Prothomalo:
2025-09-18@02:57:38 GMT

কক্সবাজারের মেয়েটি

Published: 12th, April 2025 GMT

কক্সবাজার ট্যুরে আমাদের খুবই অল্প সময় হাতে নিয়ে কিছু জায়গায় ঘোরা হয়েছিল। এর মধ্যে আমরা একটা জায়গায় শুধু ‘সিএনজি মামার’ অনুরোধে ঘুরতে যাই। সেখানে পৌঁছাই খুব ভোরে। তখনো পার্কের গেট খোলার সময় হয়নি।

আমরা ফিরে যাব ভাবছি, এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন ডাক দিলেন। তাকিয়ে দেখি, গেটের পাশেই কোনোমতে কয়েকটা ভাঙাচোরা কাঠ আর বাঁশের খুঁটির ওপর টিকে থাকা একটা চায়ের দোকান। সেখান থেকেই মাথা বের করে একজন ভদ্রমহিলা জানালেন, পার্কের দায়িত্বরত গাইড এখনো আসেননি। তবে আমরা চাইলে তিনি তাঁর মেয়েকে পাঠাবেন আমাদের গাইড করার জন্য।

রিজার্ভ করা সিএনজি মামার চোখের ইশারায় আস্থা পেয়ে আমরা সময়টুকু আর নষ্ট করতে চাইলাম না।

তখনো পার্কের কাউন্টার খোলেনি। সিএনজি মামা স্থানীয় লোক। তাই টাকা রেখে নিরাপত্তাকর্মীরা ঢুকতে দিলেন।

ভেতরে যাওয়ামাত্রই কেউ একজন সালাম দিল আমাদের।

‘আমি রুবা।’

স্বাভাবিক কুশলাদি বিনিময় হলেও আমাদের সবার মধ্যে কেমন এক মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ল। ১২–১৩ বছর বয়সী হবে মেয়েটা। পরিবারের সঙ্গে পার্কের ভেতরেই একটি ছোট্ট আশ্রয় ওদের।

মেয়েটির স্মিত হাসি, স্পষ্ট উচ্চারণ, নেই কোনো আঞ্চলিকতা। মুগ্ধ করার মতো। আমাদের সময়স্বল্পতা বুঝেই সে বেশ দ্রুততার সঙ্গে ভেতরের দর্শনীয় স্থানগুলোতে নিয়ে গেল। সেই জায়গাগুলোর চমৎকার সব ইতিহাস শোনাল। আমরা মেয়েটিকে তার নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস  করছিলাম। কেননা তার বাচনভঙ্গি, চলাফেরা প্রথমেই সবার নজর কেড়েছে।

পার্কের ভেতরে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আমরা অপলক দৃষ্টিতে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখছিলাম। দূরে পাহাড়ের বুকে ছোট্ট কিছু আবাস চোখে পড়ল। রুবা হাত উঁচিয়ে দেখাল, ওখানেই ওরা একসময় থাকত। পাহাড়ের সবুজের মাঝে, গুটিকয় বাড়ি, তাদের জন্যই গড়ে ওঠা চার–পাঁচটা দোকানের সমন্বয়ে ছোট্ট একটি বাজার। জীবনের কী অদ্ভুত রূপ!

রুবা ওর বড় বোনের কথা বলল। বোনটি লেখাপড়া করত। এ রকমভাবে গাইড করত পর্যটকদের। পরে কিশোরী বয়সেই বিয়ে হয়ে যায়।

রুবা যখন আমাদের নিয়ে সিঁড়ি কাটা পাহাড়ের ওপরে ওঠে, তখনই পেছন থেকে একটি কুকুর দৌড়ে এসে ওর গায়ে উঠতে থাকে। আমরা রীতিমতো ভয় পেয়ে যাই। ওদের আদর বিনিময় আমাদের নজর কাড়ে। রুবা ওকে কোনোমতে শান্ত করে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, ‘ওর নাম টাইগার।’

এই পার্কের ভেতরে রুবার একমাত্র সাথি এই টাইগার। বাবা–মা দুজনই চায়ের দোকানে ব্যস্ত থাকেন। আর রুবা স্কুলের সময় বাদে বাকি সময়টা টাইগারের সঙ্গেই এই বিশাল এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। কী সুন্দর জীবন! পরিশুদ্ধ বাতাস, সবুজ প্রকৃতি, নেই কোনো কৃত্রিম আবেগ, প্রযুক্তির ছোবল।

যে কিশোর বয়সের সুন্দর সময়গুলো আমাদের শহরের ছেলেমেয়েরা মোবাইলের স্ক্রিনে মাথা গুঁজে হারিয়ে ফেলে। পাঁচজন মানুষের কাছে নিজেকে উপস্থাপনের বেলায় ব্যক্তিত্বের চেয়ে পোশাক আর মেকআপের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ভেতরটা ফাঁপা রয়ে যায়। সম্ভবত এসব কারণেই রুবার সাধারণ জীবনের গল্প আমাদের এতটা বিমোহিত করছিল!

তবে দিনের যে সময়ে পর্যটকদের ভিড় থাকে, রুবার তখন এখানে আসা নিষেধ! নগরজীবন থেকে দূরে থাকলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর ঠিকই রাখেন রুবার মা–বাবা।

এলাকাটি ঘুরে দেখিয়ে রুবা আমাদের চমৎকার একটি স্থাপনার কাছে নিয়ে গেল। কক্সবাজারের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত একটি স্থাপনা, যেখানে কাঁকড়া থেকে শুরু করে ঝিনুক, শামুক, ডাব— সবকিছুর টেরাকোটা করা হয়েছে।

ফেরার সময় রুবার মা–বাবা আমাদের যখন বিদায় দেন, ছোট্ট করে একটা অনুরোধ করলাম, ওকে যেন পড়াশোনার সুযোগ দেন, সে যত দূর পড়তে চায়।

কক্সবাজার থেকে আসার সময় আমরা ব্যাগ ভর্তি করে অনেক কিছু নিয়ে এসেছিলাম, যেগুলো বাসায় এনে ভাগ–বাঁটোয়ারা করে, একে–ওকে দিয়ে, খেয়ে শেষ হয়ে গেছে।

কিন্তু রুবার গল্পটা মনের মধ্যে নিয়ে আসায় এটা আর শেষ হয়নি।

ডা.

মো. জাহিদুল আলম, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে