চুক্তির জন্য ‘প্রস্তুত’ পুতিন, ‘যুদ্ধ শুরুর’ জন্য জেলেনস্কিকে দুষলেন ট্রাম্প
Published: 15th, April 2025 GMT
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রস্তুত রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ শান্তি চুক্তির পথটা যে মোটেও মসৃণ নয়, সে ইঙ্গিত দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তাঁর ভাষ্যমতে, চুক্তির মূল অংশগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানো সহজ নয়।
ইউক্রেন যুদ্ধ তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। যুদ্ধ থামাতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন উইটকফ। পরে গতকাল সোমবার সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সাক্ষাতে ‘পুতিন যে অনুরোধটি করেছেন, সেটি হলো স্থায়ীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠা।’
সাক্ষাৎকারে স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমরা এমন কিছুর দ্বারপ্রান্তে রয়েছি, যা বড় পরিসরে বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি বলেন, এই পর্যায়ে আসতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে পাঁচ ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর তাঁর মনে হয়েছে—একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া ‘বাণিজ্যিক সুযোগগুলো’ ব্যবহারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্কে নতুন করে গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে উইটকফের মতো চুক্তি নিয়ে অতটাও আশার কথা শোনাননি সের্গেই লাভরভ। রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম কমারসেন্তকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘একটি সমঝোতার মূল বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সহজ নয়। সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।’ লাভরভ বলেন, সব পক্ষের জন্য সুবিধাজনক হয়, এমন একটি চুক্তির বিষয়ে তাঁরা সচেতন।
চুক্তি নিয়ে রাশিয়ার অবস্থান ২০২৪ সালে পুতিন স্পষ্ট করেছেন বলে জানান লাভরভ। সে বছরের জুন মাসে পুতিন বলেছিলেন, যুদ্ধ বন্ধের আগে ইউক্রেনকে অবশ্যই পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাদ দিতে হবে। আর দেশটিতে রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে নিজেদের সেনাসদস্যদের প্রত্যাহার করতে হবে কিয়েভকে।
বর্তমানে ইউক্রেনের পাঁচ ভাগের প্রায় এক ভাগ অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৪ সালে কিয়েভে মস্কোপন্থী সরকারের পতনের পর দেশটির ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রুশ বাহিনী। আর চলমান যুদ্ধের সময় ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসন—এই চার অঞ্চল কথিত গণভোটের মাধ্যমে নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে রাশিয়া।
আরও পড়ুনট্রাম্পকে ইউক্রেন সফরের আহ্বান জেলেনস্কির২১ ঘণ্টা আগেএদিকে গত রোববার ইউক্রেনের সুমি শহরে রাশিয়ার হামলায় ৩৫ জন নিহত হওয়ার পর যুদ্ধ শুরুর জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দুষেছেন ট্রাম্প। জেলেনস্কিকে ইঙ্গিত করে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আপনার ২০ গুণ বড়, এমন কারও সঙ্গে আপনি যুদ্ধ শুরু করতে পারেন না। আর এরপর আশা করতে পারেন না লোকজন আপনাকে ক্ষেপণাস্ত্র দেবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র র জন য ল ভরভ
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।