মাত্রাতিরিক্ত শুল্ক ও করের কারণে অবৈধ পথে মোবাইল হ্যান্ডসেটের আমদানি বাড়ছে বলে দাবি খাত-সংশ্লিষ্টদের। এতে দেশে ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা ১৭ মোবাইল হ্যান্ডসেট কারখানা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বৈধভাবে আমদানিকারকরাও লোকসান গুনছেন। টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উদ্যোক্তারা বলছেন, চাহিদার শতভাগ মোবাইল ফোন দেশেই উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু অবৈধ মোবাইল ফোনের কারণে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতার ৩০ শতাংশই অব্যবহৃত থাকছে। ১৬ হাজার কোটি টাকার মোবাইল ফোন বাজারের ৪০ শতাংশই অবৈধ হ্যান্ডসেটের দখলে। সব মিলিয়ে দেশে মোবাইল ফোন খাতের অবস্থা শোচনীয়। 

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) বলছে, অবৈধভাবে ফোন আমদানি বন্ধ না হওয়ায় বাজারের ৩৫-৪০ শতাংশ এখন অবৈধ ফোনের দখলে। এতে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে দেশে মোবাইল ফোনের উৎপাদন বাড়তে থাকে। এ খাত থেকে বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়। জানা গেছে, দেশে বছরে চার কোটি হ্যান্ডসেটের চাহিদা রয়েছে, যার মধ্যে আড়াই কোটি দেশে উৎপাদন হচ্ছে। বাকি প্রায় দেড় কোটি হ্যান্ডসেট আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে।

দেশে অবৈধ হ্যান্ডসেটের ব্যবহার কমাতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ২০২১ সালে ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) পদ্ধতি চালু করে। এ পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবৈধ সেট বন্ধ হয়। এটি চালুর পর দেশে অবৈধ মোবাইল সেটের বাজার ১০-১৫ শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু সে বছরই  অজ্ঞাত কারণে এ পদ্ধতি শিথিল করা হয়। ফলে দেশে অবৈধ সেটের ব্যবহার আরও বেড়ে যায়। এর প্রেক্ষিতে এমআইওবি এনআইআর ফের চালু করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়। সেই চিঠি পর্যালোচনার পর এনআইআর ব্যবস্থা চালু করতে বিটিআরসিকে চিঠি দেয় এনবিআর। বিটিআরসি জানিয়েছে, তারা চলতি বছরই এনইআইআর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রতিটি মোবাইল ফোনের জন্য ১৫ সংখ্যার একটি স্বতন্ত্র আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টি) নম্বর থাকে। একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা একটি আইএমইআই নম্বরের নিবন্ধন দিয়েই দেড় লাখের বেশি মোবাইল ফোনের খোঁজ পেয়েছেন। অর্থাৎ এসব ফোনই নকল। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে দেদার অবৈধ মোবাইল বিক্রি হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশের ‘সিলিং গ্রাম’ চাঁদপুরের ছটাকি

মেঘনার পারে ছোট্ট ছটাকি গ্রাম। প্রায় সারা বছরই সেখানকার লোকজন থাকে নদীভাঙনের আতঙ্কে। নদীর স্রোতের সঙ্গেই তাঁদের ওঠাবসা, বেঁচে থাকার লড়াই, বসবাস। গ্রামটির অধিকাংশ লোকই পেশায় কৃষি ও মৎস্যজীবী। তবে গ্রামের শতাধিক লোক এখন আঁকড়ে আছে বাপ-দাদার পুরোনো একটি পেশা।

টিনের ঘরের জন্য বাঁশের তৈরি রংবেরঙের সিলিং (ছাউনি) বানিয়ে সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা চালাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের তৈরি ওই ছাউনি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও। ৮০ বছর ধরে বাঁশের এই বুননশিল্পকর্ম তৈরি ও বিক্রি করে টিকে আছে পরিবারগুলো।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীরে ওই ছটাকি গ্রামের অবস্থান। মুলি বাঁশ দিয়ে গ্রামবাসীর তৈরি ঘরের ছাউনি স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয় ও সমাদৃত। এ কারণে স্থানীয় লোকজনের কাছে গ্রামটি ‘সিলিং গ্রাম’ নামেও পরিচিত। ঘরের সিলিংকে এলাকার লোকজন ‘কাড়’ হিসেবে চেনে।

সোমবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার বাজারের পাশে কিছুটা খোলা জায়গায় বাঁশ দিয়ে টিনের ঘরের সিলিং বানানোর কাজ চলছে। ১৫ থেকে ২০ জন কারিগর (শ্রমিক) বড়, ছোট ও মাঝারি আকারের ওই সিলিং বানাতে ব্যস্ত। কেউ মুলি বাঁশ সাজিয়ে রাখছেন, কেউ বাঁশ বেঁধে রং লাগাচ্ছেন। প্রবীণ দু-একজন বাসিন্দা চেয়ারে বসে ওই শিল্পকর্মের বুনন তদারক করছেন এবং কারিগরদের পরামর্শ দিচ্ছেন। তাঁদের পাশে থাকা বেশ কিছু লোক জটলা পাকিয়ে ওই শিল্পকর্ম দেখছেন। মুলি ও নলি বাঁশ, সুতা, সুতলি, গুনা, তারকাটা, দা, শাবল, রঙের পট, হাতুড়ি, করাতসহ সিলিং তৈরির নানা উপকরণ ব্যবহৃত হচ্ছে সেখানে। বুননশিল্প তৈরির এ মহাযজ্ঞে গোটা এলাকাই সরগরম।

কথা হয় সেখানকার বেশ কয়েকজন কারিগরের সঙ্গে। ওই গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা আবদুল মালেক প্রধান বলেন, প্রায় ৮০ বছর ধরে তাঁর গ্রামে মুলি বাঁশ দিয়ে টিনের ঘরের সিলিং বানানো ও বিক্রির কাজ চলছে। তিনি নিজেও প্রায় ৫০ বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত। তাঁর পরিবারের আরও চারজন এখন এ কাজ করছেন। পৈতৃক এ পেশা টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছেন তাঁরা।

ওই গ্রামের খলিলুর রহমান, আবদুর রহমানসহ অন্তত পাঁচজন কারিগর বলেন, পাহাড়ি এলাকা থেকে মুলি ও নলি বাঁশ কিনে এনে বাঁশের সিলিং তৈরি করেন। মাঝারি আকারের একটি সিলিং বানাতে খরচ পড়ে ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকায়। বড় আকারের একটি সিলিং বানাতে খরচ পড়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। মুলি বাঁশের সিলিং টিনের ঘরকে ঠান্ডা রাখে। এ জন্য স্থানীয়দের কাছে সারা বছরই এগুলোর ভালো চাহিদা থাকে। চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়েও সেগুলো বিক্রি করেন। একেকটি সিলিং বানাতে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগে। তৈরি সিলিং বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই সংসারের খরচ চলে। তাঁদের গ্রামের শতাধিক মানুষ পুরোনো এ পেশায় যুক্ত। এ কাজ করে তাঁদের সংসারে সচ্ছলতাও এসেছে। কারও কাছে হাত না পেতে তাঁরা স্বাবলম্বী।

ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলমের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম তৈরি হচ্ছে। এতে তিনি গর্বিত। পুরোনো এ পেশার মানোন্নয়নে তিনি সহযোগিতা ও সহায়তা করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, লোকজ ঐতিহ্য ও বাঁশের শিল্পকর্ম বাঁচিয়ে রাখতে ওই গ্রামের লোকেরা যেভাবে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যত দূর সম্ভব সহায়তা দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঁশের ‘সিলিং গ্রাম’ চাঁদপুরের ছটাকি