ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আঞ্চলিক জোট বিমসটেকের কেন্দ্রস্থলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) অবস্থান। এই অঞ্চল বিমসটেকের অবিচ্ছেদ্য অংশ। থাইল্যান্ডে আয়োজিত জোটটির ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার প্রাক্কালে তিনি এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর তিনি এ কথা বললেন।  

মূলত এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিমসটেক অঞ্চলে সেভেন সিস্টার্সের গুরুত্বের দিকে ইঙ্গিত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর দিয়েছে। অন্যদিকে ড. ইউনূসের ওই বক্তব্যের পর চিকেন নেকে (বাংলাদেশ ও চীনকে পৃথককারী করিডোর) ভারী যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন করেছে ভারত।

সম্প্রতি চীন সফরকালে এক বক্তৃতায় ড. ইউনূস বলেছিলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি রাজ্য সম্পূর্ণরূপে ল্যান্ডলকড (স্থলবেষ্টিত)। সমুদ্রের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। আমরাই এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক এবং বাংলাদেশ অন্যদের জন্য প্রধান প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করতে পারে।’ 

পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বলা হয়, ড. ইউনূসের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন,  ‘আমরা কানেক্টিভিটি জোর করে চাপিয়ে দেব না এবং সেটার অবস্থাও আমাদের নেই। কেউ যদি নেন খুব ভালো, আর না নিলে আমাদের কিছু করার নেই।’

গত বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিনাওয়াত্রার নৈশভোজে ড. ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদি পাশাপাশি বসেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দুই নেতা বৈঠক করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের প্রথম বৈঠক।

অন্যদিকে বিমসটেকের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিমসটেকের জন্য একটি সংযোগ কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় মহাসড়ক সম্পন্ন হলে এ অঞ্চল প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত সংযুক্ত হবে। সত্যিকার অর্থে অঞ্চলটি ‘গেম চেঞ্জার’ হবে।

সেভেন সিস্টার্সে নিরাপত্তা জোরদার 

এদিকে বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী সেভেন সিস্টার্সে নিরাপত্তা বাড়াতে ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী মিগ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি হাশিমারা এয়ারবেসে রাফায়েল যুদ্ধবিমানের একটি স্কোয়াড্রন স্থাপন করেছে। ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলের একটি রেজিমেন্ট সম্ভাব্য হুমকি রোধ করতে করিডোরে মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপন ও যে কোনো অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে আকাশসীমা সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এমআরএসএএম ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সক্রিয় করা হয়েছে। 

তাছাড়া নিয়মিত সামরিক মহড়া বজায় রয়েছে। টি-৯০ ট্যাঙ্কের সঙ্গে লাইভ ফায়ার ড্রিলসহ অপারেশনাল প্রস্তুতি বাড়ানোর জন্য প্রায়ই যুদ্ধ অনুশীলন পরিচালনা করে থাকে ভারতের সামরিক বাহিনী। ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক হুমকির বিরুদ্ধে ভারত সজাগ রয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। 

গত ২৮ মার্চ ড. ইউনূস চীন সফরের সময় ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে মন্তব্যের জেরে ভারতের উদ্বেগ বেড়ে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘চিকেন নেক’ করিডোর অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়ানোর ওই পদক্ষেপ। ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে অঞ্চলটির সম্ভাব্য বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তবে এটিকে ভারত ভালোভাবে নেয়নি। ফলে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়।  

পশ্চিমবঙ্গের এই সরু প্রসারিত করিডোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যকে ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। করিডোরটি নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান ও চীন সীমান্তে অবস্থিত। সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এই করিডোরের নিরাপত্তা জোরদার করেছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই দেশটি।

ভারতীয় সেনাবাহিনী শিলিগুড়ি করিডোরকে দেশটির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন হিসেবে বর্ণনা করেছে। যে কোনো সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলা করা হবে বলে জানিয়েছে তারা। করিডোরের কাছে ‘ত্রিশক্তি কর্পস’ এই অঞ্চলটিকে সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কর্পস রাফায়েল যুদ্ধবিমান, ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ও উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। 

ভারতীয় সেনাপ্রধানের বিবৃতি করিডোরের নিরাপত্তা নিয়ে ভারতের অবস্থানকে আরও জোরদার করেছে। দেশটির চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান অপারেশনাল প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ পরিদর্শন করেছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব মসট ক র কর ড র র ইউন স র র জন য মন ত র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ