চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তাকে চাঁদার দাবিতে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে। শফিউল আলম নামের অপহরণের শিকার ওই ব্যক্তিকে অবশ্য ঘটনার আধা ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। শফিউল পোশাক কারখানা আজিম গ্রুপের সিনিয়র সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত বলে জানা গেছে। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে নগরের চান্দগাঁও থানার বিসিক শিল্প এলাকায় নিজের কর্মস্থলের সামনে থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই ঘটনার জন্য চান্দগাঁও থানা যুবদলের এক নেতা ও এক ছাত্রদল নেতাকে অভিযুক্ত করা হলেও ভুক্তভোগীর করা মামলায় কেবল চান্দগাঁও থানা যুবদলের এক নেতাকে আসামি করা হয়েছে। যুবদলের ওই নেতার নাম মো.

সোহেল। এ ঘটনার পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অভিযুক্ত দুই নেতার বিষয়ে জেনেও চুপ থাকায় নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলমের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এ নিয়ে কেন্দ্র থেকে সাইফুল আলমকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গতকাল রাত ১০টার দিকে অফিস থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে শফিউল আলমকে টেনেহিঁচড়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে অপহরণ করা হয়। সেখান থেকে চান্দগাঁও থানাধীন সিঅ্যান্ডবি টেকবাজার রেললাইনের সামনে নামিয়ে একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় নিয়ে যান অপহরণকারীরা। একপর্যায়ে তাঁরা ভুক্তভোগীকে মারধর করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজন থানা-পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আধঘণ্টার মধ্যে শফিউল আলমকে উদ্ধার করে।

জানতে চাইলে নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুবদল নেতা সোহেল ও ছাত্রদল নেতা আলফাজের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা যাচাই-বাছাই করে তদন্ত করতে একটু সময় লাগছে। এ জন্য কেন্দ্র থেকে আমাকে শোকজ করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ আধঘণ্টার মধ্যে ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে উদ্ধার করেছে। ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা গ্রেপ্তার

সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম ওরফে অপুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জানে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাসহ আটক ৫২৬ জুলাই ২০২৫

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম জড়িত।

গত ১৭ জুলাই গুলশানে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেন আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন। তাঁরা শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সিদ্দিক আবু জাফর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। গত শনিবার রাতে চাঁদার বাকি টাকা আনতে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে রাজ্জাকসহ পাঁচজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বাকি চারজন হলেন ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। ঘটনাটিতে গুলশান থানায় মামলা করেছেন সিদ্দিক আবু জাফর। মামলার এজাহারে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের বাইরে অপু নামের একজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক চার আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আরেকজনকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুনপ্রথমে পুলিশ নিয়ে বাসায়, পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা ২৮ জুলাই ২০২৫

রাজ্জাক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম ও আবদুর রাজ্জাক উভয়কে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।

পুলিশ জানায়, শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার পর রাজ্জাকসহ কয়েকজন তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। নিজের ভাগের পাঁচ লাখ টাকা রাজ্জাক তাঁর বাড্ডার ভাড়া বাসায় (মেস বাসা) রাখেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ জন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ২ জন বহিষ্কার২৬ জুলাই ২০২৫

এর আগে গত বুধবার ডিএমপির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজ্জাকের একটি ভাড়া বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ৪টি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এটি বাসাটি পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় অবস্থিত বলে গতকাল জানায় গুলশান থানা–পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এই সোয়া দুই কোটি টাকার চেক নেওয়া হয় রংপুর-৬ আসনের (পীরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড জোন’ থেকে।

আরও পড়ুনসমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি: আবদুর রাজ্জাকসহ চারজন সাত দিনের রিমান্ডে২৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ