অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি পালন করবে, আশা মির্জা ফখরুলের
Published: 31st, March 2025 GMT
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা পালন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন বিএনপির মহাসচবি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তাঁদের দলের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও তাঁরা পালন করবেন।
আজ সোমবার ঈদুল ফিতরের দিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
ফ্যাসিবাদ সরকারের শাসনামলের থেকে ‘এবার ঈদ আনন্দময় পরিবেশে হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গত ১৫ বছরের ঈদের সঙ্গে এবারকার ঈদের পার্থক্যটা কি জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক পার্থক্য। এবার মুক্ত ও একটা আনন্দময় পরিবেশে আমরা ঈদ পালন করছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের এ দিনে আমরা আশা করব, যিনি যে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দায়িত্বে সবাই সফল হবেন এবং বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, জনগণের কাছে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি, সেই প্রতিশ্রুতি তারা পালন করবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকেও আমরা অবশ্যই সেই প্রতিশ্রুতি পালন করব বলে শপথ নিয়েছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন প্রত্যেক বাংলাদেশি মানুষ যেন আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে পারেন, সেই জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি। দোয়া চেয়েছি আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের কাছে ফিরে আসেন এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান, তিনি যেন অতি শিগগিরই আমাদের মধ্যে ফিরে আসেন, সেই দোয়া চেয়েছি।’
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান শেরেবাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে এসে তাঁর কবরে ফুল দেন এবং দোয়া করেন।
এ সময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, রফিক শিকদার, এস এম জাহাঙ্গীর, আমিনুল হকসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী।
জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদেন বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে আপনাদের (গণমাধ্যম) সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি…ঈদ মোবারক…আপনাদের মাধ্যমে আমরা পুরো দেশবাসীর কাছে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি…ঈদ মোবারক।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ আমরা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে এসেছিলাম। আমরা পরম করুনাময় আল্লাহ তাআলার কাছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছি। আমরা একই সঙ্গে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছি।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘একই সঙ্গে বিগত গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোতে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাঁদেরও আত্মাঁর মাগফিরাত কামনা করেছি। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে যাঁরা এ দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছি এবং গণতন্ত্রের জন্য বিগত ১৫ বছর ও জুলাই-আগস্টে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমরা যে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করেছি, মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য যে সংগ্রাম করেছি, মানুষের ভাতের অধিকারের জন্য যে সংগ্রাম করেছি, মানবাধিকারের জন্য যে সংগ্রাম করেছে, সেই সংগ্রাম যেন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, সে জন্য পরম আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স গ র ম কর ছ র র জন য ল ইসল ম আম দ র ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’