পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সভায় শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর উল্লিখিত পরিমাণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হয়। বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) আগ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ওই টাকা ব্যাংকে অলস পড়ে থাকে।

এতে কোম্পানির ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সংকোচিত হয়। যার নেতিবাচক প্রভাব মুনাফা, ইপিএস ও এনএভির ওপর পড়ে। তাই কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে অলস টাকার ব্যবহার বাড়াতে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষে বিএসসি

অর্থ আত্মসাৎ, মশিউর সিকিউরিটিজের শাস্তি দাবি বিনিয়োগকারীদের

জানা যায়, এখন থেকে পরিচালনা পর্ষদ সভায় ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের অর্থ বিতরণের আগে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকে ফেলে রাখতে হবে না। এজিএমের একদিন আগে ব্যাংকে জমা দিলেই চলবে। তবে টাকা জমা দেওয়ার পর প্রয়োজনীয় নথিসহ বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করতে হবে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানির (বিএপিএলসি) একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লভ্যাংশ সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তন আনতে চলেছে বিএসইসি। সম্প্রতি সংস্থার চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিগগিরই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হবে।

তবে বিএপিএলসি এজিএমের ১০ দিন পরে লভ্যাংশের টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখার সুযোগ চেয়েছিল। তবে সেটি এজিএমের একদিন আগে সেটি জমা করার বিধান রাখতে যাচ্ছে বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, “বিএপিএলসির দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনা করেই কমিশন নতুন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাংকে নগদ লভ্যাংশের টাকা ফেলে রাখতে হবে না।”

তিনি আরো বলেন, “এজিএমের পর যদি টাকা না দেয়, তাহলে কীভাবে ধরব? কিন্তু, এজিএমের আগে কোম্পানি টাকা জমা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানাবে। এখানে ইস্যুয়ার কোম্পানিকেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এজিএমের একদিন আগে টাকা জমা দিতে বলা হচ্ছে।”

জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২২ অক্টোবরে বিএপিএলসির তৎকালীন সভাপতি এম আনিস উদ দৌলা সাবেক বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলামের কাছে চিঠি দেন। নগদ লভ্যাংশ পৃথক ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ প্রসঙ্গে সেই চিঠিতে বিএপিএলসি জানায়, পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করার ১০ দিনের মধ্যে ওই পরিমাণ অর্থ একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণ করতে হয়। ঘোষিত লভ্যাংশ এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত ধরা যায় না। এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে পর্ষদ ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ পরিবর্তন হতে পারে।

এছাড়া তালিকাভুক্তি বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, পর্ষদ সভায় লভ্যাংশ ঘোষণার পর এজিএম অনুষ্ঠিত হতে সাধারণত ৩ মাস সময়ের ব্যবধান থাকে। দেশের পুঁজিবাজারে অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে, যাদের ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের অংক অনেক বড়। ওই লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ যদি ৩ মাসের জন্য একটি পৃথক ব্যাংক হিসাবে অব্যবহৃত অবস্থায় রাখতে হয়, তবে তা কোম্পানির কার্যকর মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) সংকুচিত হয়। যার ফলে কোম্পানির মুনাফা, ইপিএস ও এনএভির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ওই চিঠিতে এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা লভ্যাংশ অনুমোদনের পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশের সমপরিমাণ অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে সংরক্ষণের অনুমতি চায় বিএপিএলসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএপিএলসির মহাসচিব আমজাদ হোসেন বলেন, “পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর ১০ দিনের মধ্যে পৃথক ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা দিতে হতো। আমরা এজিএমের ১০ দিন পরে জমা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। পর্ষদ সিদ্ধান্ত হওয়ার পরে জমা রাখলে ৩ মাস অলসভাবে পড়ে থাকে। ব্যাংকে অর্থ ফেলে রেখে লাভ নেই। অনেক কোম্পানির নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ শত শত কোটি টাকা। তিন মাস তা ব্যাংকে পড়ে থাকলে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকোচিত হয়ে যায়।”

তথ্য বলছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা থেকে বিনিয়োগকারীদের মাঝে নগদ লভ্যাংশ বিতরণের ঘোষণা আসে পর্ষদ সভায়। পর্ষদ সভার ১৪ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করতে হয়। রেকর্ড ডেটের ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে এজিএম করতে হয়।

ডিএসই লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ এর ২৮ ধারা অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা চূড়ান্ত হয় এজিএমে। এজিএমে লভ্যাংশ চূড়ান্ত হলে ৩০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হিসাবে পাঠাতে হয়।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, পর্ষদ ঘোষিত নগদ লভ্যাংশের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ১০ দিনের মধ্যে আলাদা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে হতো। ফলে ওই অর্থ প্রায় তিন মাসের মতো সময় ব্যাংকে পড়ে থাকতো। এই নিয়মে পরিবর্তন আনার ফলে ওই অর্থ ব্যবহার করতে পারবে কোম্পানি।

নগদ লভ্যাংশ প্রদান সংক্রান্ত বিএসইসির সিদ্ধান্ত
বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বার্ষিক লভ্যাংশের (অ্যানুয়াল ডিভিডেন্ড) ক্ষেত্রে এজিএমের কমপক্ষে এক দিন পূর্বে লভ্যাংশের টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। তবে ঘোষিত লভ্যাংশের চেয়ে কম লভ্যাংশ এজিএমে অনুমোদিত হলে উদ্বৃত্ত অর্থ উত্তোলনের সুযোগ থাকবে।

ইস্যুয়ার কর্তৃক আলাদা ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশের অর্থ স্থনান্তর করা হয়েছে মর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একটি সনদ ইস্যুয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) ও কোম্পানি সচিবকে (সিএস) এজিএমে অবহিত করতে হবে এবং স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করতে হবে।

এছাড়া অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের (ইন্টেরিম ডিভিডেন্ড) ক্ষেত্রে রেকর্ড ডেটের পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ডিভিডেন্ডের টাকা আলাদা ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র র ১০ দ ন অন য য় র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড