জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ভালো হয়নি। সিলেটে প্রথম টেস্ট হেরে সমালোচনার মুখে ক্রিকেটাররা। এই সময়ে জাতীয় দলের বাজে পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট গত কয়েকদিন নতুন নতুন নাটক মঞ্চস্থ করেছে বিসিবি। যার শুরুটা হয়েছিল ডিপিএলে তাওহিদ হৃদয়ের কাণ্ড দিয়ে। আম্পায়ারের সঙ্গে বিতণ্ডা, এরপর শাস্তি এবং তা নিয়ে নানা টানাপোড়েন যেন ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্ট সিরিজকেও, যেখানে সিলেটে প্রথম টেস্ট হেরে সিরিজে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

শাস্তি এক বছরের জন্য পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে মোহামেডানের হয়ে মাঠে নামেন হৃদয়। তবে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা এই ব্যাটার খুব বেশি অবদান রাখতে পারেননি। তিনটি চারে ৫৪ বল খেলে ৩৭ রান করে ওয়াসি সিদ্দীকের বলে পারভেজ জীবনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরেছেন। হৃদয়ের আউটের সময় মোহামেডানকে জয় পেতে প্রয়োজন ছিল আরও ৯১ রান, হাতে ছিল ১৮ ওভার। গাজী গ্রুপের ২৩৭ রানের জবাবে ৩২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৪৬ রান করেছিল মোহামেডান। হৃদয়ের বিদায়ের পর দ্রুতই আরিফুল ফিরলেও মাহমুদউল্লাহ ও সাইফউদ্দিনের ব্যাটে জয় পেতে বেশি বেগ পেতে হয়নি মোহামেডানের।

তাওহিদ হৃদয়ের শাস্তির শুরু মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদের সঙ্গে বিতণ্ডা থেকে। প্রথমে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয় তাকে, পরে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করায় আরও এক ম্যাচ বাড়ানো হয় শাস্তি।

তবে মোহামেডানের চাপে বিসিবির আম্পায়ার্স বিভাগ সেই শাস্তি কমিয়ে এক ম্যাচ করে। এরপরও শাস্তি পুরোপুরি তুলে নেওয়ার দাবিতে তামিম ইকবালের নেতৃত্বে কয়েকজন ক্রিকেটার বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন ফাহিম ও আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

প্রথমে সিসিডিএমের টেকনিক্যাল কমিটি হৃদয়ের শাস্তি পুনর্বহাল করতে উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটারদের চাপে বিসিবি সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হৃদয় বাকি এক ম্যাচের বহিষ্কারাদেশ আগামী বছরের প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে ভোগ করবেন। ফলে এই মৌসুমের বাকি দুটি ম্যাচেই খেলতে পারছেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এক ম য চ আম প য় র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’