রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)-এর চেয়ারম‌্যান থাকাকা‌লে সরকা‌রি ক্ষমতার অপব‌্যবহার করে বি‌ভিন্ন প্রক‌ল্পে ঘুষ দুর্নী‌তির মাধ‌্যমে বিপুল অবৈধ সম্প‌দের মা‌লিক হ‌য়ে‌ছেন মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকার। এমন‌কি স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশনসহ প‌রিবা‌রের না‌মে বেনা‌মেও সম্পদ গ‌ড়ে‌ছেন তি‌নি। এসব অভিযোগ আম‌লে নি‌য়ে মো.

সিদ্দিকুর রহমানের বিরু‌দ্ধে অনুসন্ধা‌নে নে‌মে‌ছে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশন।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম এ তথ‌্য নি‌শ্চিত ক‌রে‌ছেন।

জানা গে‌ছে, অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের পরিচালক মো. আবুল হাসনাতকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক বিষাণ ঘোষ ও উপ-সহকারী পরিচালক আফিয়া খাতুন।

দুদক জানায়, সা‌বেক চেয়ারম‌্যান সি‌দ্দিকুর রহমা‌নের যাবতীয় ন‌থিপত্র চে‌য়ে রাজউ‌কে চি‌ঠি দি‌য়ে‌ছে দুদক। ২০২২-২০২৪ সাল পর্যন্ত রাজউকের বোর্ডসভার তথ্য চেয়ে বর্তমান রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসব তথ্য আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে দুদকে পাঠাতে বলা হ‌য়ে‌ছে। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত এবং নিজের ও পরিবারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও খ‌তি‌য়ে দেখা হ‌চ্ছে। তাছাড়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে কর্মকালে সিদ্দিকুরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তার পরিপ্রেক্ষিতে হওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভাগীয় ব্যবস্থার নেওয়ার কোনো তথ্যাদি থাকলে তা আগামী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে দুদকে পাঠাতে বলা হয়েছে।

একইস‌ঙ্গে রাজউকের সাবেক এই চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রীসহ প‌রিবা‌রের ব্যাংক লেনদেন যাচাইয়ে দেশের ৬৪ তফসিলি ব্যাংকে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক।

২০২৪ সালের এপ্রিলে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকারকে দুই বছর মেয়াদে রাজউক চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ক্ষমতার পালাবদলে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তার নিয়োগ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পরে আবার সেই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে নিয়োগ পুনর্বহালের কথা জানানো হয় ২২ সেপ্টেম্বর। গত মার্চে তার নিয়োগ বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার।

এর আগে সিদ্দিকুর রহমান ও তার স্ত্রী গাজী রেবেকা রওশন যে কোনো মুহূর্তে দেশত্যাগ করতে পারেন- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে আবেদন করেছে দুদক।
 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ দ ক র রহম ন র জউক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা