প্রকল্প দলিলের শর্ত অনুযায়ী ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ধারণা করা যায়, কাজটি যেহেতু জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) আর্থিক, কারিগরি ও প্রযুক্তির সহায়তায় ও তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হচ্ছে, সেহেতু এটি যথাসময়েই সম্পন্ন হবে। এর মানে দাঁড়ায়, ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের দ্বিগুণেরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন একটি অত্যাধুনিক গভীর সমুদ্রবন্দরের উপস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নতুন এক যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ওই বন্দরের ব্যাপক পরিসরের স্থানীয় ও আঞ্চলিক সম্ভাবনার বিবেচনা থেকে বাংলাদেশের এ নবযাত্রা একদিকে যেমন উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো আনন্দের, অন্যদিকে এটিকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে না পারলে একে ঘিরে হতাশ হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর কর্তৃক এর ব্যবহারকারীদের সেবা দেওয়ার জন্য পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত হওয়ার এ প্রাক্কালে অর্থাৎ মাত্র বছর দেড়েক আগে সে সব সম্ভাবনা ও আশঙ্কা নিয়ে আলোচনা করাটা জরুরি বলে মনে করি। বিশেষ করে ভারত কর্তৃক নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহনের জন্য এর আগে বাংলাদেশকে প্রদত্ত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা অতিসম্প্রতি বাতিল করার পরিপ্রেক্ষিতে এ আলোচনা আরও অধিক জরুরি হয়ে পড়েছে।


মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে– এক.

নদীতলের গভীরতার অভাবে যেসব মাদার ভেসেল বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে বা নোঙর করতে পারছে না, সেগুলো অনায়াসে বঙ্গোপসাগরের গভীরতাকে কাজে লাগিয়ে মাতারবাড়ীতে ভিড়তে পারবে। দুই. ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য, নেপাল ও ভুটানকে এ বন্দর থেকে সেবা দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিন. উচ্চ ধারণক্ষমতার বৃহৎ তেলবাহী ট্যাঙ্কার ভিড়তে পারার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেসরকারি খাতে একাধিক জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার গড়ে তোলা যেতে পারে। চার. মাতারবাড়ীর সঙ্গে দেশের নৌবন্দরগুলোর যোগাযোগ সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং পাঁচ. সর্বাধুনিক সেবা দেওয়ার সুযোগ রেখে সম্পূর্ণ নতুনভাবে নির্মিত এ বন্দরের পক্ষে প্রাসঙ্গিক সব সেবাই অত্যন্ত দ্রুততা ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দেওয়া সম্ভব হবে। এখন কথা হচ্ছে, সম্ভাবনাগুলো তো কমবেশি চিহ্নিত করা গেল, যেগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরও ভালো বোঝেন।  সমস্যা হচ্ছে, চিহ্নিত এ সম্ভাবনাগুলোকে ত্বরিতগতিতে ও সর্বোত্তম উপায়ে কীভাবে কাজে লাগানো যাবে, সে বিষয়ে ওই বুঝদার কর্তৃপক্ষের মধ্যে কী যথেষ্ট অগ্রিম ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাভাবনা রয়েছে?

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) আওতাধীন একটি প্রকল্প। ফলে ধারণা করা যায়, ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষে এটি সিপিএ’র আওতাধীন স্থায়ী কাঠামোর সঙ্গে একীভূত হবে। কথা হচ্ছে– অদক্ষতা, দীর্ঘসূত্রতা ও বিশৃঙ্খলার দু্র্নামঘেরা সিপিএ কি পারবে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে ওইসব দুর্নাম থেকে মুক্ত রেখে আন্তর্জাতিক মান ও দক্ষতা অনুযায়ী পরিচালনা করতে? এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার আলোকে অনুমান করি, সিপিএ এটিকে তাদের আওতাতেই রেখে দিতে চাইবে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষের উচিত হবে সিপিএ’র ওই আকাঙ্ক্ষার প্রতি সাড়া না দিয়ে যুক্তি ও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে একে একেবারে প্রথম দিন থেকে একটি স্বায়ত্তশাসিত স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার সিদ্ধান্তে অটল থাকা। নইলে কয়েক বছর যেতে না যেতে দেখা যাবে, এটিও চট্টগ্রাম বন্দরের মতো অদক্ষ ও অকর্মণ্য বন্দরে পরিণত হয়েছে। 


এখন কথা হচ্ছে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পুরোপুরিভাবে চালু হওয়ার পর সেখানকার জাহাজে পণ্যবোঝাই ও জাহাজ থেকে খালাস করা পণ্য সড়ক, নৌ ও আকাশপথে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের জন্য বন্দরের সঙ্গে যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন, তার কাজ তো ইতোমধ্যে অনেকখানি এগিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সিপিএ বা অন্য কারও পক্ষ থেকে কি এ ব্যাপারে কিলোমিটারপ্রতি ৪৭৬ কোটি টাকা ব্যয়সম্পন্ন কক্সবাজার-মাতারবাড়ী সড়ক ছাড়া আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে ওই বন্দর চালু হওয়ার দিন থেকে এ বন্দরকে নানাবিধ নতুন সমস্যায় পড়তে হবে না কি? ফলে সিপিএ’র উচিত হবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ক্ষেত্রে সড়ক, নৌ ও বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যাপারে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। সে ক্ষেত্রে শুধু সড়ক যোগাযোগকেই মূল নির্ভরতায় না রেখে ব্যাপকভিত্তিক ও শক্তিশালী নৌযোগাযোগ ব্যবস্থার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে এবং সে সুযোগও যথেষ্ট রয়েছে। তদুপরি কক্সবাজার বিমানবন্দরকে পণ্য পরিবহনের জন্য আরও সক্ষম ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। মাতারবাড়ী বন্দর থেকে খালাস হওয়া পণ্যের সবটাই ট্রাকে না উঠিয়ে তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যদি নৌকায়, লঞ্চে বা বার্জে করে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, আরিচা, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, দৌলতদিয়া, ঈশ্বরদী, মাওয়া, নরসিংদী, ভৈরব, ঘোড়াশাল ইত্যাদি নৌবন্দরগুলোতে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে ওই সব পণ্যের পরিবহন ব্যয় ও জটিলতা কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা যায়।


মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা ব্যবহার করে দেশে বেসরকারি খাতে একাধিক জ্বালানি তেল শোধনাগার স্থাপনের যে সম্ভাবনার কথা শুরুতে বলা হয়েছে, সেটি শুধু একটি সম্ভাবনাই নয়– বাস্তব প্রয়োজনও বটে। এখন মাতারবাড়ী বন্দরের উছিলায় সেটি যদি কার্যকর রূপ পায়, তাহলে তা হবে বাংলাদেশের জ্বালানি খাত তথা অর্থনীতির জন্য এক বিরাট অগ্রগতি। আশা করব, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর চালু হওয়ার পরপরই যাতে দেশে একাধিক জ্বালানি শোধনাগার গড়ে উঠতে পারে, তজ্জন্য বেসরকারি খাতে এখন থেকে প্রয়োজনীয় তোড়জোর ও প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু হয়ে যাবে। এ ধরনের জ্বালানি শোধনাগার গড়ে উঠলে এর সুবিধা নিয়ে দেশের অন্যান্য খাতেও যে আরও বহুসংখ্যক শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে এবং অপরাপর খাতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। একইভাবে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাড়াতেও এ বন্দরের ভূমিকা শুধু সহায়কই হবে না, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এক নতুন মাত্রা খুঁজে পাবে বলেও আশা করা যায়। বিষয়টিকে মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহী করে তোলার লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রচার-প্রচারণা জোরদার করার পাশাপাশি তাদের তথ্য ও আনুষঙ্গিক সেবা দিয়ে সহায়তা করা।


মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের এতসব সম্ভাবনার পাশাপাশি একে নিয়ে ঝুঁকিও কম নেই। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সদস্যরা বান্দরবান সীমান্তে আনাগোনা বাড়িয়ে দিয়েছে জানা যাচ্ছে, যা এ অঞ্চলে নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং এটি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য একটি বড় ধরনের ঝুঁকি বৈকি! অতএব বোঝাই যাচ্ছে, এ বন্দরের সম্ভাবনা যত অধিক, এর প্রতি আন্তর্জাতিক নানা গোষ্ঠীর শ্যেনদৃষ্টি মোকাবিলার ঝুঁকিও ততো প্রবল। তাই এ বন্দরের সম্ভাবনাগুলোকে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে টিকিয়ে রাখতে হলে সবার আগে প্রয়োজন সাহসী, শক্তিশালী ও রাষ্ট্রনায়কোচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। 


মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের উল্লিখিত কৌশলগত ঝুঁকি ছাড়াও কতিপয় ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা ও আশঙ্কার কথাও ওপরে তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এসব বিষয়ে কতটা দৃষ্টি ও মনোযোগ দিতে পারবে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে যদি তার কার্যক্রম নিয়ে ২০২৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিমণ্ডলে একটি উন্নততর নতুন ভাবমূর্তি নিয়ে আবির্ভূত হতে হয়, তাহলে এ ধরনের স্বাভাবিক সরকারব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। আমরা মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে শতভাগ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার এবং এর সমস্ত সম্ভাবনার সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন দেখতে চাই।


আবু তাহের খান: অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি; সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), শিল্প মন্ত্রণালয়।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ত রব ড় ম ত রব ড় ব যবস থ পর বহন দর র স র জন য সরক র হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিল র‍্যাব, চায় সাইবার ইউনিট

অপরাধের ধরন বদলে যাচ্ছে। অভিনব কৌশলে সক্রিয় সাইবার অপরাধীরা। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলা করা নতুন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট চেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

পুলিশ সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন গতকাল বুধবার কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরে বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। সেখানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), র‍্যাবসহ একাধিক ইউনিট একুশ শতকের জটিল অপরাধ ও তা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনে। গতকাল পুলিশের যে ইউনিটগুলো পরিকল্পনা তুলে ধরেছে, তা হলো হাইওয়ে পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), নৌ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, রেলওয়ে পুলিশ ও সিআইডি।

কীভাবে প্রত্যন্ত এলাকার ভুক্তভোগী র‍্যাবের সহযোগিতা পেতে পারেন, সে বিষয়টি উপস্থাপন করেন বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি দ্রুত গুজব প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। র‍্যাবের জন্য আলাদা একটি সাইবার ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। র‍্যাব জনবান্ধব হওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিজি বলেন, ‘কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও মানবাধিকার বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ র‌্যাব। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে তদন্ত সেলকে শক্তিশালী করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সেলও গঠন করা হয়েছে।’
রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত সূত্রের মতে, র‍্যাব ডিজির উপস্থাপনায় মূলত বাহিনীর অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিআইডি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়। সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (ভারপ্রাপ্ত) গাজী জসীম অনুষ্ঠানে জানান, জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী মামলার অনুসন্ধানে সিআইডি বিশেষ টিম গঠন করেছে। সাবেক মন্ত্রী, প্রভাবশালীদের সন্দেহজনক সম্পদের উৎস ও প্রকৃতি নিয়ে নিবিড়ভাবে চলছে তদন্ত। এস আলম, বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, নাবিল, ইউনিক, সিকদার গ্রুপসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা ও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এ সময় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ শতাংশ জমি ও হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ শনাক্ত করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের একটি মামলায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, ফরেনসিক শাখা দিন দিন অপরাধ বিশ্লেষণের নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। জনবল, সরঞ্জাম এবং অর্থের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি সিআইডিতে আছে কাঠামোগত ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। কোনো জেলা ইউনিটে একটিও অপারেশনাল যানবাহন নেই। এ ছাড়া অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অনিয়মিত বদলি আতঙ্ক রয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারে রয়েছে সরঞ্জামের অভাব। ফরেনসিক ল্যাবে সফটওয়্যারের জন্য বাজেট-স্বল্পতার কথা তুলে ধরেন তারা।

হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়। মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে মহাসড়কের সিসিটিভি থেকে হাইওয়ে পুলিশ ডিজিটাল অটো ফাইন সিস্টেম, ট্রাফিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, ক্লোন নাম্বারপ্লেট শনাক্ত, হাইস্পিড ডিটেকশন করে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পক্ষ থেকে তাদের কর্মকাণ্ড ও পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। সেখানে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩(২) ধারায় তালিকাভুক্ত ব্যক্তিকে ডিটেনশনে (নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনা বিচারে আটক রাখা) নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং পরিস্থিতির অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ডিটেনশনে নেওয়া উচিত। সরকারের অনুমতি পেলে এসবির পক্ষ থেকে তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিস্তারিত জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হবে। ডিটেনশনে নেওয়ার জন্য যাদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তাদের কেউ কেউ পেশাদার অপরাধী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ