রাবিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
Published: 15th, April 2025 GMT
পূর্ব শত্রুতার জেরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আইন ও ফাইনান্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। এতে আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী নাম নুহানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, টুকিটাকিতে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক দফা মারামারি হওয়ার পর আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আবারো আরেক দফায় মারামারি হয়। পরে রাজশাহী মেডিকেলের সামনে তৃতীয় দফায় মারামারি হয়।
আরো পড়ুন:
কুয়েট শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাবিতে প্রতিবাদী সমাবেশ
রাবির পরীক্ষার জন্য শনিবার বন্ধ থাকবে জবি
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফাইনান্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “সোমবার রাতে গত বছরের ইফতার করা নিয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। সেখানে আমাদের একজনকে চড় থাপ্পড় মারে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরে আজ আবার টুকিটাকি চত্বরে এসে তারা আবার আমাদের সঙ্গে ঝামেলা করে। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে মারামারি হয়।”
আহত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নুহানকে মুঠোফোনে কয়েকবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “একজন যখন রিকশায় করে আসলো, আমরা শিক্ষার্থী মনে করে তাকে চিকিৎসার জন্য ভিতরে আনি। তার মাথায় আঘাত ছিল। ডাক্তার দেখার পর তাকে একটু বসতে বললাম। কারণ যেহেতু ডাক্তার অবজারবেশনে ছিল, তাকে আরেকবার দেখতো। কিন্তু সে চলে গেছে। পরে আর তাকে পাইনি।”
এ বিষয়ে প্রক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমরা যতটুকু জানতে পারলাম, পূর্ব শত্রুতার জেরে এই মারামারিটা হয়েছে। এক গ্রুপ বলছে সমাধান করার জন্য মেরেছে, আরেক গ্রুপ বলছে আমাদেরকে আগে মেরেছে। তবে মারামারি হয়েছে। একবার মারামারি করার পর আবার মেডিকেল সেন্টারে তারা মারামারি করেছে। যারা এ ঘটনার ভিক্টিম, তাদের বলেছি অভিযোগ দিতে। তারা অভিযোগ দিলে আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে ব্যবস্থা নেব।”
তিনি আরো বলেন, “আগের ঘটনাগুলোও তদন্ত চলমান আছে। কেও যদি মনে করে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হবে না, তবে সে ভুল। এতে অবশ্যই অ্যাকশনে যাওয়া হবে। কেও যেন দলীয় পরিচয় দিয়ে প্রভাব না খাটায়, সেজন্য পুলিশ প্রশাসনকে ইতোমধ্যে জানিয়েছি। ভিক্টিমের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আমরা হলকে সুরক্ষিত মনে করছি। যারা প্রতিপক্ষ তাদেরও বলে দিয়েছি, তারা যদি হলে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন ব ভ গ র র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।