বগুড়ায় এসেনসিয়াল ড্রাগসের ৫৪ জনকে চাকরিচ্যুত
Published: 13th, April 2025 GMT
‘অতিরিক্ত জনবল’ দেখিয়ে সরকারি মালিকানাধীন এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) বগুড়ার কারখানা থেকে ৫৪ শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
চাকরিচ্যুতরা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির সময় তাদের বলা হয়, রোববার থেকে আর অফিসে আসতে হবে না।
তাদের অভিযোগ, চাকরি হারানোরা প্রত্যেকেই ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে এ কোম্পানিতে চাকরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী রাজনীতির ট্যাগ দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
কারখানায় সিনিয়র ক্লার্ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আমিনুল হক লোকমান। তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে চাকরি করছি এখানে। বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর ৫৪ জনকে চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত জনবলকে শ্রম আইনের ধারা-২৬ অনুযায়ী ১০ এপ্রিল থেকে টারমিনেশন করা হল।’
তিনি আরও বলেন, ‘বগুড়াসহ প্রতিটি কারখানাতেই অতিরিক্ত জনবল রয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস আগে বগুড়া কারখানায় ৮৫ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় আমাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমরা এই শেষ বয়সে কোথায় চাকরি পাব?’
প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে সততার সঙ্গে চাকরি করে আসছি। আমার বাড়ি গোপালগঞ্জে হওয়ায় আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অথচ গোপালগঞ্জ শহরে নাম করা বিএনপি পরিবারের মধ্যে আমরা একটি পরিবার। আমার বাবা মরহুম এস এ সবুর ১৯৭৮ সালে গোপালগঞ্জ সদর থানা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। গোপালগঞ্জে বাড়ি হওয়ার কারণে আমাকে আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্ল্যান্টপ্রধান) হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘অতিরিক্ত জনবল দেখিয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে ৫৪ জনকে টারমিনেশন করা হয়েছে। তবে বগুড়া কারখানায় ১ হাজার ১৬৭ জন শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। কারখানার প্ল্যান্ট অনুযায়ী সাড়ে ৮০০ শ্রমিক-কর্মচারী প্রয়োজন। অন্য কারখানাগুলোতেও অতিরিক্ত জনবল রয়েছে।’
কয়েক মাস আগে ৮৫ জন নতুন শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইডিসিএল কোম্পানিতে নিয়োগ এবং শ্রমিক ছাঁটাই প্রধান কার্যালয় থেকে করা হয়।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ কর চ য ত চ কর চ য ত কর গ প লগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা
‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়।
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে।
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে।
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে।
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।