বগুড়ায় অপহৃত ট্রাকচালককে উদ্ধার অভিযানে পুলিশ সদস্যদের ওপর যুবদলের নেতার নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের নারুলী পুলিশ ফাঁড়ি–সংলগ্ন ধাওয়াপাড়া এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা হয়।

হামলায় বগুড়া শহরের নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই ফিরোজ ও কনস্টেবল মাহবুব গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া বগুড়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূর আলম মণ্ডল (সুইট) ও তাঁর এক সহযোগীকে আজ ভোরে সোনাতলা উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নূর আলমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সারিয়াকান্দি থেকে শহরে বালু সরবরাহ করতে আসা একটি ট্রাক থামিয়ে চালককে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেন নূর আলম ও তাঁর সহযোগীরা। এরপর তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ট্রাকটি ধাওয়াপাড়া এলাকায় রাখা হয়। পরে বালু নামিয়ে ট্রাকটি খালি অবস্থায় একটি স মিলের পাশে রাখা হয়।

অভিযোগ পেয়ে রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করে। তখন অপহরণকারী দলের সদস্যরা চাবি ও চালককে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ ধাওয়া করলে নূর আলমের নেতৃত্বে একদল লোক হামলা করেন। তাঁদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে এটিএসআই ফিরোজ ও কনস্টেবল মাহবুব গুরুতর আহত হন।

বগুড়া জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে নূর আলম মণ্ডলকে ইতিমধ্যে যুবদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা পুলিশের মুখপাত্র) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে রাতেই অভিযান চালানো হয়। সোনাতলা উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চর থেকে মূল হোতা নূর আলম ও তাঁর এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা এবং অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের দায়ে আলাদা দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র আলম য বদল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি

রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।

নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’

ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’

পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।

এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’

পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনে এসআইদের প্রতি ডিএমপি কমিশনারের আহ্বান
  • রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি