বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন  বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও পরমাণু শক্তি কমিশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

লিখিত বক্তব্যে পরমাণু বিজ্ঞানী সংঘের সভাপতি এ এম এস সাইফুল্লাহ বলেন, পরমাণু শক্তি কমিশন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নীতি অনুসরণ করে চলে। বর্তমানে ৬০০ বিজ্ঞানীসহ আড়াই হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। বিগত সরকারের চাপিয়ে দেওয়া আইবিএএস সিস্টেমে প্রবেশ না করায় অর্থছাড় বন্ধ রয়েছে। ফলে আমাদের কারও মার্চ মাসের বেতন-ভাতা হয়নি। পেনশন প্রাপ্তিসহ গবেষণা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, পারমাণবিক বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট গবেষণা এবং এ-সংক্রান্ত প্রকল্প, তার পরিচালন ব্যয়সহ সব তথ্য সংবেদনশীল। আইবিএএস একটি সর্বজনীন সিস্টেম। এটি ভারতীয় সফটওয়্যার, যেটির সার্ভার চেন্নাই থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সুতরাং এ সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য করার প্রচেষ্টা দেশের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও কর্তৃত্ববাদী আচরণে  কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিজ্ঞানীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকার বিতাড়িত হলেও, মন্ত্রণালয়ে দোসর আমলারা বিজ্ঞানীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জিও দিচ্ছেন না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন, অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল আরেফিন প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পরম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

বৈষম্য কেন? আদিবাসী নারী শ্রমিকরা পাই না সমান মজুরি

‘‘সাম্যের গান গাই-
আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।
বিশ্বের যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’’

কাজী নজরুল ইসলাম ‘নারী’ কবিতায় নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলেছেন। কিন্তু, এ বৈষম্য সমাজের সর্বস্তরে এখনো রয়ে গেছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেও সমান মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া ঘুরে জানা যায়, বছরে আমন এবং ইরি মৌসুমে ধানের চারা রোপণ, ক্ষেত নিড়ানিসহ ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করেন নারী শ্রমিকেরা। পুরুষের পাশাপাশি সমান তালে এসব কাজ করেন তারা। এ কাজে পুরুষ শ্রমিকেরা ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পেলেও নারী শ্রমিকেরা পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। শুধু ধানের মৌসুমেই নয়, অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পুরুষের সমান মজুরি পান না। এই বৈষম্য দূর হলে আরেকটু স্বচ্ছল জীবনযাপন করা যেত বলে তারা মনে করেন।

হাকিমপুর পৌর এলাকা চন্ডিপুর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার নারী শ্রমিক লক্ষ্মী হাসদা ও শান্তি সরেন বলেন, ‘‘আমরা বছরে দুই সিজন ধানের চারা রোপণসহ কাটা-মাড়াই করি। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৫ পর্যন্ত কাজ করি। কিন্তু মজুরি কম পাই। পুরুষরা ৫০০ টাকা পেলে আমরা পাই সাড়ে ৩০০ টাকা। এটা কেমন নিয়ম?’’

অপর নারী শ্রমিক সুরুজ মনি হেম্ব্রন বলেন, ‘‘এখন তো হামরা তেমন কাম পাই না। আলু ও সরিষার মাঠে এখন মুসলমান বেটি ছোলরা কাম করে। আগে আমরাই করতাম, এখন অনেক কাম কমে গেছে। এরপর আবার পুরুষ মানুষের চেয়ে হামাক হাজিরাও কম দেয়। হারা (আমি) চলবো কি করে?’’

একই প্রশ্ন করেন হিলির তালতলার রানী হেম্ব্রন ও বিউটি হেম্ব্রন। শ্যামলী হাড্ডি বলেন, ‘‘এই বৈষম্যের কারণে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারছি না। বৈষম্য দূর হলে আরেকটু ভালো করে চলতে পারতাম।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলার ১ নাম্বার খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছদরুল শামীম স্বপন বলেন, ‘‘আমরা জানি, নারী-পুরুষ সমান অধিকারী। কিন্তু, সমাজে নারী শ্রমিকেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারা সঠিক মজুরি পায় না। আমি শ্রমিক ফেডারেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলব- আপনারা এই বৈষম্য দূর করুন। নারীর ন্যায্য মজুরির ব্যবস্থা করুন।’’

খট্রা-মাধবপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি শাহানুর আলম শাহিন বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলে অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিক আছেন, যারা বৈষম্যের শিকার। আমি গৃহস্থ এবং কৃষকদের বলতে চাই, আপনারা বৈষম্য না করে নারী-পুরুষ শ্রমিকদের সমান মজুরি দেবেন।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ