সেভেন সিস্টারস নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আগেও কথা বলেছেন: হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ
Published: 2nd, April 2025 GMT
সেভেন সিস্টারস নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আগেও কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সেভেন সিস্টার্স নিয়ে এই প্রথমবার কথা বলেননি। তিনি ২০১২ সালে একই ধরনের কথা বলেছিলেন। এর চাইতে একটু এগিয়ে গিয়ে ২০২৩ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশকে একটা ভ্যালু চেইনে আবদ্ধ করা। তিনি এ প্রসঙ্গে একটা একক অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথাও বলেছিলেন, যেটাকে বিগ বে ইনেশিয়েটিভ বলে গণ্য করা হয়।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। আগামীকাল বিমসটেক সম্মলেন যোগ দিতে থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন ড.
চীন সফরকালে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে খলিলুর রহমান বলেন, ‘কানেক্টিভিটি এই অঞ্চলের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। বিশেষ করে, যাদের জন্য সমুদ্রে এক্সেস পাওয়া খুব কঠিন। আমরা কিন্তু কানেক্টিভিটি জোর করে চাপিয়ে দেবো না, সেটা করার মতো অবস্থাও আমাদের নেই। কেউ যদি নেয় খুব ভালো, না নিলে কী করবো আমরা; কিছু করার নেই। প্রধান উপদেষ্টা এই কথা আগেও বলেছিলেন। অত্যন্ত সৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কথাই প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। এর ব্যাখ্যা যদি অন্যরকম দেওয়া হয়, আমরা সেই ব্যাখ্যা ঠেকাতে পারছি না। আমরা শুধু সবার সমান লাভের জন্য কানেক্টিভিটি দিতে আগ্রহী আছি, কেউ নিলে ভালো, না নিলে নেবেন না।’
খলিলুর রহমান বলেন, থাইল্যান্ডে চলমান বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) সম্মেলনের সাইডলাইনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হতে পারে। তিনি বলেছেন, এ ধরনের সম্মেলনে সাইডলাইনে রাষ্ট্রপ্রধানগুলোর সঙ্গে তাদের পারস্পরিক সুবিধা অনুযায়ী বৈঠক হয়ে থাকে। সদস্যভুক্ত দেশগুলো তাদের পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করে থাকে। এজন্য নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
তিনি জানান, সমাপনী দিনে প্রধান উপদেষ্টা একটি বক্তব্য দেবেন। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন।
হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ বলেন, ‘বিমসটেক সম্মেলনের শেষ দিনে প্রধান উপদেষ্টা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আগামী দুই বছরের জন্য বিমসটেকের এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘সম্মেলনের ফাঁকে সাইডলাইনে বিভিন্ন রাষ্ট্র-প্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা আছে। এর মধ্যে আশা করা যাচ্ছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে, যতক্ষণ পর্যন্ত বৈঠক না হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু বলবো না।’
এ সময় তিনি জানান, বিমসটেক সম্মেলনে দুটি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এই সময় প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।
রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা হবে কিনা সে প্রসঙ্গে খলিলুর রহমান বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে অনেক দেশের সঙ্গে অনেক কথাই হয়। সব কথা আমরা বলতে পারি না। এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন ব মসট ক প রসঙ গ বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।