা আমি মেনে নিতে পারিনি। সংঘর্ষের ঘটনা শুনে না গিয়ে পারলাম না। কথায় কথায় সংঘর্ষের সংস্কৃতি থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।’