আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ শুরু
Published: 9th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার পাশে মিন্টো রোডে পানির ফোয়ারার সামনে তৈরি মঞ্চে সমাবেশ শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার (৯ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আশরাফ মেহেদীর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়।
মঞ্চে উপস্থিত আছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসানাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
.
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বেশি লাভের ফাঁদে পা দিয়ে নিঃস্ব গ্রাহকরা
‘বেশি মুনাফা পাবেন’ এই আশায় জীবনের সঞ্চয় তুলে দিয়েছিলেন অনেকেই। কেউ পোশাক কারখানায় ঘাম ঝরানো টাকা, কেউবা শেষ বয়সের ভরসা তুলে দেন, কিন্তু মুনাফার মুখ দেখেননি বেশি দিন। উল্টো আসল টাকাই মিলছে না। এই শোকে কেউ মারা গেছেন, কেউ দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন টাকা ফেরত পাওয়ার আশায়, আবার কেউ আশ্রয় নিয়েছেন আদালতের।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের জাগিরপাড়া এলাকার ‘প্যাসিফিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ ঘিরেই ঘটেছে এই প্রতারণা। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সমিতি নানা কৌশলে মানুষের আস্থা অর্জন করে। প্রতি লাখে মাসে চার হাজার টাকা লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বহু মানুষের অর্থ জমা নেয় সমিতির লোকজন।
এই সমিতিতে টাকা জমা করেন পোশাক শ্রমিক রেহেনা খাতুন। ২০২১ সালে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছিলেন প্রতি লাখে মাসে ৪ হাজার টাকা লাভের আশায়। শুরুতে দুই মাস মুনাফা পেয়েছনে। এরপর থেকে মুনাফা বন্ধ, আসল টাকাও পাচ্ছেন না।
রেহেনা খাতুন জানান, তাঁর প্রতিবেশী চাচা জলিলকে বিশ্বাস করে টাকাগুলো দিয়েছিলেন। বলেছিলেন মাসে মাসে লাভ দেওয়া হবে। শুরুতে দুই মাস লাভের টাকা দিয়ে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই টাকার জন্য ঘুরছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে গেছি, চারবার ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে আমার। আমি এখন শুধু চাই আমার টাকা উদ্ধার হোক।’
একই ফাঁদে পড়েছেন স্থানীয় বাজারের দোকানি তাইজুল ইসলামও। তাঁর ভাষ্য, বেশি মুনাফার লোভে পড়ে ২০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলেন। এখন লাভ দূরের কথা, জমা টাকাই ফেরত পাচ্ছেন না। আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ঋণ করে সমিতিতে টাকা রেখেছিলেন, জমি বিক্রি করে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে তাঁকে।
ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ১২ লাখ দিয়েছিলাম, আমারে পাঁচ মাস লাভ দিছে, পরে বন্ধ করে দিছে। আমি আসল টাকা চাইলে দিব দিব বলে আর দেয়নি, পরে আমি টাকা ফেরত পেতে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আদালতে মামলা করেছি।’ তাঁর দাবি, তাঁর মতো বহু মানুষ প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। কেবল আর্থিক ক্ষতিই হয়নি, কেড়ে নিয়েছে মানুষের জীবনও। গাঁওকান্দিয়া গ্রামের অধিবেষ সরকার নামে এক ব্যক্তি এই সমিতিতে জমা রেখেছিলেন ১৯ লাখ টাকা। প্রতারণার শিকার হয়ে মানসিক কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসার অভাবে আগে মারা যান তাঁর স্ত্রী। পরে গত ৬ জুন তাঁরও মৃত্যু হয়।
মৃত অধিবেষের ছেলে আশিস সরকার জানান, তাঁর বাবার শেষ সম্বল ছিল ওই টাকাগুলোই। তিনি ভেবেছিলেন, সমিতিতে দিলে কিছু আসবে এটাই ছিল তাঁর আশা। কিন্তু টাকা জমা রাখার পরই তাঁর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সমিতির কাছে আসল টাকা ফেরত চান। কিন্তু সমিতির লোকজন তাদের কোনো অনুনয়-বিনয় শোনেনি। চিকিৎসার অভাবে তাঁর মা মারা যান, কিছু দিন পর তাঁর বাবাও মারা যান। টাকার জন্য বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। তিনি বলেন, ‘টাকা হারিয়ে বাবা সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতেন। একবার স্ট্রোক করলে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থও হন। কিন্তু পরে আবারও স্ট্রোক করে আমাদের ছেড়ে চলে যান। এই টাকার শোকে মা-বাবা দু’জনকেই হারিয়েছি।’
জানা গেছে, প্যাসিফিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতিটি জাগিরপাড়ায় একটি ঘরে ২০১৯ সালে চালু হয়। কিন্তু এখন সেখানে সেই অফিস আর নেই, নেই সমিতির কোনো কার্যক্রম। সমিতি পরিচালনা বোর্ডের সভাপতি পদে ছিলেন জাগিরপাড়া এলাকার আবদুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ, যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম, কোষাধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী, সদস্য মাহফুজুল ইসলাম।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও খোঁজ পাওয়া যায়নি সভাপতি আবদুল জলিলের। তাঁর মোবাইল ফোনে কল দিয়ে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
দুর্গাপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বিজন কান্তি ধর বলেন, ‘সমিতিটি আমাদের থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে ঠিকই। তবে পরবর্তীতে আমাদের সঙ্গে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। প্রতারণার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর জানান, লাভ দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন তিনি।