কুয়াকাটা সৈকতে ঈদের আনন্দে মেতেছেন পর্যটকরা
Published: 1st, April 2025 GMT
দীর্ঘ এক মাস পর্যটকশূন্য থাকার পর পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সৈকতে লাখো পর্যটক এসেছেন ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকরা সৈকতে আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন। সমুদ্রের নোনা জলে গা ভাসিয়ে হৈ-হুল্লোড় করছেন। অনেকে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলছেন, সেলফি তুলছেন স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। কেউ কেউ বিভিন্ন বাহনে চড়ে সৈকতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে দেখছেন। কেউবা বেঞ্চে বসে সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়া ঢেউ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। সৈকতে বিরাজ করছে ঈদ উৎসবের আমেজ।
ক্র্যাব আইল্যান্ড, চর গঙ্গামতি, গঙ্গামতি, ঝাউবন, তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন ও শুটকি পল্লিসহ সব পর্যটন স্পটে আছে পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি। বিক্রি বেড়েছে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
অধিকাংশ হোটেল-মোটেল আগেই বুকিং হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পর্যটকের আগমনে উচ্ছ্বসিত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৬টি পেশার সঙ্গে ব্যক্তিরা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর আছে ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও নৌ পুলিশের সদস্যরা।
ঢাকার জিনজিরা থেকে আসা পর্যটক তৈয়ব হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেছেন, মঙ্গলবার সকালে পরিবার-পরিজন নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছি। হোটেলে পৌঁছে রুমে ওঠার আগেই রিসিপশনে ব্যাগ রেখে সৈকতে এসেছি। স্নিগ্ধ সকালে দখিনা হাওয়া ও সৈকতের ছোট ছোট ঢেউ আমাদের মুগ্ধ করেছে। জোয়ারের সময় সবাই একসঙ্গে সাঁতার কাটব।
সভারের ফুলবাড়িয়া থেকে আসা শাহেদ-ইয়াসমিন দম্পত্তি বলেন, সকাল থেকে কুয়াকাটার আকাশ অনেকটা মেঘলা। মেঘলা আকাশে দখিনা হাওয়া এবং সৈকতে ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়া, এ এক দারুণ অনুভূতি। ঈদের ছুটির প্রথম দিনে আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমণ স্বার্থক হয়েছে।
সৈকতলাগোয়া প্রসাধন সামগ্রীর দোকানি সুলতান আকন বলেন, গতকাল সৈকতে আশপাশের এলাকার পর্যটক ছিল। বিক্রি মোটামুটি ভালোই হয়েছে। আশা করছি, আজ আরো বেশি পর্যটক আসবে এবং আমরা বিগত এক মাসের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব।
সৈকতে ভ্রাম্যমাণ আচার বিক্রেতা মোসলেম মিয়া বলেন, রমজানে কুয়াকাটায় কোনো পর্যটক ছিল না। আমি গতকাল বিকেলে আমার ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে সৈকতে নেমেছি। রাতে বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। অনেক পর্যটক আসছে। আশা করছি, আজ আরো বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের সহাকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিশ্ছিদ্র নিরপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি। সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য, থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। আশা করছি, পর্যটকরা নিরাপদে কুয়াকাটা ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।
ঢাকা/ইমরান/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ