জুলাইয়ে গণহত্যা চালানো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়মুক্তি দেওয়ার আইনের ১৩২ ধারা বাতিল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন’।

এ সময় তারা ‘হত্যাকারীর বিরুদ্ধে, লড়াই হবে একসাথে’, ‘খুনি পুলিশের বিরুদ্ধে, লড়াই হবে একসাথে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘খুনিদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘১৩২-এর কালো আইন বাতিল করো, করতে হবে’, ‘১৩২ সেকশন—ডিটেকশন, ডিটেকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, “১৮৯৮ সালের এক দণ্ডবিধি অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়, তা সে যেই অপরাধেই অপরাধী হোক না কেন। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এক আইন, আর যারা প্রজাতন্ত্রের মালিক সাধারণ জনগণ তাদের জন্য আরেক আইন- এই বৈষম্য কেন?”

তিনি বলেন, “এই আইনের মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করতে চায়, সরকারি কর্মকর্তারা ফেরেস্তা। এ ধরনের আইনকে আমরা ধিক্কার জানাই। কাল বিলম্ব না করে হয় এই আইনকে সংশোধন করুন, না হয় তা বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

আইনের ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী আন ল’ফুল গ্যাদারিং বা বেআইনি কোনো সমাবেশে পুলিশ চাইলে লাঠিচার্জ, এমনকি গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করতে পারবে। এ আইনের ১২৭ নম্বর ধারায় তাদের গুলি চালানোর স্বাধীনতা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। ১৩২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, গুলি চালানো ওই পুলিশদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া যাবে না। যদি কেউ মামলা করতে চায়, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। আমার প্রশ্ন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কি কোনো বেআইনি আন্দোলন ছিল?”

তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবার গণহত্যাকারী পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে এ আইনে তাদের মামলা থেকে রেহায় দেওয়া হয়েছে। একেকটা মামলা নিতে প্রায় ৭-৮ মাস ধরে শহীদ পরিবারকে ঘোরানো হচ্ছে। আমরা সরকারকে বলব, আপনারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বেআইনি করার মতো ন্যক্কারজনক কাজ থেকে বেরিয়ে আসুন। অনতিবিলম্বে এই আইন বাতিল করুন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন “

এস এম তারিম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আজ লজ্জিত হয়ে এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা ৫ আগস্টের পর আজ ৮ মাস পরেও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে পারিনি। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এই পুলিশি রাষ্ট্র থেকে আমরা মুক্তি পাব, ফ্যাসিস্ট রেজিম থেকে মুক্তি পাব। কিন্তু যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ভাইদের রক্ত ঝরিয়েছে, সেই কর্মকর্তাদের যদি আমরা শাস্তির আওতায় না আনতে পারি, তাহলে কীভাবে আমরা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পাব!”

তিনি বলেন, “কেন এতদিনেও ১৩২ এর এই কালো আইন বাতিল হলো না? আজ যেসব শহীদ ভাইদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার হলে তাদের সিটটা ফাঁকা থাকছে। এটা কেন থাকছে, সেই প্রশ্নের জবাব কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিতে পারবে? সেটা তারা দিতে পারতো শুধু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই গণঅভ য ত থ ন কর মকর ত গণহত য আইন র সরক র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’

অন্তবর্তী সরকারের শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “বাংলাদেশ বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সবাইকে ধৈর্য ধরে বিচার প্রক্রিয়া, সংস্কার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। সারাদেশ এখন জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অপেক্ষায় রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) জাহাঙ্গীরনগর বিবিদ্যালয়ে নির্মিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য ২৪’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, অদম্য ২৪ উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নির্মিত জুলাইয়ের ভিডিও ও ফটো ডকুমেন্টারি উপভোগ করেন।

আরো পড়ুন:

জবির পরিত্যক্ত ডাস্টবিনগুলো সংস্কার করল ছাত্রদল

রাকসু থেকে জাতীয় পর্যায়ের নেতৃত্বে যারা

আদিলুর রহমান খান বলেন, “১ বছর আগে বাংলাদেশে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, সেই ঐক্যই পারে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে। বিচার প্রশ্নে বলতে চাই কোনো অবস্থাতেই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া সরকার বিচারের ক্ষেত্রে দুর্বলতা স্কোপ রাখবে না। খুব দ্রুতই বেশ কয়েকটি বিচারের কাজ দৃশ্যমান হবে।”

তিনি আরো বলেন, “তরুণ ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি এবং দেশকে বাঁচানোর জন্য জীবন দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। সেই ঐক্য ধরে রাখতে হবে।” এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভ ‘অদম্য-২৪’ বিভাজন ভুলে একাত্ম হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

সমাপনী বক্তব্যে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “সংঘবদ্ধ আন্দোলনে ৫ আগস্ট আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এর মানে এই নয় যে, অন্য যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আর স্বর আপনারা শুনবেন না। আপনারা দেখবেন, জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা সচেতন এবং কথা বলার ব্যাপারে উন্মুক্ত।”

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এই স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে আবার স্মরণ করিয়ে দিলাম, আমরা যদি বাংলাদেশে কোনো অশান্তি দেখি, বৈষম্য দেখি, পরাজয়ের কালো মেঘ দেখি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অদম্য সংগ্রামীরা আবারো তাদের সেই কার্যক্রম শুরু করবে। গোটা বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে, আবার বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবে।

অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, উপ -উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব, প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলমসহ জাহাঙ্গীরনগরের সঙ্গে জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্যরাও বক্তব্য দেন।

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিচার প্রক্রিয়া ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে’
  • তিতুমীর কলেজে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী
  • হাসিনাকে ১০ বার ফাঁসিতে ঝোলালেও তার অপরাধ কমবে না: নাহিদ 
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • নরসিংদীতে আজ এনসিপির পদযাত্রা 
  • ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬০ হাজার ছাড়াল
  • পাবিপ্রবিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রজেক্ট শো
  • গণহত্যার বিচারের পর পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি রেজাউল করীমের
  • নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পথে নেমেছি: নাহিদ ইসলাম