ঢাকার ছাদ রেস্তোরাঁয় তাপপ্রবাহের বিপদ
Published: 3rd, April 2025 GMT
পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা কিংবা নিরিবিলি সময় কাটাতে কয়েক বছর ধরে খোলামেলা পরিবেশে ছাদ রেস্তোরাঁকে বেছে নিচ্ছেন নগরের বাসিন্দারা। বদ্ধ রাজধানীতে বিনোদন ও মনোরঞ্জনে এ ধরনের রেস্তোরাঁকে অনন্য বলছেন অনেকেই।
তবে ঢাকায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দুই শর মতো ছাদ রেস্তোরাঁর কোনোটিরই অনুমোদন নেই। এসব রেস্তোরাঁ নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবাদীরা, এমনকি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (রাজউক)। ছাদে উচ্চ তাপে রান্না এবং প্লাস্টিক–জাতীয় দাহ্যবস্তু ব্যবহার করে সাজানোর কারণে সংশ্লিষ্ট ভবন ও এর আশপাশের ভবনে আগুন লাগা এবং তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। ঝুঁকি ও অবৈধতার প্রশ্নে কয়েকটি ছাদ রেস্তোরাঁ ভেঙেও দিয়েছে রাজউক। তারপরও নিয়মনীতি ও অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিমালিকানাধীন এ ধরনের রেস্তোরাঁর সংখ্যা বাড়ছে। বাদ যায়নি সরকারি ভবনের ছাদও।
বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঢাকা শহরে যে তীব্র তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হয়, তা কমাতে ঢাকার বহুতল ভবনের ওপর ছাদবাগান হতে পারে অন্যতম বিকল্প। কিন্তু ছাদবাগানের পরিবর্তে ভবনের ছাদগুলো হয়ে উঠছে একেকটি জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড। ফলে যে ছাদ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অতিরিক্ত তাপমাত্রা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারত, তা–ই বাড়িয়ে তুলছে তাপপ্রবাহ।
রাজউক বলছে, এসব রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে চাপের মুখে পড়েছে সংস্থাটি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ভাষ্য, মেগা সিটি ঢাকায় বহুতল ভবনের ছাদে রেস্তোরাঁ এখন গোদের ওপর বিষফোড়া।
ঢাকায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দুই শর মতো ছাদ রেস্তোরাঁর কোনোটিরই অনুমোদন নেই। এসব রেস্তোরাঁ নিয়ে চিন্তিত পরিবেশবাদীরা, এমনকি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (রাজউক)।অনুমোদন দেয়নি রাজউক
গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজে আগুন লাগে। এ ঘটনার পর ৫ মার্চ রাজউকের একটি মতবিনিময় সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে রাজউকের আওতাধীন ৮টি জোনের ২৪টি সাবজোনের কর্মকর্তাদের ২১ মার্চের মধ্যে অনুমোদিত নকশা অনুসারে ও নকশার ব্যত৵য় করে পরিচালিত রেস্তোরাঁর তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
রাজউকের তালিকা ধরে গুগল ম্যাপ এবং রেস্টুরেন্ট লোকেটর ব্যবহার করে ঢাকা শহরে ২০০টির বেশি ছাদ রেস্তোরাঁর খোঁজ পাওয়া গেছে।নির্দেশনা অনুসারে গত বছরের মে পর্যন্ত রাজউকের মোট ২৪টির মধ্যে ১২টি সাবজোনের কর্মকর্তারা রাজউকের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ–১–এর পরিচালকের কাছে রেস্তোরাঁর তালিকা পাঠান। সেই তালিকা প্রথম আলোর কাছে এসেছে। তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোট ৮১৯টি রেস্তোরাঁ পরিদর্শন করতে পেরেছেন কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে ছাদ রেস্তোরাঁ আছে ২৫টি। সব কটিই অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে উল্লেখ করে এগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন কর্মকর্তারা।
রাজধানীর বহুতল ভবনের ছাদে স্থাপিত রেস্তোরাঁর ৯৯ শতাংশই অননুমোদিত, রাজউকের পক্ষ থেকে এগুলোর কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।আশরাফুল ইসলাম, রাজউকের প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ (চলতি দায়িত্ব)রাজউকের তালিকা ধরে গুগল ম্যাপ এবং রেস্টুরেন্ট লোকেটর ব্যবহার করে ঢাকা শহরে ২০০টির বেশি ছাদ রেস্তোরাঁর খোঁজ পাওয়া গেছে। তালিকা হাতে পাওয়ার পর উত্তরা, মিরপুর, ধানমন্ডি, আগারগাঁও, গুলশান ও সাভার এলাকার অন্তত ১৫টি ছাদ রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টের বহুতল ভবনের ছাদগুলোকে রেস্তোরাঁ স্থাপনের জন্য বেছে নিয়েছেন মালিকেরা। ছাদগুলোর একাংশে রান্নার সরঞ্জাম বসিয়ে দিনের ১১–১২ ঘণ্টা উচ্চ তাপে বাংলা, থাই এবং চায়নিজ খাবার রান্না করা হচ্ছে। কোনো কোনো রেস্তোরাঁর এক পাশে টিন বা কৃত্রিম উপকরণ দিয়ে ছাউনি এবং কাচ দিয়ে ঘেরা ছোট কক্ষে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কয়েকজনের বসার ব্যবস্থা আছে। বাদবাকি ছাদে প্লাস্টিকের সরঞ্জাম, কাঠ ও বাঁশের উপকরণ এবং টবে গাছ লাগিয়ে সাজানো হয়েছে। এসব রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের রান্না হয়। ছুটির দিনগুলোতে রান্নার পরিমাণ বাড়ে দেড় থেকে তিন গুণ।
রাজউকের প্রধান নগর–পরিকল্পনাবিদ (চলতি দায়িত্ব) আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজধানীর বহুতল ভবনের ছাদে স্থাপিত রেস্তোরাঁর ৯৯ শতাংশই অননুমোদিত, রাজউকের পক্ষ থেকে এগুলোর কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। রেস্তোরাঁগুলো নিজেদের মতো করে তৈরি করা হয়েছে এবং সেভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে। আমরা বেশ কয়েকটি রুফটপ রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়েছি, সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকিগুলো পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অবৈধ এসব রেস্তোরাঁর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে গেলে নানামুখী চাপের মধ্যে পড়তে হয় উল্লেখ করে আশরাফুল ইসলাম বলেন, এসব রেস্তোরাঁ পরিচালিত হওয়ার পেছনে রেস্তোরাঁ ও ভবনমালিকের পাশাপাশি যাঁরা সেখানে যান, সবার দায় আছে।
কোনো ছাদ রেস্তোরাঁকে অগ্নিনিরাপত্তার সনদ দেয়নি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, কয়েক বছর আগে দু–তিনটি রেস্তোরাঁকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু ঝুঁকি বিবেচনায় সেগুলোরও নবায়ন আবেদন গ্রহণ করেনি ফায়ার সার্ভিস। বর্তমানে ছাদ রেস্তোরাঁর অগ্নিনিরাপত্তার সনদ দেওয়া বন্ধ আছে।বিধিমালায় নেই
বিদ্যমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ভবনের ছাদে বড় কোনো স্থাপনা নির্মাণের নিয়ম নেই। বিধিমালায় ছাদে পতিত বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং তা ব্যবহারের উপযুক্ত ব্যবস্থা ইমারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মূল ভবন ৫০০ বর্গমিটারের বেশি হলে ছাদে সংগৃহীত বৃষ্টির পানি পুনর্ব্যবহার এবং পানি ভূগর্ভে পাঠানোর ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডেও (বিএনবিসি) বহুতল ভবনের ছাদে রেস্তোরাঁ নির্মাণের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই। তবে ভবন ব্যবহারের জন্য ব্যবহার বা বসবাসযোগ্যের সনদ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।
এদিকে উন্মুক্ত স্থানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলিয়ে ভবনের ছাদকে ব্যবহারের ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষ থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বৃষ্টির পানি সরাসরি ছাদে পড়ার ব্যবস্থা, গাছ লাগানো বা ছাদবাগান, বসার স্থান, দোলনা, খোলা ছাউনির ব্যবস্থা করা হলে ১০ শতাংশ গৃহকর মওকুফ করার ব্যবস্থা করেছে ডিএনসিসি।
বহুতল ভবনের ছাদে বানানো হয়েছে রেস্তোরাঁ। সাজানো হয়েছে বাঁশ, কাঠ ও প্লাস্টিকজাতীয় দাহ্য পদার্থ দিয়ে। এতে আগুন লাগার আশঙ্কা বাড়ছে। সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেটে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এসব র স ত র র জউক র প র ব যবস থ কর মকর ত পর চ ল ত ব যবহ র অন স র অন ম দ পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
মবকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে একে উসকে দেওয়া হয়েছে
আমাদের সমাজে মব সহিংসতা (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) কেন ঘটছে? অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিসেবে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় আমাকে। গবেষণা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আমাদের ইতিহাসে আগেও মব সহিংসতার ঘটনাগুলো ছিল। তবে এখন এটা চরম আকার ধারণ করেছে। নানা আকারে হচ্ছে। কারণগুলো বিস্তৃত। সাধারণভাবে আপনি-আমিও কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে পারি। কোনো ব্যক্তি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত দেখলে সোচ্চার হতে পারি। ওই ব্যক্তিদের পুলিশের হাতে আমরা তুলে দিতে পারি। অপরাধ প্রমাণিত হলে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করবে, পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাধারণ জনগণ হিসেবে পুলিশে সোপর্দ করার দায়িত্ব পালন করা যেতে পারে। তার মানে এই নয় যে যাকে অপরাধী মনে করা হচ্ছে, তাকে গণপিটুনি দেওয়া যাবে, হেনস্তা করা যাবে, নির্যাতন করা যাবে। অথচ এই জিনিসটাই করতে দেখা যাচ্ছে। আপনি একটা মানুষকে গণপিটুনি দিতে পারেন না। আর এটা করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনি অধিকার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধ প্রমাণ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে অপরাধী বা আসামিও বলা যাবে না। আমাদের সংবিধান, ফৌজদারি আইন, দণ্ডবিধি—কোনো আইনে আপনাকে মব সৃষ্টি করে কারও বিচার করার অধিকার দেওয়া নেই। মবের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। বরং সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়, বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। যতগুলো মব সৃষ্টি করা হয়েছে, ততবার বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এটা কোনো নাগরিকের কাম্য নয়। এটা একধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ির সামনে বসে মব তৈরি করতে দেখা গেছে। বাসার ভেতরে গিয়ে মব তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন অফিসে হয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে দেখেছি। সবার আগে স্কুল-কলেজে শুরু হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক বা জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বা প্রভাবশালী কাউকে হেনস্তা করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল। অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
তখন সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং বলা হয়েছিল, এটা মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাঁরা মনে করেছেন, এটা মব না, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এভাবে মবের ঘটনাকে অস্বীকার করে মবকে আরও উসকে দেওয়া হয়েছে। মবের মাধ্যমে মানুষ নিজের হাতে আইন তুলে নিয়েছে। মানুষ ভাবছে, বিচারব্যবস্থা খুবই দুর্বল। আমি ছেড়ে দিলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ওই ব্যক্তি (যাকে অপরাধী ভাবা হচ্ছে) বের হয়ে যাবে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, শাস্তি হবে না। যেটা করার আমাদেরই করতে হবে। আমাদেরই বিচার করতে হবে। মানুষ মনে করছে, বৈষম্য হচ্ছে। মানসিক হতাশা থেকে মানুষ রাস্তায় নামছে। মবের ঘটনার মধ্য দিয়ে তার অবস্থান ও মানসিক হতাশা প্রকাশ করতে চায়। মবের কোনো ঘটনার বিচার হতে দেখা যাচ্ছে না। কোনোটার বিচার দৃশ্যমান না। সে জন্য আরও বেশি ঘটনা ঘটছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও ভঙ্গুর দশায়।
মব সহিংসতার কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অনেকগুলো রাজনৈতিকভাবে পরিকল্পিত। সেগুলোকে স্বাভাবিকীকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। বাসায় ঢুকে ডাকাতি করা হয়েছে। দোকান লুটপাট করা হয়েছে। পুলিশের ভূমিকাও ছিল নিষ্ক্রিয় পর্যায়ে। পুলিশ নিজেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। দু–একটা ঘটনায় পুলিশ নিজেও মবের শিকার হয়েছে। একটি প্রতিবেদনে দেখেছিলাম, ৪৭৭ জন পুলিশ মবের শিকার হয়েছেন। রাজনৈতিক দলে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও কার্যকর ভূমিকা রাখা দরকার মব সহিংসতার বিরুদ্ধে। অনেক সময় কোনো অপরাধের অভিযোগে পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এলে মব সৃষ্টি করা হয়েছে ওই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। কেউ যখন দেখেন অপরাধ করলেও তাঁকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে, তখন ওই ব্যক্তি অপরাধ করতে আর ভয় পান না। শাস্তির ভয় থাকে না বলে অপরাধ করতে থাকেন।
আরও পড়ুন‘পানিও দিতে দেয় নাই’, মব তৈরি করে হত্যায় আসামি গ্রেপ্তার মাত্র ১.২৭%১১ ঘণ্টা আগেমব সহিংসতা বন্ধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। মব সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখাতে হবে। মব সহিংসতার ঘটনাগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। মবের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে সরকার নির্দেশনা দিলে এবং সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রচারের ব্যবস্থা নিলে মব সহিংসতা কমবে।
রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আরও সচেতন হতে হবে। তাঁদের কর্মকাণ্ড মানুষ দেখছে। সামনে নির্বাচন। সব দলকে সাধারণ মানুষ পর্যবেক্ষণ করছে। কে কী ধরনের আচরণ করছেন, তা দেখা হচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের মব সহিংসতার মতো নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়ানো উচিত নয়। কোনো বড় রাজনৈতিক দল যদি ঘোষণা দেয় যে আজ থেকে তারা মবের সঙ্গে থাকবে না। তাহলে তৃণমূলের একজন কর্মী তাঁর পদ হারানোর ভয়ে ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চিন্তা করে মব সহিংসতায় জড়ানোর আগে দুবার চিন্তা করবেন।
আরও পড়ুনগাইবান্ধায় চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা০২ নভেম্বর ২০২৫বিচারপ্রক্রিয়ার ত্রুটি দূর করতে হবে। থিওরি (তত্ত্ব) বলে, মানুষ যখন দেখে সে কোনোভাবে সমাজে তার ক্ষমতার চর্চা করতে পারছে না। পাশাপাশি দেখে যে একজন অপরাধী দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো সাজার সম্মুখীন হচ্ছে না। তখন মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সে নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিচারে গলদ থেকে গেলে মব সহিংসতা ঠেকানো যাবে না।
গণমাধ্যম মব সহিংসতার বিরুদ্ধে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যম মব সহিংসতার নেতিবাচক প্রভাব সহজভাবে বিশ্লেষণ করে মানুষকে বোঝাতে পারে। বিষয়গুলোকে আলোচনায় আনতে হবে। সহজভাবে বোঝালে মানুষ তা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুনরূপলাল-প্রদীপকে হত্যায় অংশ নেয় যারা, কী বলছে পরিবার১৯ আগস্ট ২০২৫আমি নারী হিসেবে বলব, ধর্ষক আমার কাছে সবচেয়ে বড় অপরাধী। তারপরও বলব, ভুক্তভোগীর মতো ধর্ষকেরও আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। জনগণকে মব সহিংসতাবিরোধী অবস্থানে আসতে হবে। যেকোনো কিছু হলে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে যেন মব সহিংসতা করা না হয়। সব বিষয়ে জেনে–বুঝে সুনাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সমাজে মব সহিংসতা ঘটবে না।
শাহারিয়া আফরিন,
সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়