‘পুষ্পা’ তারকা আল্লু অর্জুনকে নিয়ে পরিচালক অ্যাটলি কুমারের বড় বাজেটের সিনেমা নির্মাণের ফিসফাস দীর্ঘ দিন ধরে উড়ছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন যাত্রার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন আল্লু অর্জুন। আপাতত সিনেমাটির নাম রাখা হয়েছে— ‘এএ২২×এ৬’।

আল্লু অর্জুনকে নিয়ে এলাহি আয়োজন করছেন অ্যাটলি কুমার। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সাইন্স ফিকশন-অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা হবে এটি। আল্লু অর্জুন তার ইনস্টাগ্রামে ভিডিও শেয়ার করে বেশ কিছু দিকে ইঙ্গিতও দিয়েছেন। এটি প্রযোজনা করছে সান পিকচার্স। প্রতিষ্ঠানটিও তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।

এ ভিডিওতে দেখা যায়, চেন্নাইয়ে অবস্থিত সান পিকচার্সের অফিসে উপস্থিত হন আল্লু অর্জুন ও অ্যাটলি কুমার। সেখানে প্রযোজক কালানিথি মারনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আলোচনা করেন তারা।

ভিডিওর এক অংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে অবস্থিত একটি ভিএফএক্স স্টুডিওতে হাজির হন আল্লু অর্জুন-অ্যাটলি। স্টুডিওতে রাখা মাস্ক, গিয়ার ট্রাই করতে দেখা যায় আল্লু অর্জুনকে। নিজের ব্যক্তিত্বের থ্রি-ডি ক্যারেক্টারকে পর্দায় দেখানোর প্রক্রিয়াও পরীক্ষা করেন।

এসময় সেখানে হলিউডের কয়েকজন বিখ্যাত টেকনিশিয়ানের সঙ্গে আলোচনা করেন আল্লু-অ্যাটলি। তাদের মধ্যে রয়েছেন আয়রনহেড স্টুডিওর সিইও এবং আর্ট ডিরেক্টর জোস ফার্নান্দেজ। ‘স্পাইডার-ম্যান: হোমকামিং’, ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’, ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আল্ট্রোন’-এর মতো সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি।

তা ছাড়াও দেখা যায় ‘আয়রন ম্যান টু’, ‘ট্রান্সফরমারস: রাইজ অব দ্য বিটস’-এর মতো সিনেমার ভিএফএক্স গুরু জেমস ম্যাডিগানকে! ‘এএ২২×এ৬’ সিনেমার চিত্রনাট্য পড়ে বিস্মিত তিনি। জেমস বলেন— “চিত্রনাট্য পড়ে এখনো মাথা ঘুরছে।” স্পেকট্রাল মোশনের আর্ট ডিরেক্টর মাইক এলিজালদের সিনেমাটির গল্প প্রসঙ্গে বলেন— “এরকম কিছু কখনো পড়িনি। এটা আমার স্বপ্নের প্রজেক্ট।” এলাহি আয়োজনের জন্য প্রয়োজন অর্থ। তা হলে কত টাকা বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছেন নির্মাতারা? চলুন তা জেনে নিই—
 
আল্লু অর্জুন-অ্যাটলির সিনেমার বাজেট ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা)। এ বাজেট থেকে শুটিংয়ের জন্য ব্যয় হবে ২০০ কোটি রুপি, ভিএফএক্সে (ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট) খরচ হবে ২৫০ কোটি রুপি।

সিনেমাটিতে অভিনয়ের জন্য আল্লু অর্জুন পারিশ্রমিক নেবেন ১৭৫ কোটি রুপি। পাশাপাশি সিনেমাটির ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ পাবেন এই তারকা। পরিচালক অ্যাটলি কুমার পারিশ্রমিক নেবেন ১০০ কোটি রুপি। যার মাধ্যমে ভারতীয় পরিচালকদের পারিশ্রমিকের রেকর্ড ভেঙে দিলেন তিনি।   

আল্লু অর্জুন ছাড়াও সিনেমাটিতে আর কে কে অভিনয় করবেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। তবে প্রথম সারির তারকারা এতে অভিনয় করবেন। তা ছাড়া বিশ্বের সেরা টেকনিশিয়ানরা সিনেমাটিতে কাজ করবেন। আগামী আগস্ট মাসে শুটিং শুরুর পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতারা।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, সিয়াসাত ডটকম

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন আল ল

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ