অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বাধাহীন নেতানিয়াহু
Published: 9th, April 2025 GMT
কিছুদিন আগে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরই মধ্যে তিন সপ্তাহ পার হয়েছে। প্রাণ গেছে সহস্রাধিক মানুষের। এ পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর তীব্র চাপ সৃষ্টির কথা ছিল। প্রকাশ্য ও গোপনে নিন্দার ঝড় বয়ে যেতে পারত। নেতানিয়াহু যাতে গাজায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে লাগাম টানেন, সে বার্তা আসত ইউরোপ ও হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে।
গতকাল মঙ্গলবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০ জানুয়ারি পদত্যাগের আগ পর্যন্ত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মাঝেমধ্যেই নেতানিয়াহুকে চাপ দিতেন। এ নিয়ে প্রায়ই তিনি ব্যর্থও হয়েছেন। এখন বাইডেন ক্ষমতায় নেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তাঁর পূর্বসূরির মতো আঙুল তোলার কোনো ইচ্ছা তাঁর নেই। ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে এখন ইউরোপ বিভ্রান্ত। সে সুযোগে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের সংসদে তাঁর জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সুসংহত করেছেন, যা তাঁকে গাজায় পদক্ষেপ নেওয়ার আরও রাজনৈতিক সুযোগ করে দিয়েছে।
সোমবার নেতানিয়াহু ওভাল অফিসে ট্রাম্পের পাশে যখন বসেছিলেন, তখন প্রেসিডেন্ট তাঁকে ‘এক মহান নেতা’ বলে প্রশংসা করেন। তবে যে দুটি প্রধান দাবি নিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন, সেগুলো অর্জিত হয়নি। তাঁর সফরের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের ওপর আরোপিত ১৭ শতাংশ মার্কিন শুল্ক থেকে ছাড় পাওয়া এবং ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক পদক্ষেপের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন সমর্থন অর্জন।
এ দুটি বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সমর্থন তাঁর জোটেনি। বৈঠকে একসময় যখন ট্রাম্প বাণিজ্য, অভিবাসন ও মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন নেতানিয়াহুকে বেশ খানিকটা মনোযোগহীনও দেখা যায়।
কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে সামরিক অভিযান শুরুর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে ট্রাম্প বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নীরব ছিলেন। তিনি গত সপ্তাহে প্রকাশিত অ্যাম্বুলেন্স ও একটি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির ওপর ইসরায়েলের হামলার কোনো উল্লেখ করেননি, যেখানে ১৫ জন জরুরি স্বাস্থ্যসেবাকর্মী নিহত হয়েছিলেন। ৩ এপ্রিল স্কুল গড়ে ওঠা আশ্রয়কেন্দ্রে হামলায় শিশুসহ কয়েক ডজন মানুষ নিহত হন। এসব বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প।
চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের পরিচালক সানাম ওয়াকিল বলেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবে মনে করি, নেতানিয়াহু কৌশল হিসেবে বাড়তি চেয়ে প্রাপ্তির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। মাত্র দুই মাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর গাজার অভ্যন্তরে ক্রমবর্ধমান ইসরায়েলি হামলার মুখে ট্রাম্পের এমন নীরবতা নেতানিয়াহুকে এ কাজে আরও উৎসাহিত করছে।
ট্রাম্প-নেতানিয়াহু বৈঠকের বিস্তারিত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অনেকটা হঠাৎ করেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে ওয়াশিংটনে ডেকে পাঠান। হাঙ্গেরি সফর শেষে তড়িঘড়ি করে সরাসরি ওয়াশিংটন যান নেতানিয়াহু। দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, নেতানিয়াহুকে পাশে রেখে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প জানান, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছে ওয়াশিংটন। সেই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘ওই আলোচনা সফল না হলে ইরানের জন্য চরম দুর্দিন নেমে আসবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, এ বক্তব্যে ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচির বিরুদ্ধে ‘প্রয়োজনে’ ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চালানোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
নেতানিয়াহু বলেন, ইরানের পরমাণু প্রকল্প বন্ধ করতে কূটনীতিক সমাধান পাওয়া গেলে ভালো হবে। তবে যেভাবেই হোক না কেন, ওই প্রকল্প বন্ধ করতেই হবে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পরই ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, সরাসরি নয়, ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা হবে। পরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, ওমানে দুই দেশ ‘উচ্চ পর্যায়ের পরোক্ষ আলোচনায়’ অংশ নেবে। এটা একই সঙ্গে একটি সুযোগ ও একটি পরীক্ষা। বল এখন যুক্তরাষ্ট্রের কোর্টে।
ইরানের তিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, পরোক্ষ আলোচনা ভালোভাবে এগোলে পরবর্তী সময় সরাসরি আলোচনায় রাজি হতে পারে তেহরান। তবে দেশটি সম্প্রতি ৬০ শতাংশ খাঁটি ইউরেনিয়াম পরিশোধন করতে সক্ষম হয়েছে, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরি ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার হয় না। পাশাপাশি, তেহরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের তাদের পরমাণু অবকাঠামো পরীক্ষা করতে বাধা দিয়েছে।
বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে গাজায় নতুন জিম্মি মুক্তির চুক্তির প্রসঙ্গ আসে। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা এখন (গাজায়) আরেকটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি, সফল হবো। আমরা সব জিম্মির মুক্তি করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’ লন্ডনভিত্তিক সৌদি সংবাদমাধ্যম আশার্ক আল-আওসাত জানায়, মিসর একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। তবে ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা জানান, তারা এখনও কায়রোর কাছ থেকে কিছু পাননি। ট্রাম্প জানান, গাজা যুদ্ধ বন্ধের দিন বেশি দূরে নয়।
এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার এক দিনে গাজায় বিমান হামলায় আরও ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২১৩ জন। এদিন গাজা সিটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ইসরায়েলের বিমান হামলায় অন্তত দু’জন নিহত হন। দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। মধ্যাঞ্চলের দায়ের আল বালাহ সিটিতে ইসরায়েলের বোমায় এক পরিবারের ১১ সদস্য নিহত হয়েছেন।
গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪৭ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৫০ হাজার ৮১০ জন নিহত ও ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৮ জন আহত হয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল গ জ গণহত য ইসর য় ল র পর ক ষ ইসর য পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
নেতানিয়াহু অঞ্চলজুড়ে আগুন লাগাতে চাইছেন: ইরানের প্রেসিডেন্টকে এরদোয়ান
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন লাগাতে চাইছেন বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু ইরানে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন। গতকাল শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক ফোনালাপে এরদোয়ান এ কথাগুলো বলেছেন।
এরদোয়ানের দপ্তরের দেওয়া এক বিবৃতি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান বলেছেন, গাজায় হওয়া জাতিগত হত্যার ঘটনা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরাতে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইরানি প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সৌদি আরব, পাকিস্তান, জর্ডান ও মিসরের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছেন এরদোয়ান। ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি।
শনিবার সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোয়ান সতর্ক করে বলেন, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরায়েলই এখন এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তুরস্ক সরকারের যোগাযোগবিষয়ক দপ্তরের বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
দপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, এরদোয়ান মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। সিসিকে এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েলের হামলা গভীরভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করেছে। আইনের তোয়াক্কা না করার যে মনোভাব নেতানিয়াহুর মধ্যে দেখা গেছে তা বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির।
এরদোয়ান আরও সতর্ক করেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।