আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে মানববন্ধন
Published: 10th, April 2025 GMT
জুলাইয়ে গণহত্যা চালানো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়মুক্তি দেওয়ার আইনের ১৩২ ধারা বাতিল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলন’।
এ সময় তারা ‘হত্যাকারীর বিরুদ্ধে, লড়াই হবে একসাথে’, ‘খুনি পুলিশের বিরুদ্ধে, লড়াই হবে একসাথে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘খুনিদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘১৩২-এর কালো আইন বাতিল করো, করতে হবে’, ‘১৩২ সেকশন—ডিটেকশন, ডিটেকশন’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ঢাবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, “১৮৯৮ সালের এক দণ্ডবিধি অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়, তা সে যেই অপরাধেই অপরাধী হোক না কেন। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য এক আইন, আর যারা প্রজাতন্ত্রের মালিক সাধারণ জনগণ তাদের জন্য আরেক আইন- এই বৈষম্য কেন?”
তিনি বলেন, “এই আইনের মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করতে চায়, সরকারি কর্মকর্তারা ফেরেস্তা। এ ধরনের আইনকে আমরা ধিক্কার জানাই। কাল বিলম্ব না করে হয় এই আইনকে সংশোধন করুন, না হয় তা বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
আইনের ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী আন ল’ফুল গ্যাদারিং বা বেআইনি কোনো সমাবেশে পুলিশ চাইলে লাঠিচার্জ, এমনকি গুলি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করতে পারবে। এ আইনের ১২৭ নম্বর ধারায় তাদের গুলি চালানোর স্বাধীনতা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। ১৩২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, গুলি চালানো ওই পুলিশদের বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া যাবে না। যদি কেউ মামলা করতে চায়, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। আমার প্রশ্ন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কি কোনো বেআইনি আন্দোলন ছিল?”
তিনি বলেন, “আমরা দেখেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবার গণহত্যাকারী পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে এ আইনে তাদের মামলা থেকে রেহায় দেওয়া হয়েছে। একেকটা মামলা নিতে প্রায় ৭-৮ মাস ধরে শহীদ পরিবারকে ঘোরানো হচ্ছে। আমরা সরকারকে বলব, আপনারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বেআইনি করার মতো ন্যক্কারজনক কাজ থেকে বেরিয়ে আসুন। অনতিবিলম্বে এই আইন বাতিল করুন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন “
এস এম তারিম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “আজ লজ্জিত হয়ে এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা ৫ আগস্টের পর আজ ৮ মাস পরেও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে পারিনি। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম এই পুলিশি রাষ্ট্র থেকে আমরা মুক্তি পাব, ফ্যাসিস্ট রেজিম থেকে মুক্তি পাব। কিন্তু যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ভাইদের রক্ত ঝরিয়েছে, সেই কর্মকর্তাদের যদি আমরা শাস্তির আওতায় না আনতে পারি, তাহলে কীভাবে আমরা ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পাব!”
তিনি বলেন, “কেন এতদিনেও ১৩২ এর এই কালো আইন বাতিল হলো না? আজ যেসব শহীদ ভাইদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার হলে তাদের সিটটা ফাঁকা থাকছে। এটা কেন থাকছে, সেই প্রশ্নের জবাব কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিতে পারবে? সেটা তারা দিতে পারতো শুধু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের মাধ্যমে।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই গণঅভ য ত থ ন কর মকর ত গণহত য আইন র সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে মামুন হত্যা : মাহবুবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে মানববন্ধন
রূপগঞ্জে ব্যবসায়ী মামুন ভুঁইয়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মাহবুবের নাম জড়িয়ে ‘অপপ্রচার’ চালানোর অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা।
শনিবার (১৪ জুন) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাহবুবুর রহমানকে জড়ানোর চেষ্টার তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রতিপক্ষকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ ও ‘গডফাদার শামীম ওসমানের ব্যবসায়ী অংশীদার’ বলে আখ্যায়িত করে নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত জায়েদুল ইসলামকে মাহবুবুর রহমানের 'ভাতিজা' বলে চালানো প্রচারণাকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করেন। তারা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, “জায়েদুল ইসলাম মাহবুবুর রহমানের রক্তের সম্পর্কের কেউ নন।
সে অপরাধ করলে তার শাস্তি তাকেই পেতে হবে। তার ব্যক্তিগত অপরাধের দায় কোনো নেতা নিতে পারে না। রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই একটি মহল এই মিথ্যা অপপ্রচারে নেমেছে।”
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, যারা বিএনপির দীর্ঘ ১৭ বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় থেকে এখন সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে, তারাই রাজপথের ত্যাগী নেতা মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
তারা বলেন, "যারা আজ মাহবুব ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তারা আওয়ামী লীগের গডফাদার শামীম ওসমানকে দেশ থেকে পালাতে সহায়তা করেছেন এবং এখন তার ব্যবসা-বাণিজ্য ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন।"
বক্তারা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলে বলেন, "এই রফিকুল ইসলাম গত বছরের জুলাই মাসে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তাবলিগ জামাতের কথা বলে রাজপথ থেকে সরে গিয়েছিলেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপির সুদিনে তিনি আবার আবির্ভূত হয়ে রূপগঞ্জে লুটপাট ও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন।"
কর্মসূচি থেকে রফিকুল ইসলামকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয় এবং তাকে আশ্রয়দাতা নেতার বিরুদ্ধেও কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা রাসেল মাহমুদ উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, "আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মতো জগদ্দল পাথরকে দেশ থেকে সরাতে পেরেছি। আপনি তো সেই তুলনায় ছোট একটি টুকরা। অপপ্রচার থেকে সরে না দাঁড়ালে আপনার পিঠের চামড়া তুলে সোজা করতে বাধ্য হব।"
বক্তারা মাহবুবুর রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার তুলে ধরে বলেন, তিনি ছাত্রদল থেকে শুরু করে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে তৃণমূল থেকে আজকের অবস্থানে এসেছেন। তাকে ষড়যন্ত্র করে থামানো যাবে না।
মানববন্ধন শেষে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে চাষাঢ়ায় গিয়ে শেষ হয়।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১০ জুন) রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন খোকাকে স্থানীয়রা আটক করলে তাকে ছাড়িয়ে নিতে যান ছাত্রদল নেতা জায়েদুল ইসলাম। এ সময় সৃষ্ট সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ব্যবসায়ী মামুন ভুঁইয়া (৩৫) নিহত হন।
এই ঘটনায় মামুনের ভাই ও যুবদল নেতা বাদল ভুঁইয়া বাদী হয়ে জায়েদুলকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই রূপগঞ্জে বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু এবং কাজী মনিরুজ্জামানের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। নিহত মামুনের পরিবার দিপু ভূঁইয়ার অনুসারী এবং অভিযুক্ত জায়েদুল কাজী মনিরুজ্জামানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।