জামালপুরে এলজিইডি অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুদক। এলজিইডির বাস্তবায়নাধীন ৩টি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।

জামালপুর জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয়ের একটি টিম গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জামালপুর এলজিইডি কার্যালয়ে যায়। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী অভিযান চালানো হয়।

জামালপুর দুদক কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক জিহাদুল ইসলামের নেতৃত্বে তদন্ত দল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদের সঙ্গে জাইকা প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে। এ সময় খাল পুনর্খনন, রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সব তথ্য উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দেন দুদকের কর্মকর্তারা।

দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক জিহাদুল ইসলাম বলেন, জাইকার অর্থায়নে জামালপুর সদর উপজেলায় দুটি ও সরিষাবাড়ী উপজেলার একটি খাল খনন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছেন তারা। বিষয়গুলো নিয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছেন। কার্যালয় থেকে ওই প্রকল্পের কাজ তদারকি করা হয়। প্রকল্পে সুনির্দিষ্ট করে বলা রয়েছে, জামালপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর বংশাই খালের ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার, নান্দিনা ভালুকা শ্রীপুর এলাকায় খালের ২৪ কিলোমিটার এবং সরিষাবাড়ী উপজেলার বড়বাড়িয়া এলাকায় খালের ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার পুনর্খনন প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পে দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

জামালপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদ জানান, সদর উপজেলায় দুটি ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় একটি খাল খনন প্রকল্পের কাজ চলমান। এসব কাজে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নেমেছে দুদক।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প র ন প রকল প উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

চা বাগানের ন্যাড়া টিলায় নীল-লেজ সুইচোরাদের কোলাহল

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ইটা ও করিমপুর চা বাগানের মধ্যখানে লালচে রঙের ন্যাড়া টিলা। মাটি কেটে নেওয়ায় বির্পযস্ত সেই টিলার গা জুড়ে গর্ত করে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে নীল-লেজ সুইচোরা পাখিরা।

নানা অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শণ করে দিনভর চলে উড়াউড়ি আর বেলা-অবেলাজুড়ে চলে নানা সুরের মনমতানো গান। গ্রীষ্মকালে এ এলাকায় বেড়াতে আসা পাখিদের মধ্যে অন্যতম এই নীল-লেজ সুইচোরা পাখি।

টিলার পাশে দাঁড়িয়ে একটু গভীর দৃষ্টিতে তাকালেই দেখা যায় টিলার গায়ে ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত। গর্তগুলোর প্রতিটিই একেকটি বাসা, সুইচোরা পাখির বাসা। কোন কোন বাসায় বাচ্চা রয়েছে। আবার কোন বাসায় বসে ডিম তা দিচ্ছে স্ত্রী সুইচোরা।

বিকেলের পড়ন্ত রোদে টিলার গায়ের উঁচু গাছটির মরা ডালগুলোতে সরু, লম্বা ঠোঁট ও নীল লেজের কয়েকটি সুইচোরাকে বসে থাকতে দেখা গেল। কিছুক্ষণ পরপর তারা উড়ে গিয়ে শূন্য থেকে শৈল্পিক ভঙ্গিমায় পোকা ধরে নিয়ে আবারও গাছের ডালে গিয়ে বসছে। মা পাখিরা পোকা ধরে বাসায় নিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে।মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রজননের জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত স্থানে বসবাস করে সুইচোরা পাখিরা। এরা আমাদের দেশীয় পাখি হলেও সব সময় একই অঞ্চলে বসবাস করে না এরা। তাই এদের অনেকে পরিযায়ী বলেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরা পরিযায়ী বা আবাসিক পাখি নয়। এরা আমাদের স্থানীয় পাখি।

প্রকৃতি প্রেমি মুরাদ হোসেন বলেন, “এরা এদেশের আবাসিক ‘নীল-লেজ সুইচোরা’। ইংরেজী নাম Blue-tailed Bee-eater. Meropidae নাম এই পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Merops Philippinus.”

স্থানীয়রা এদের ‘নীল চড়ুই’ বলে জানেন। তবে সবসময় এদের দেখা মেলে না। কেবল গ্রীষ্মকালেই কোথা থেকে যেন ঝাঁক বেঁধে চলে আসে এরা। 

করিমপুর চা বাগানের বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, “বাগানের পাশে পরিত্যাক্ত ন্যাড়া টিলার পেটে গর্ত করে গত তিনমাস ধরে পাখিগুলো বসবাস করছে। আগে ফি-বছর তারা আসলেও এখন আর আগেরমতো আসে না। মাঝে মাঝে এদের দেখা মেলে।”

ওই বাগানের বাসিন্দা দিপঙ্কর ঘোষ বলেন, “পাখি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বসবাস শুরু করে। কোন বাধা বিপত্তি এলে তারা চলে যায়। ৩/৪ বছর পর এদের দেখা মিলল। এরা এখানে নিরাপদে প্রজনন করতে পারছে। জুন মাসের শেষে তারা আবার চলে যাবে।”

শেখ কামাল ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার গাজীপুরের পাখি বিশেষজ্ঞ আল্লামা শিবলী সাদিক বলেন, ‘‘নীল-লেজ সুইচোরা পাখিদের পরিযায়ী বা আবাসিক বলা যাবে না। এরা আমাদের দেশীয় পাখি। প্রজননের সময় তারা নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করে বলে এদের অনেকেই মনে করেন তারা পরিযায়ী বা আবাসিক। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তাদের প্রজনন সময়। এরা পাহাড়ি টিলার নরম মাটিতে গর্ত করে বসবাস করে। গর্তের মধ্যেই বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায়। পরে বাচ্চাদের নিয়ে অন্য স্থানে চলে যায়।”

প্রাপ্তবয়স্ক এই পাখির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার, ওজন ৩৮ থেকে ৫০ গ্রাম। নীল-সবুজ পালক বিশিষ্ট পাখিটির পেছনের অংশ ও লেজ নীল। গলা খয়েরি, বুকের ওপরটা বাদামি, চোখে কাজল টানা এবং পেট আপেলের মতো সবুজ। 

চোখ লালচে বাদামি থেকে গাঢ় লাল। কোমর, লেজ ও লেজের নিচের অংশ নীল। লেজের আগায় লম্বা নীল সুই বা পালক রয়েছে। 

এদের ঠোঁট সরু, লম্বা ও কালো। নিচের দিকে খানিকটা বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক নীললেজ সুইচোরার দেহের রং অনুজ্জ্বল ও ফ্যাকাশে। স্ত্রী ও পুরুষ একই রকম দেখতে।

এদের আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় বছর। মার্চ থেকে জুন এদের প্রজননকাল। এসময় পাহাড়ের গায়ে বা নদী ও খালপাড়ে প্রায় দুই মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায় এরা। সেখানে ৫-৬টি ডিম পাড়ে, ডিমের রং সাদা। ২১-২৬ দিনে ডিম ফোটে এবং ২০-২৭ দিন পরে বাচ্চারা উড়তে শেখে।

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ