শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাঠ শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় বা ইবতেদায়ি মাদ্রাসার মাধ্যমে। নীতিনির্ধারণসহ আমাদের দেশে প্রাইমারি শিক্ষার ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট ঘাটতি আছে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রাইমারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে শিশুবান্ধব করে তোলার কথা, তা কি আমরা করতে পেরেছি? নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবায়নের চিত্র অনেক সীমিত বলতেই হয়। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমাদের দেখাল স্কুলকে কীভাবে শিশুবান্ধব করে তুলতে হয়। বিষয়টি সত্যিই দারুণ আশাব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণামূলক। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, এক যুগ আগে সরকারের বিদ্যালয়হীন গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের একটি প্রকল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চিরিরবন্দর উপজেলার কুশলপুর গ্রামের সুব্রত খাজাঞ্চি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রকল্পের শর্তানুসারে গ্রামের দুই ব্যক্তি জমি দান করেন। তাঁদের পরিবারের সদস্য প্রয়াত শিক্ষকের নামে এ স্কুলের নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠার ১০ বছরের মধ্যে প্রান্তিক অঞ্চলের এই স্কুল গত বছর বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে। 

ভালো ফলের কৃতিত্ব থেকেও স্কুলটির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে এর প্রকৃতিবান্ধব ও শিশুবান্ধব পরিবেশ নিয়ে। প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই ইট বিছানো পথের দুই পাশে ঝাউগাছের সারি। সীমানাপ্রাচীরের সঙ্গে চারপাশে নানা রঙের ফুলের গাছ। বিদ্যালয়ের প্রাচীর, ভবনের দেয়াল, এমনকি ভবনের ছাদেও আঁকা হয়েছে বিভিন্ন ফুল, ফল, পশুপাখি, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সৌরজগৎ ও মানচিত্রের ছবি। প্রতিটি ছবির পাশে সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুর নাম লেখা হয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে। শিক্ষার্থী-উপযোগী এমন পরিবেশ দেখতে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও আসছেন শিক্ষক-অভিভাবকেরা।

স্কুলটিতে আছে শহীদ মিনার, অভিভাবক বিশ্রামাগার, লাইব্রেরি কর্নার, সততা স্টোর, ছাদবাগান, ভবনের ছাদে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চ, ওয়াশ ব্লক, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ। শুধু তা-ই নয়, সপ্তাহে এক দিন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে স্কুলের পোশাকও দেওয়া হয়। সরকারি বেতনভুক্ত পাঁচজন শিক্ষকের পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত চারজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগে অর্থের জোগানসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেন বিদ্যালয়ের জমিদাতা পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

শিক্ষকদের দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতা স্কুলটির এমন পরিবেশ তৈরিতে এবং সাফল্য অর্জনে বড় ভূমিকা রেখেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতা এবং শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে এগিয়ে যেতে পারে, তার উদাহরণই তৈরি করল এ বিদ্যালয়। আমরা আশা করব দেশের অন্য স্কুলগুলোর পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকেরা এ থেকে অনুপ্রাণিত হবেন। একটি প্রাইমারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কীভাবে শিশুবান্ধব করে গড়ে তোলা যায়, সেদিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র

গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।

ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ