সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেল হাসপাতল থেকে শিশু নিয়ে পালাচ্ছেন নারী
Published: 19th, April 2025 GMT
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড থেকে ৬ মাসের এক শিশু চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালের ষষ্ঠ তলায় ঘটনাটি ঘটে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, শিশুটিকে নিয়ে ইজিবাইকে করে পালিয়ে যাচ্ছেন এক বোরকা পড়া নারী।
চুরি হওয়া শিশুটির নাম আব্দুর রহমান। সে মাদারীপুর সদর উপজেলার মহিষেরচর পাকা মসজিদ এলাকার সুমন মুন্সি এবং সুমি আক্তারের মেয়ে।
স্বজনরা জানান, তিনদিন আগে অসুস্থ দুই বছরের মেয়ে জামিলাকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের ষষ্ঠ তলার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান সুমন ও তার স্ত্রী সুমি। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বড় মেয়ে জান্নাতকে খাবার খাওয়াচ্ছিলেন সুমি। এ সময় গোলাপি রঙের বোরকা পড়া এক নারী শিশু আব্দুর রহমানকে কোলে তুলে নেন। আদর করার জন্য হাসপাতালের বারান্দা নিয়ে যান তিনি। এক পর্যায়ে শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যান ওই নারী। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশকে বিষয়টি জানান শিশুটির স্বজনরা।
আরো পড়ুন:
কালীগঞ্জে কুকুরের কামড়ে ৭ দিনে আহত অর্ধশতাধিক মানুষ
চীনের অর্থায়নে হাসপাতাল ফেনীতে স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন
তারা আরো জানান, হাসপাতালের বাইরে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ৬ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে ইজিবাইকে করে হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন বোরকা পড়া এক নারী।
হাসপাতালে নিরাপত্তা না থাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ শিশুটির স্বজনদের। চুরি হওয়া আব্দুর রহমানকে উদ্ধার এবং চুরির ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিশুটি বাবা সুমন মুন্সি বলেন, “ছেলেকে ফেরত চাই আমি। হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না।”
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.
হননি।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাকত চাকমা বলেন, “ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ। বাচ্চা চুরি চক্রের সদস্যদের ধরতে তৎপরতা শুরু হয়েছে। আশা করি, শিগগিরি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।”
ঢাকা/বেলাল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
১ জন ডাক্তারে চলছে হাসপাতাল!
দীর্ঘদিন ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে বাড়তি সেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসরা নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে কোনো রকমে চলছে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কাজ।
এদিকে, চিকিৎসক সঙ্কটে কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগের দাবি তাদের।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দর, তিনটি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশনসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে কর্মরত রয়েছে দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার শ্রমিক। এসব শ্রমিকসহ কলাপাড়া ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল এই কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল।
বছরের অধিকাংশ সময়ে রোগীতে ভরা থাকে হাসাপাতালটি। অনেক সময় ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে রোগীরা চিকিৎসা নেয় হাসপাতালের মেঝে কিংবা করিডোরে। অথচ এ হাসাপতালে চিকিৎসকের ৩৬টি পদের মধ্যে ২৭টি পদই শূন্য। বাকি ৯ জনের মধ্যে দুজন ঢাকায় সংযুক্তিতে, দুজন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ও একজন রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।
বর্তমানে মাত্র চার জন চিকিৎসক রয়েছেন এ হাসপাতালে। এর মধ্যে উপেজলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয় দাপ্তরিক কাজে। এছাড়া দুজন রয়েছেন জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে। এরমধ্যে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং অপরজন গাইনি ও অবস বিশেষজ্ঞ। যাদের কাজ শুধুমাত্র রেফার অর্থাৎ জটিল রোগের শিশু এবং গাইনি বিষয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া। এছাড়া শুধুমাত্র একজন রয়েছেন মেডিকেল অফিসার। যার আউটডোর, ইনডোর ও জরুরি বিভাগের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা।
সীমবদ্ধার মধ্যে এই চার চিকিৎসক সময় ভাগ করেই চালাচ্ছেন পুরো ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। তবে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে চার চিকিৎসকই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি।
এদিকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরা।
কলাপাড়া হাসাপতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী মুরাদ হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে জ্বর ও শাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। আজ সকালে শুধু একজন ডাক্তার এসে দেখে গেছে। এখানে ডাক্তারের সংকট থাকার কারণে আমরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছি না।”
শিশু ওয়ার্ডের ভর্তি রোগী জুবাইদার (৫ মাস) নানি হোসনেয়ারা বলেন, “এখানে শুধু একজন শিশু রোগের চিকিৎসক রয়েছেন। তিনি এতো শিশু রোগীর কীভাবে সেবা দিবেন? নার্সরা তো সব বোঝে না। এখানে নাতীকে ভর্তি করানোর পর আমাদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে বেশ কয়েকবার ডাক্তারের পার্সোনাল চেম্বারে গিয়ে ওষুধ লিখে নিয়ে আসতে হয়েছে। আমরা এ হাসপাতালের চিকিৎসক সঙ্কটের সমাধান চাই।”
কলাপাড়া হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি ও অবস) ডা. শরীফ শায়লা ইসলাম বলেন, “আমাদের এখানে প্রচুর চিকিৎসক সংকট। যার কারণে অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। শরীরে জ্বর উঠেছে। আপনাদের আসার খবর পেয়ে ওষুধ খেয়ে জ্বর কমিয়ে এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। আসলে এভাবে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়।”
অপর জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক্স) ডা. কামরুননাহার মিলি বলেন, “আমাদের তো আসলে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার কথা না। তারপরও সঙ্কটের কারণে দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত সময় ধরে সেবা দিতে গিয়ে আমি নিজেই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এত বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকার দিক বিবেচনা করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক সঙ্কট সমাধানের অনুরোধ জানাচ্ছি। এতো সঙ্কটে আসলে রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।”
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জুনায়েদ হোসেন লেলিন বলেন, “চিকিৎসক সঙ্কটের ব্যাপারে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে- এমনকি চিঠি দিয়েও এর সুরাহা পাইনি।”
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, “শুধু কলাপাড়া নয়, পুরো জেলা জুড়েই চিকিৎসক সঙ্কট রয়েছে। বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।”
ঢাকা/ইমরান/এস