মাঝ আকাশে সূর্য। প্রখর তীব্রতা নিয়ে যেন ঝরছে রোদ। চামড়াপোড়া এমন থমথমে গরমেও মাঝেমধ্যে শীতল বাতাস শরীর ধুয়ে দিচ্ছে! সুদূরে ডাকছে পাখি। পানি কমে চিকন হয়ে আসা খালে চুপটি মেরে শিকারের আশায় দাঁড়িয়ে আছে একঝাঁক সাদা বক। রাস্তার ধারে ফুটে আছে পিউম ফুল। ডানে-বাঁয়ে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ ধানখেত। খেতে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল-করচে গজিয়েছে কচি পাতা।
সম্প্রতি হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওর ঘুরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। বর্ষায় হাওরের যে রূপ, শুকনা মৌসুমে তা একেবারেই বিপরীত। যে হাওর বর্ষায় অনেকটা সমুদ্রের মতো, শুকনা মৌসুমে সেখানেই মাটি ফেটে চৌচির। কিছু খাল-নদীতে পানি থাকলেও তা যৎসামান্য। আবার কোনো কোনো জলাশয় তো শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে! কোথাও একাকী, আবার কোথাও দলবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে হিজল-করচগাছ।
সদ্য শেষ হওয়া চৈত্র মাসের এক দুপুরে হাওরের আঁকাবাঁকা পাকা-কাঁচা রাস্তা ধরে এই প্রতিবেদক যান। বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে রওনা হয়ে লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবন (খরতির জঙ্গল) পেরিয়ে জেলার আজমিরীগঞ্জের পাহাড়পুর বাজার পর্যন্ত যাওয়ার পথে দেখা মেলে শতাধিক গ্রাম, গোটা দশেক হাওর-নদী-বিল-খালের। পথে পথে সৌন্দর্য। মাঠ, হাওরের উন্মুক্ত প্রান্তর যেন এখন সবুজ ঘাসের গালিচা। সেখানে চরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল। বক, শামুকখোল পাখিরা জলাশয়ে একসঙ্গে খুঁজছে খাবার।
বানিয়াচং উপজেলা সদর পেরিয়ে হাওরের মূল ভূখণ্ড ঢুকতেই স্বাগত জানায় পাকা একটি সড়ক। সড়ক ধরে কেউ-বা হেঁটে যাচ্ছেন, কেউ-বা যাচ্ছেন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে চেপে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, বর্ষায় এই সড়ক পানির নিচে ডুবে থাকে আর হেমন্তে ভেসে ওঠে। সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা, কোথাও আবার পিচহীন। গবাদিপশুর জন্য ঘাস কেটে কেউ-বা সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছেন, কেউ-বা সড়ক-লাগোয়া খাল-নালায় ব্যস্ত মাছ শিকারে। মাথার ওপরে চক্কর খাচ্ছে চিল, সারস, কাক, ফেসকুন্দাসহ নানা জাতের পাখি।
বানিয়াচং উপজেলার খরতির জঙ্গলে হিজল-করচবাগ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’
জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।