যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ছুঁয়েছে ডিমের দাম। মার্চ মাসে দেশটিতে এক ডজন ডিমের দাম দাঁড়িয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৩ ডলার। মার্চের শেষে পাইকারি দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকেই ডিমের দাম বাড়ছে। ফেব্রুয়ারিতে এক ডজন ডিমের দাম পৌঁছায় ৫ দশমিক ৯০ ডলারে। দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে এক ডজন ডিমের দাম ছিলো গড়ে দুই ডলার।

গত মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম ৩৫ শতাংশ কমে এসেছে। তিনি এর জন্য কৃষিমন্ত্রী ব্রুক রোলিন্সের প্রশংসা করে বলেন, দাম কমানোর ক্ষেত্রে তিনি ‘ভালো কাজ’ করেছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের তথ্যমতে, এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য ছয়টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের (মুরগির মাংস, কমলার রস, গরুর কিমা, বেকন ও পাউরুটি) তুলনায় ডিমের দাম এখনো ৭৫ শতাংশ বেশি।

ডিমের দামে বড় ধরনের ওঠানামায় ডিম পাচারের ঘটনা বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশকে ডিম রপ্তানি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সরকার ইতিমধ্যে ডেনমার্ক, তুরস্ক ও ব্রাজিলের মতো দেশগুলো থেকে ডিম আমদানির চেষ্টা করছে। আর ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির বিচার বিভাগ।

যুক্তরাষ্ট্রের ডিমের দাম বাড়ার অন্যতম প্রধান কারণ বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব। ২০২২ সাল থেকে দেশটি এ সংকট মোকাবিলায় ধুঁকছে। চলতি বছরে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণে একজনের মৃত্যু হয়েছে। খামারিরা তিন কোটির বেশি ডিম দেওয়া মুরগি নিধন করেছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, যদি কোনো খামারে একটি মুরগিও আক্রান্ত হয় তাহলে পুরো খামারের সব মুরগি মেরে ফেলতে হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, গত দুই সপ্তাহে নতুন করে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। তবে এরপরও ডিম উৎপাদন ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগছে। কৃষি অর্থনীতিবিদ জাডা থম্পসন স্কাই নিউজকে বলেন, একটি মুরগি ডিম দিতে শুরু করতে সাধারণত ছয় মাস সময় লাগে।

স্কাই নিউজ জানায়, কিছু অঞ্চলে ডিমের দাম আরও বেশি বেড়ে গেছে। কোথাও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ৮ দশমিক ৯৬ ডলারে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এক সংবাদে জানায়, ক্যালিফোর্নিয়ায় কিছু দোকানে ডিমের দাম প্রতি ডজন ১২ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। বাড়তি দাম সামলাতে অনেক রেস্তোরাঁ, যেমন ডেনিস ওয়াফেল হাউস চেইন তাদের মেনুতে ডিমের তৈরি খাবারের পদে অতিরিক্ত দাম যুক্ত করেছে।

ডিমের দাম বাড়ার জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দুষছেন ট্রাম্প। মার্চের শুরুতে কংগ্রেসে দেওয়া এক ভাষণে তিনি বলেন, জো বাইডেন ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়েছেন। ডিমের দাম এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। দাম কমানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন তাঁরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ডজন ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ