রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবন সাত দিন ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। ছয় দফা দাবিতে গত সোমবার শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। আজ রোববার দুপুরে একই দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় এই কর্মসূচি রাজশাহীর সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেই পালন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন রাজশাহী পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস ঘুরে মিছিলটি শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এবং চলমান আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহপ্রতিনিধি সালমান আহম্মেদ (তুষার) বলেন, আজ তাঁরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল পালন করছেন। তাঁদের ছয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। দাবি আদায়ে তালা ঝোলানো হয়েছে। এটি শুধু রাজশাহী পলিটেকনিক নয়, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানো হয়েছে।

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম থেমে গেছে। ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্যাম্পাসে এলেও এখানে–সেখানে চেয়ার পেতে বসে থাকছেন। চলতি মাসের বেতনাদি তুলতে পারবেন কি না, এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আবু হানিফ বলেন, প্রশাসনিক ও একাডেমিক যাবতীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। শিক্ষার্থীরা তালা খুলে না দিলে তাঁরা কিছুই করতে পারছেন না। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতনাদি দেওয়া নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। কাগজপত্র সব ভেতরে রয়েছে।

এই অবস্থা শুধু রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে নয়, রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিক ও সরকারি সার্ভে ইনস্টিটিউটও তালাবদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগের অন্যান্য পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটও তালাবদ্ধ আছে বলে জানাচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

গত ঈদের আগে থেকে শিক্ষার্থীরা ছয় দফা দাবি পূরণে আন্দোলন করে আসছেন। ক্যাম্পাসের ভেতরে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা ১৫ এপ্রিল রাজশাহীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। পরদিনও তাঁরা একই কর্মসূচি পালন করেন। পরে কর্মসূচি কিছুটা শিথিল করে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। পরে ২১ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে আছে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ পদোন্নতি কোটা বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির রায় বাতিল, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাকরিচ্যুত, ২০২১ সালে নিয়োগ পাওয়া ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ছুটি না পেয়ে অসুস্থ শ্রমিকের মৃত্যু, মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 

নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকায় লারিজ ফ্যাশনের পোশাক কারখানায় অসুস্থ হয়ে রিনা আক্তার (৩২) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন শ্রমিকরা। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে তারা মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, রিনা আক্তার অসুস্থ অবস্থায় কারখানায় কাজ করছিলেন। রোববার তিনি বেশি অসুস্থতা অনুভব করলে ছুটি চেয়ে আবেদন করেন। তবে, কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকের আবেদনে সাড়া না দিয়ে কাজ করতে বাধ্য করেন। ওই নারী গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে সহকর্মীরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবরোধকারী শ্রমিকদের অভিযোগ, তাদের সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষ দায়ী। রিনা অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন তিনি। 

লারিজ ফ্যাশনের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদেরকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লারিজ ফ্যাশন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শিমুল বলেছেন, আমাদের একজন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে মৃত্যু হয়। এতে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী বলেছেন, সহকর্মীর মৃত্যুর জন্য গার্মেন্টস মালিকপক্ষ দায়ী, এমন অভিযোগ করে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। ঘটনাস্থলে থানা পুলিশের সঙ্গে হাইওয়ে ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও আছে। শ্রমিকরা রাস্তা থেকে সরে গেছেন। যানচলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

ঢাকা/অনিক/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ