চট্টগ্রাম থেকে রংপুরে যাওয়ার পথে বগুড়ার মহাস্থান গড়ের ব্রিজ এলাকায় সয়াবিন তেলভর্তি ট্রাক লুট করে ডাকাতরা। পরে লুট করা ওই ট্রাকের চালক ও তার হেলপারকে হাত-পা বাঁধা ও মুখে কসটেপ লাগানো অবস্থায় জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের পূর্বসড়াইল এলাকায় ধান ক্ষেত থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় এক কৃষক জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে কালাই থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে। পরে তাদের দুজনকে আহত অবস্থায় কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।  

আহত ট্রাক চালক আব্দুল মালেক (৪৫) রংপুর সদরের বাবুগাঁও গ্রামের মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে এবং হেলপার নজরুল ইসলাম একই জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন। 

প্রত্যক্ষদর্শী, আহত চালক ও থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত রোববার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সয়াবিন তেলভর্তি ট্রাক নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা হন। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক হয়ে আসার পথে রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান গড় ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে ১৫/২০ জনের একদল ডাকাত পেছন থেকে আরেকটি ফাঁকা ট্রাক নিয়ে এসে তাদের পথরোধ করে। তেলভর্তি ট্রাকে ওঠে চালক ও হেলপারকে মারপিট করে তাদের ট্রাকে ওঠিয়ে মুখে কসটেপ লাগিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখেন। এরপর দুইটি ট্রাক তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাকাতরা রংপুরের দিকে রওনা হন। পথে মোকামতলায় এসে ডাকাতরা রাস্তা পরিবর্তন করে জয়পুরহাটের দিকে রওনা দেয়। ট্রাকের চালক ও সহকারীকে হাত-পা বাঁধা ও মুখে কসটেপ লাগানো অবস্থায় জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের কালাই পৌরশহরের পূর্বসড়াইল এলাকায় ধান ক্ষেতে ফেলে যায়।

সোমবার বিকেলে সড়াইল মহল্লার কৃষক খলিলুর রহমান ধান ক্ষেতে গিয়ে তাদেরকে দেখতে পায়। তিনি জরুরি সেবা ৯৯৯ কল দিয়ে ঘটনাটি জানান। পরে কালাই থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করায়।  

হাসপাতালে অসুস্থ অবস্থায় চালক আব্দুল মালেক বলেন, আমাদেরকে মারপিট করেছে ডাকাতরা। রাত তিনটা থেকে আমরা দুজন ধান ক্ষেতের কাঁদা-পানির মধ্যে পড়ে আছি। মুখে টেপ লাগানো ছিল, তাই চিৎকার করতে পারিনি। অনেককে ধান ক্ষেতের আঁইলে যাতায়াত করতে দেখতে পেয়েও কিছু বলতে পারিনি। ডাকাতরা ট্রাক নিয়ে কোনদিকে গেছে তাও বলতে পারি না। 

কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, বিকেলে ধান ক্ষেতে গিয়ে ওদের দুইজনকে কাঁদামাখা দেখে ভেবেছিলাম দুইটা লাশ পড়ে আছে। পরে তাদের নড়াচড়া দেখে ভয়ে ৯৯৯ এ কল দিয়ে জানাই। পুলিশ এসে তাদের দুইজনকে উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। 

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে চালক ও হেলপারকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তাদেরকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। সুস্থ হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল টপ ট অবস থ য় চ লক ও এল ক য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ