ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ট্রাম্প প্রশাসনকে অনুরোধ জানানোর সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা। তাঁরা বলেছেন, ৯ এপ্রিলের আগে এ বিষয়ে ট্রাম্প সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে। কারণ, ৯ এপ্রিল থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আজ সকালে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা এসব সুপারিশ করেন। বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অংশ নেন অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো.

হাফিজুর রহমান, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান, গবেষণা সংস্থা র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ প্রমুখ।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী, গবেষক ও অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের বিষয়টিকে শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে হবে না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত। তাই এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশটির বাণিজ্য সংস্থা, পণ্য আমদানিকারক সবার সঙ্গেই পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।

পাল্টা শুল্ক কমানোর প্রক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক–করভার তড়িঘড়ি করে কমিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত না নেওয়ারও সুপারিশ করেছেন একজন গবেষক। তিনি মত দেন, এ বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা বা তারা কী চায়, সেটি ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। সেটি না করে হুট করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হলে তাতে লাভের লাভ কিছু হবে না।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, ৯ এপ্রিলের আগে ক্রয়াদেশ দেওয়া পণ্যের মধ্যে যেগুলো এখন বাংলাদেশে উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হবে কি না, এ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে রপ্তানিকারকদের মধ্যে। তাই এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি বর্তমানে উৎপাদন পর্যায়ে থাকা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয় এবং তাতে ক্রেতারা পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়, সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানিকারকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।

বৈঠকে একাধিক গবেষক মত দেন, বিশ্বের অনেক দেশের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বলে তাদের যা হবে বাংলাদেশেরও একই পরিণতি হবে বলে মনে করলে ভুল হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানি পণ্যের প্রতিযোগী দেশ চীন ও ভিয়েতনামের আর্থিক ধাক্কা সামাল দেওয়ার যে সক্ষমতা রয়েছে, আমাদের সেটি নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা যদি পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়, সেটি পুষিয়ে নেওয়ার মতো সক্ষমতা চীন ও ভিয়েতনামের রয়েছে। তাদের তুলনায় বাংলাদেশের সক্ষমতা খুবই কম।

বৈঠকে একাধিক ব্যবসায়ী সুপারিশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি সহজ করতে বাংলাদেশে দেশটির রপ্তানিকারকদের জন্য সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। সেটি না হলে ব্যবসায়ী পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি বাড়বে না। বর্তমানে শূন্য শুল্কে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করা যায়। তা সত্ত্বেও দেশের তুলা আমদানির বড় অংশই আসে চীন ও ভারতে থেকে। কারণ, এই দুটি দেশ থেকে ব্যবসায়ীদের তুলা আমদানি সহজ। তাই যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানি বাড়াতে হলে দেশটিকে সরবরাহ সুবিধা দিতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে অংশ নেওয়া দুই অর্থনীতিবিদ ও গবেষক প্রথম আলোকে জানান, বর্তমান পরিস্থিতি পাল্টা শুল্কের বিষয়টির সমাধানের আগে ট্রাম্প প্রশাসন কী চায়, সেটি জানতে ও বুঝতে হবে। পরে সেই অনুযায়ীই ব্যবস্থা নিতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র শ কর ব যবস য় ব যবস থ সরক র র ব ষয়ট আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া’

ভারতীয় বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। সৃজিত মুখার্জির ‘এক যে ছিল রাজা’, সুমন ঘোষের ‘বসুপরিবার’-এর মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন এই তারকা। বলা যায়, টলিউডের প্রথম সারির সব নির্মাতার সঙ্গেই কাজ করেছেন এই নৃত্যশিল্পী। 

গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা ছেড়ে মুম্বাইয়ে বসবাস করছেন শ্রীনন্দা। সেখানে সংসার, কাজ নিয়ে সময় কাটছে তার। তবে অভিনয়ে নেই। অভিনয় থেকে দূরে থাকার কারণ কী? ফের কী অভিনয়ে ফিরবেন না শ্রীনন্দা?  

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে আলাপকালে এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রীনন্দা। এ অভিনেত্রী বলেন, “টলিউডে যাদের সঙ্গেই কাজ করেছি, তাদের সঙ্গে এখনো আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ভীষণ ভালো অভিজ্ঞতাও বলা চলে। মুশকিল হলো, বাংলা সিনেমায় তেমন বাজেট থাকে না। সত্যিই যদি খুব ভালো সিনেমা হয় বা এমন কোনো পরিচালক আমাকে অফার দেন যেখানে কোনো ভাবেই ‘না’ করব না। আমি নিশ্চয়ই আবার অভিনয়ে ফিরব।”

আরো পড়ুন:

কলকাতায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশি অভিনেত্রী

পরিচালকের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে মুখ খুললেন শোলাঙ্কি

কিছু কিছু লোকের সঙ্গে কাজ করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গিয়েছেন শ্রীনন্দা। কারণ, তাদের সঙ্গে মানসিকভাবে মেলেনি। তার ভাষায়—“মুম্বাই, কলকাতা বা সাউথ ইন্ডাস্ট্রি যেখানেই হোক না কেন, আমি ভালো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে চাই। কেউ এমন চরিত্রে সুযোগ দেন, যেখানে প্রয়োজনে টাকাটা ভুলে গিয়ে শুধু পরিচালকের নাম দেখেই কাজটা করব।”

কিছুটা ইঙ্গিপূর্ণভাবে শ্রীনন্দা বলেন, “কাজের পাশাপাশি আমার সংসারও রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই পেতে হবে, যার জন্য সংসারটা ইগনোর করার কথা ভাবব। অর্থাৎ মনে হবে সংসার ফেলে এই সিনেমাটা আমাকে করতেই হবে। এই বয়েসে একটু কফি খেতে যাবেন? কাজ দেবেন? এগুলো করতে পারব না। সবাই তো চেনেই আমাকে। কাজ দিতে হলে দেবেন।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব শ্রীনন্দা। অনেকে ভেবেছিলেন, এ মাধ্যমে কাজ করে টাকা আয় করে থাকেন। তাদের উদ্দেশে শ্রীনন্দা বলেন, “অনেকেরই ভ্রান্ত ধারণা এটাও আমার পেশা। এখান থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা যায়। আমি নিজেও আগে বিষয়টা জানতাম না। পোস্ট করতে করতে বুঝেছি। আমি এখন মুম্বাইয়ে মায়ের সঙ্গে পুরোদমে নাচের স্কুল চালাচ্ছি। এখন মোট ছয়টা ব্রাঞ্চ এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। সব মিলিয়ে ভালো আছি।”

সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রলের শিকার হন শ্রীনন্দা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার তো একেবারেই গন্ডারের চামড়া হয়ে গিয়েছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বলেছিলেন, ‘রিল মামনি’। আমি আর মা এটা শুনে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। মাঝেমধ্যে এসব বেশ মজাও লাগে। তবে যে পরিমাণ ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটা খুব মন থেকেই ভক্তরা দিচ্ছেন বলে আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, এটা আমার জীবনে আশীর্বাদ।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ