সাপের কামড়ে সঠিক চিকিৎসার অভাবে দেশে প্রতিবছর সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা যায়। অন্যদিকে সচেতনতার অভাবে মানুষের হাতে মারা পড়ছে বাস্তুতন্ত্রের জন্য উপকারী এই সরীসৃপ। সাপ নিয়ে সচেতনতা তৈরিসহ সাপে কামড়ালে কী করতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কোথায় পাওয়া যাবে অ্যান্টিভেনম, সেসব বিষয় জানাতে এবার অ্যাপ এনেছে বন বিভাগ। এটির নাম ‘সর্প দংশনে সচেতনতা, উদ্ধার ও সুরক্ষা অ্যাপ’।

টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা অ্যাপটি সাজানো হয়েছে ১০টি ক্যাটাগরিতে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সাপের পরিচিতি, সাপের কামড়ে প্রাথমিক চিকিৎসা, সাপের কামড়ের তথ্য প্রদান, অ্যান্টিভেনমের প্রাপ্যতা, সাপ–সম্পর্কিত কুসংস্কার ও সাপের গুরুত্ব, সাপ–সম্পর্কিত ভিডিও ও সাপ উদ্ধারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা, বাংলাদেশে সাপের প্রজাতি, যোগাযোগ ও জাতীয় জরুরি নম্বর।

এতে বিষধর, মৃদু বিষধর ও নির্বিষ সাপের পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। কোন সাপে কোন ধরনের বিষ রয়েছে, কোন সাপের কামড়ে কী রকম লক্ষণ আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে দেখা দেয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য আছে। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য অ্যান্টিভেনম পেতে দেওয়া হয়েছে নিকটস্থ হাসপাতালের ফোন নম্বর।

গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে অ্যাপটি।

অ্যাপে দেওয়া হয়েছে সাপ উদ্ধারকারী দলের ফোন নম্বর। বসতবাড়ি বা ভিটায় সাপের দেখা গেলে উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এসে সাপ উদ্ধার করবে।

বন অধিদপ্তরের গাজীপুরের ওয়াইল্ডলাইফ ট্রেনিং সেন্টারের সরীসৃপ-বিশেষজ্ঞ (হারপেটোলজিস্ট) সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, সাপ নিয়ে মানুষের ভীতি ও নানা ধরনের অজ্ঞতা আছে। সাপে কামড়ালে হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে এখনো অনেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে ওঝার কাছে ছোটেন। আক্রান্ত ব্যক্তির বাঁচার সম্ভাবনা কমে যায়।

সাপ নিয়ে মানুষের ভীতি ও নানা ধরনের অজ্ঞতা আছে। সাপে কামড়ালে হাসপাতালে নিয়ে না গিয়ে এখনো অনেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিয়ে ওঝার কাছে ছোটেন। আক্রান্ত ব্যক্তি বাঁচার সম্ভাবনা কমে যায়।সোহেল রানা, সরীসৃপ-বিশেষজ্ঞ, ওয়াইল্ডলাইফ ট্রেনিং সেন্টার, গাজীপুর

সোহেল রানা বলেন, অ্যাপটিতে আমরা দিকনির্দেশনা দিয়েছি সাপের কামড়ে কী করতে হবে। বিষধর সাপে কামড়ালে তার উপসর্গ বা লক্ষণ কী, আর মৃদু বিষধর সাপে কামড়ালে, সেটা কীভাবে চিহ্নিত করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই অ্যাপে ৫২৬টি উপজেলা হাসপাতালের ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া আছে। এসব উপজেলা হাসপাতালে যোগাযোগ করে অ্যান্টিভেনম নেওয়া যাবে। গ্রামে বর্ষাকালে সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতে কী কী উপায় অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়েও বিস্তারিত অ্যাপে দেওয়া আছে।

সঠিক তথ্য জানার বিকল্প নেই

বন অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে মোট ১০৩ জাতের সাপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৭০ প্রজাতির সাপ নির্বিষ বা মৃদু বিষধর। এগুলোর কামড়ে মানুষের কোনো ক্ষতি হয় না। বাকি ৩৩ প্রজাতির সাপ বিষধর। এই ১০৩ প্রজাতির বাইরে সমুদ্রে ১৭ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে সাপ নিয়ে ‘হিউম্যান পারসেপশনস টুওয়ার্ডস হারপেটোফোনা ইন নর্থ-ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ’শীর্ষক একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এ গবেষণার নিবন্ধ প্রকাশিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাম্পিবিয়ান অ্যান্ড রেপটাইলস’ সাময়িকীতে, ২০২১ সালের নভেম্বরে।

বন অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে মোট ১০৩ জাতের সাপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৭০ প্রজাতির সাপ নির্বিষ বা মৃদু বিষধর। এগুলোর কামড়ে মানুষের কোনো ক্ষতি হয় না। বাকি ৩৩ প্রজাতির সাপ বিষধর। এই ১০৩ প্রজাতির বাইরে সমুদ্রে ১৭ প্রজাতির বিষধর সাপ রয়েছে।

গবেষণার ক্ষেত্র ছিল রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলায়। সেখানে সরীসৃপজাতীয় প্রাণী নিয়ে মানুষের সাধারণ ধারণার কথা জানার চেষ্টা করা হয়। এতে অংশ নেন ২৩৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ। গবেষণায় দেখা যায়, ৮৮ শতাংশ মানুষই সাপকে ভয় পান। ৯৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সাপমাত্রই বিষধর প্রাণী। সাপকে মেরে ফেলা ভালো কাজ বলে মনে করেন ৪৫ শতাংশ উত্তরদাতা। কৃষিজীবী নন, এমন ব্যক্তিরা সাপ মারতে বেশি উৎসাহী। উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত ব্যক্তিদের চেয়ে ১ দশমিক ৮ গুণ বেশি সাপ মারতে আগ্রহী।

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মো.

ফজলে রাব্বী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাপ নিয়ে আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রকমের কুসংস্কার রয়েছে। সব বয়সের, সব এলাকার মানুষের মধ্যে সাপ নিয়ে ভীতি কাজ করে। মানুষ সাধারণত মনে করে ডোরা সাপ বাদে সব সাপই বিষধর।

উদাহরণ দিয়ে ফজলে রাব্বী বলেন, বিভিন্ন কুসংস্কার, যেমন সাপের মাথায় মণি থাকা, সাপের প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা, সাপ দুধ খেতে পারে, সাপের পা আছে ইত্যাদি। আসলে কোনোটিই সত্যি নয়। এমনকি আমাদের আশপাশে বেশির ভাগ সাপই বিষধর বা ক্ষতিকর নয়। সঠিক তথ্য না জানা ও অতি উৎসাহের কারণে মানুষ সাপ মারতে চায় বলে জানান তিনি।

সাপের কামড় থেকে বাঁচতে সঠিক তথ্য জানার বিকল্প নেই জানিয়ে এই প্রভাষক আরও বলেন, বন বিভাগের পক্ষ থেকে একটি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। আরও পরিমার্জনের মাধ্যমে এতে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে। কোন হাসপাতালে কত অ্যান্টিভেনম আছে, সে তথ্য অ্যাপে যোগ করা উচিত।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ষধর স প

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম সিভিল সার্জন সম্মেলন আজ, থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রথমবার হতে যাচ্ছে সিভিল সার্জন সম্মেলন। দেশের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ও করণীয় সম্পর্কে শুনতে চাইবেন নীতিনির্ধারকেরা।

আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার এ সম্মেলন হবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আজ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সম্মেলনের কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। কার্য অধিবেশনগুলো স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সিনিয়র কর্মকর্তারা দিকনির্দেশনা দেবেন।

জানা গেছে, সম্মেলনে ১৩টি মন্ত্রণালয়ের ১১টি কার্য অধিবেশন হবে। অধিবেশনগুলোতে খোলামেলা আলোচনা হবে স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা ও উন্নয়ন নিয়ে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতি বছর ৬৪ জেলা প্রশাসকদের নিয়ে ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জেলার নানা বিষয় উঠে আসে। এবার সেই আদলে ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসকদের নিয়ে প্রথমবার সিভিল সার্জন সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনের আগে সেবার ক্ষেত্রে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। সিভিল সার্জনরা তাদের মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সামনে স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে দু’জন সিভিল সার্জন বক্তব্য রাখবেন। সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে করতে একটি কোর কমিটি এবং সাতটি উপকমিটি করা হয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এটি ছোট পরিসরে হলেও মূলত ডিসি সম্মেলনের থিম থেকে নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এটি করার জন্য বলেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সম্মেলনে দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে মানুষের অসন্তোষ ও নানা দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে। এতে স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানোর নানা কৌশল নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এতে করে জেলার স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার পথ সুগম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত, টিকা কার্যক্রম, জনবল সংকট, অবকাঠামোগত সমস্যা, বাজেট বরাদ্দের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে সিভিল সার্জনদের মতামত উত্থাপন হবে। একাধিক সিভিল সার্জন উপজেলার স্বাস্থ্য সংস্কার, চিকিৎসক সংকট, পরিবহন তথা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর প্রস্তাবও উঠবে সম্মেলনে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ