আমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক কৌশলের মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা—তিন দিক থেকেই রপ্তানির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। সে দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ শুল্ক বৃদ্ধি দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। কারণ, দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রই আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার। ফলে সঠিকভাবে পাল্টা শুল্কের বিষয়টি মোকাবিলা করা না গেলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

প্রথমেই একটা দুর্বলতার কথা বলি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই বলে আসছিলেন, তিনি শুল্ক বাড়াবেন। ফলে গত নভেম্বরে ট্রাম্পের জয়ের পরেই আমাদের এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। ভারত সেটি করেছে। কয়েক সপ্তাহ আগে তারা কয়েকটি মার্কিন পণ্যের আমদানি শুল্ক বিশেষভাবে কমিয়েছে। এ কারণে তাদেরও শুল্ক বাড়লেও তা আমাদের চেয়ে অনেক কম। এভাবে আরও কয়েকটি দেশ কাজ করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দৃশ্যমান কোনো প্রস্তুতি আমরা দেখিনি। 

যাহোক, এখনো বিষয়টিকে কৌশলে ও ত্বরিতগতিতে মোকাবিলার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য সরকারি–বেসরকারি অংশীজনদের নিয়ে কার্যকর কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। আমার বিবেচনায় যৌথভাবে দুটি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক; দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাজারভিত্তিক সম্পৃক্ততা বাড়ানো। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসব উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

আমার বিবেচনায় যৌথভাবে দুটি উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক; দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাজারভিত্তিক সম্পৃক্ততা বাড়ানো। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এটি করতে হবে।মাসরুর রিয়াজ, চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমাধান হিসেবে ঢালাওভাবে বিভিন্ন মার্কিন পণ্যে শুল্ক কমানো সঠিক পন্থা হবে না। বরং তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সংশ্লিষ্ট সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে তাদের প্রত্যাশা ও মনোভাব বুঝে আমাদের বাস্তবতাভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আমরা দেখছি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের মতো বড় বন্ধুরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাংলাদেশের জন্য তারা আলাদাভাবে খুব শিগগির ছাড় না–ও দিতে পারে। এ জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি আমাদের বাজারভিত্তিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পথে যেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে আমরা সাধারণত নিম্ন ও মাঝারি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করি। এসব পণ্যের দাম দেশটির খুচরা বিক্রেতারাও বাড়াতে চাইবে না। বরং তারা বাড়তি শুল্ক এককভাবে ঘাড়ে না নিয়ে তা রপ্তানিকারকদের ঘাড়ে দিতে চাইবে। এ জন্য ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে কোন প্রক্রিয়ায় শুল্কের বোঝা পরস্পর ভাগ করে নিলে সব পক্ষই লাভবান থাকতে পারে, সে অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করা যেতে পারে। এটি করা গেলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার লম্বা সময় বাড়তি শুল্ক ধরে রাখলেও আমাদের তেমন সমস্যা হবে না।

মধ্যম মেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে বাণিজ্য ও রপ্তানির খরচ কমাতে হবে। কারণ, বাংলাদেশে ব্যবসার খরচ অন্য যেকোনো প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বেশি। এ ছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার ও দক্ষতার ঘাটতি থাকায় রপ্তানি খাতে উৎপাদনশীলতাও কম। সার্বিকভাবে ব্যবসায়ের ব্যয় কমানো গেলে আমরা অনেক মূল্য ছাড় দিতে পারব। এর মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে (এলডিসি) উত্তরণ–পরবর্তী চাপ মোকাবিলার জন্যও একধরনের প্রস্তুতি হয়ে যাবে।

মাসরুর রিয়াজ, চেয়ারম্যান, পলিসি এক্সচেঞ্জ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র স র সরক র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরিতে না ফেরালে রাজপথ ছাড়বেন না ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা

পাঁচ মাস ধরে বেতন নেই। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেউ, কেউ আবার চাকরির বয়সসীমা পার করে এখন আর নতুন কোথাও আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই প্রকল্প শেষের অজুহাতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা—যারা ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই অবস্থায় নিজেদের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং অবিলম্বে বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মীরা। 

আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি হলো স্থায়ীকরণের মাধ্যমে চাকরি বহাল রাখতে হবে এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেইসঙ্গে গত চার মাসের বকেয়া ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে অবস্থান কর্মসূচি চলবে, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

বিক্ষোভরত কর্মীদের একজন বলেন, সরকারের ডাকেই তো আমরা এসেছিলাম। ভয়ঙ্কর সময় ছিল সেটা। তখন যদি পেছনে না ফিরে মানুষকে সেবা দিতে পারি, আজ যখন একটু স্থিতি এসেছে—তখন কেন আমরা উপেক্ষিত হবো? ৫ মাস ধরে একটা টাকাও পাইনি, পরিবার চালানো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নিপসমে কর্মরত ইআরপিপির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর এই প্রকল্পে কাজ করেছি। এখন বয়স ৩৫ ছাড়িয়েছে। সরকারি চাকরির আবেদনের শেষ সীমা পেরিয়ে গেছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ জনবল নেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা শুধু অবিচার না, আমাদের মর্যাদায় আঘাত।

ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি সেন্টারের ডাটা অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা, স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। স্ত্রী-সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি। করোনার সময় এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাকেই আমি কাজে গিয়েছিলাম, এখন সেই অধিদপ্তরের সিঁড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে দাবি আদায়ের জন্য।

ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় কর্মরত এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, করোনার সময় গড়ে তোলা আরটি-পিসিআর ল্যাব, ডেডিকেটেড আইসিইউ বা আইসোলেশন ইউনিটে তারাই প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ তাদের বাদ দিয়ে সেই পদে নতুন লোক নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে। 

তারা বলছেন, আমরা চাকরি ভিক্ষা চাই না। আমরা যেটুকু প্রাপ্য, সেটুকু চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চলবে, তবে আমাদের চাকরি কেড়ে নেয়া হলো কেন? আমাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করে অন্যদের সুযোগ দেওয়া মানে অবিচারকে পুরস্কৃত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ